Views Bangladesh Logo

দুনিয়া কাঁপানো ১০টি বইমেলা

থ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ সময়ও বই জ্ঞানের প্রধানতম মাধ্যম। বইয়ের আবেদন কখনোই শেষ হওয়ার নয়। বই জ্ঞানের কল্লোল। বই চিরকালীন ব্যাপার। কাগজের পৃষ্ঠায় লেখা থাকে পৃথিবীর ইতিহাস, সভ্যতা-সংস্কৃতির ইতিহাস। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ বইয়ে। বই নিয়ে সারা পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বইমেলা। বইমেলা মানে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা। বইমেলা শুদ্ধতার মেলা, মননশীলতার মেলা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লেখক, পাঠক, প্রকাশক এবং মুদ্রণজগতের জন্য বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয়, বৈচিত্র্যে ভরা দুনিয়া কাঁপানো ১০টি বইমেলা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। যেহেতু অমর একুশে বইমেলা বাঙালির মনোজগতে বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে যাকে আমরা প্রাণের মেলা হিসেবে অভিহিত করে থাকি, তাই এ মেলা সম্পর্কে এই ফিচারে সবার আগে উল্লেখ করা হলো।

অমর একুশে বইমেলা (বাংলাদেশ)

অমর একুশে গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে সেই শহীদদের প্রতি, যারা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মতো ভাষা শহীদদের স্মরণে উৎসর্গ করা বইমেলার আয়োজন বিশ্ব বইমেলার ইতিহাসে বিরল। ১৯৭২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির সামনে মুক্তধারা প্রকাশনা সংস্থা ছোট পরিসরে বই বিকিকিনি শুরু করে। পরে আরও প্রকাশনা সংস্থা এতে যোগ দেয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর থেকেই এই মেলার গোড়াপত্তন হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলার আয়োজন করতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলা একুশে বইমেলা এশিয়ার অন্যতম বড় বইমেলা। মেলা চলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মেলায় রয়েছে স্থায়ী ‘নজরুল মঞ্চ’ যেখানে সারা মাসজুড়ে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রয়েছে ‘লেখক বলছি’ যেখানে মেলার দিনগুলোতে লেখকরা উপস্থিত থেকে কথা বলেন।

একুশের বইমেলা নিয়ে লেখক, পাঠক আর প্রকাশকের আবেগের শেষ নেই। এটি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাভাষার এক ঐতিহাসিক সাংস্কৃতায়ন ঘটিয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১টি। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ শুরু হচ্ছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বুক ফেয়ার (জার্মানি)
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকে বলা হয় বাণিজ্যিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বইমেলা। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে কয়েকশ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রাথমিকভাবে এর সূচনা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বইমেলার সূচনা হয় ১৪৬২-তে। নতুনরূপে এই বইমেলা ফিরে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে। মেলায় প্রায় ৩ লাখ পাঠক-ক্রেতা সমাগম হয়। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলা আয়োজিত হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেড ফেয়ার গ্রাউন্ডে। জার্মানি এবং বিশ্বের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে এ মেলার অপরিসীম অবদান রয়েছে।

প্রথম তিন দিন থাকে কেবল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আগমনকারীদের জন্য। পরবর্তী দুদিন মেলা উন্মুক্ত থাকে সবার জন্য। মেলাটি প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত থাকে- (১) নিজেদের প্রকাশনা নিয়ে উপস্থিত থাকেন যারা তাদের জন্য, (২) মেলায় আসা পাঠক-ক্রেতাদের জন্য, (৩) ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তৈরি হওয়া বিজনেস সেন্টার। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো ‘গেস্ট অব অনা’ বা সাম্মানিক অতিথি হিসাবে কোনো এক নির্দিষ্ট দেশের উপস্থিতি। এই বইমেলায় ‘গেস্ট অব অনা’ হওয়াকে প্রতিটি দেশই অত্যন্ত সম্মানজনক মনে করে এবং এর জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে যথেষ্ট প্রতিযোগিতাও থাকে। গত কয়েক বছরে ফ্রান্স, জর্জিয়া, নরওয়ে, কানাডা ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় ‘গেস্ট অব অনার’ হয়েছে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার ৭৬তম আসর বসেছিল। মেলার স্লোগান ছিল ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট কলিং’। মেলায় পাঁচ দিনে ১৫টি পর্যায়ে ৬৫০টি ইভেন্ট ছিল। এতে প্রায় ১ হাজার লেখক ও বক্তা উপস্থিত বক্তব্য রেখেছিলেন।

