Views Bangladesh Logo

ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় তথ্য বিদেশি মালিকানাধীন ডেটা সেন্টারে রাখা কতটা নিরাপদ?

Sharful  Alam

সারফুল আলম

পনি এখন কাদামাটির পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আর একটি জগতে বিচরণ করছেন প্রতিনিয়ত। সেই জগতের নাম ভার্চুয়াল দুনিয়া। আর এই দুনিয়ায় চলছে ডাটার খেলা। আপনার বলা প্রতিটি কথা, আপনার লেখা প্রতিটি অক্ষর, আপনার তোলা ছবি, ভিডিও চিত্র সবকিছু হয়ে যাচ্ছে ডাটা। আর এই ডাটার মাধ্যমেই নির্ণিত হচ্ছে আপনার পরিচয়। আপনার প্রতিদিনের অভ্যাস, রুচি, সংস্কৃতি সবকিছুই জানা যাচ্ছে ডাটা থেকে। আবার আপনার গুরুত্বপূর্ণ বায়োমেট্রিক ডাটাও ভার্চুয়াল জগতের নিয়ন্ত্রকদের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে এখনকার দুনিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ডাটা। যার যত বেশি ডাটার ওপর নিয়ন্ত্রণ, তার আধিপত্যই কায়েম হচ্ছেন এই দুনিয়ায়। এ কারণেই আর ডাটার নিরাপত্তাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আপনার ডাটার ওপর অন্য কারও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে আপনি অবশ্যই অনিরাপদ হয়ে পড়বেন। এ কারণে আপনার-আমার ডাটা যদি বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের ডাটা সেন্টারে থাকে সেটা বড় ধরনের অনিরাপত্তা তৈরি করবে। এমনকি বিদেশি মালিকাধীন ডেটা সেন্টার যদি কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যেও স্থাপন করা হয় তাও ব্যক্তিগতভাবে শনাক্তযোগ্য তথ্য (পিআইআই) এবং রাষ্ট্রীয় ডেটা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তা উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

আইনগত অধিকার:
বিদেশি মালিকানাধীন ডেটা সেন্টারগুলো যে দেশের কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত, সেই দেশের আইন ও বিধি মেনে চলে। এটা অন্য দেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। ফলে আইনি বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এই আইনের অধীনে হয়তো বিদেশি সরকার তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অন্য দেশের তথ্য কোম্পানির মালিকানাধীন দেশের হাতে গিয়ে পড়বে।

ডেটা সার্বভৌমত্ব:
কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌম তথ্য যে করেই হোক রক্ষা করতে হবে। যেমন সরকারের প্রশাসন বা প্রতিরক্ষা তথ্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা প্রয়োজন। বিদেশি মালিকানা তথ্য সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করতে পারে। বিদেশি কোম্পানি যে রাষ্ট্রের অধীন, সে দেশের মেনে চলতে বাধ্য হতে পারে। এ জন্য ওই কোম্পানি রাষ্ট্রের নির্দেশে ডাটা সেন্টার সংরক্ষিত অন্য দেশের সংবেদনশীল তথ্য নিজস্ব সরকারের কাছে প্রকাশ করে দিতে পারে।

নিরাপত্তা উদ্বেগ:
বিদেশি মালিকানাধীন ডেটা সেন্টারের নিরাপত্তা মান ও সুরক্ষা চর্চা ভিন্ন হতে পারে। তারা কোথায় তথ্য উন্মোচন ও প্রকাশ করবে তার নিয়ম-কানুন ভিন্ন হতে পারে, বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের (বিদেশি মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের) নিজস্ব অগ্রাধিকার ও নমনীয় নীতি থাকতেই পারে যা অন্য দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।

ভৌগোলিক ঝুঁকি:
কোনো দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর বৈশিষ্ট্যও পরিবর্তিত হতে পারে। এতে করে সংরক্ষিত ডেটার প্রবেশাধিকারও যেমন বাড়তে-কমতে পারে, তেমনি তা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। এতে করে জটিল তথ্যের ওপর ওই দেশ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও হারিয়ে ফেলতে পারে, কিংবা বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

এসব দিক বিবেচনা করে নিশ্চিত করতে হবে কোনো বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানির কাছে কী ধরনের তথ্য সংরক্ষণ থাকবে। সম্মতি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের দিক বিবেচনা করেই নিশ্চিত করতে হবে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় ডেটা কোথায় সংরক্ষণ করতে হবে। বরং নিজের দেশের উপযুক্ত ও সক্ষম ডাটা সেন্টারে ডাটা সংরক্ষণই সর্বোত্তম বিবেচিত হতে পারে।

সারফুল আলম: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ফেলিসিটি আইডিসি লিমিটেড

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