লন্ডন বুক ফেয়ার (ইংল্যান্ড)
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা হলো ইংল্যান্ডের লন্ডন বুক ফেয়ার। ১৯৭১-এর ৫ নভেম্বর এ মেলার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ১০০টিরও বেশি দেশ লন্ডন বইমেলায় অংশ নেয়। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি লন্ডনে আয়োজিত হয় এই মেলা। ইউরোপিয়ান প্রকাশক, বিক্রেতা, এজেন্টদের বিরাট সমাগম হয় প্রতি বছর এই মেলায়, সংখ্যাটি প্রায় ২৫ হাজার। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ মেলা চলত অলিম্পিয়া এক্সিবিশন সেন্টারে। মাঝে কয়েক বছর এই মেলার স্থানবদল হলেও ২০১৫ থেকে লন্ডন বুক ফেয়ার চলছে অলিম্পিয়াতেই। প্রায় দুই হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত লন্ডন বুক ফেয়ারে তিন দিন ধরে চলে দুইশরও বেশি ইভেন্ট যেখানে বিভিন্ন নামজাদা বক্তারা তাদের বক্তব্য রাখেন, থাকে আলাপচারিতা, প্রশ্নোত্তর পর্ব। বইমেলার ভেতরে থাকে ‘অথর্স এইচকিউ’, ‘চিলড্রেনস্ হাব’, ‘ক্রস-কালচারাল হাব’-এর মতো অসংখ্য বিভাগ। এই বইমেলার অন্যতম আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে ‘অথর্স অব দ্য ডে’ ও ‘ইলাস্ট্রেটর অব দ্য ফেয়ার’ প্রোগ্রাম দুইটি।

বুক এক্সপো আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র)
১৯৪৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘আমেরিকান বুক সেলার অ্যাসোসিয়েশন’-এর ‘কনভেনশন এবং ট্রেড শো’ নামে শুরু হয় বই নিয়ে এই আয়োজনের। ১৯৭১ সালে নাম বদলে ‘বুক এক্সপো আমেরিকা’ নাম রাখা হয়। মে মাসের শেষে বা জুন মাসের শুরুতে চার দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরে পালাক্রমে চলত এ বইমেলা। ২০০৮-এ লস অ্যাঞ্জেলেসে, নিউইয়র্ক সিটিতে ২০০৯-১৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে শিকাগোয় হয়েছে এ মেলা। ২০২০ সালে করোনা মহামারির পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে বুক এক্সপো। ২০২২-এর মে মাসে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয় ‘ইউএস বুক শো’, যা ২০২১ সালে শুরু করেছিল পাবলিশার্স উইকলি ‘বুক এক্সপো’র বিকল্প হিসেবে।

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা (ভারত)
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম অবাণিজ্যিক বইমেলা অর্থাৎ যেখানে শুধুমাত্র পাঠকই ক্রেতা, কেবল পাইকারি ডিস্ট্রিবিউটররা নয়। এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলাও কলকাতা বইমেলা। পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ড এই মেলার আয়োজক। কলকাতার করুণাময়ী এলাকার সেন্ট্রাল পার্কে স্থায়ী বইমেলা প্রাঙ্গণে বর্তমানে এই মেলা আয়োজিত হয়। মূলত বাংলাভাষার বই-ই এই বইমেলার প্রধান আকর্ষণ। সঙ্গে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষা ও বিদেশি ভাষার বইও থাকে অসংখ্য স্টলে। ১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া এই বইমেলা ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি অর্জন করে। জানুয়ারির শেষ বুধবার ১২ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন হয়। ২০২৩ সালের সদ্য সমাপ্ত মেলায় বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৭ কোটি টাকা। এ বছর বইমেলায় রেকর্ডসংখ্যক ৯৪৯টি স্টল ছিল। বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন, যেখানে সেই দেশের বই দেখতে পারেন পাঠকরা এবং প্রতি বছর মেলায় থাকে একটি নির্দিষ্ট দেশ, থিম হিসেবে। এই মেলায় ছোট ও বিকল্প পত্রিকাদের জন্য লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন থাকে, যা অন্য কোনো বইমেলায় প্রায় চোখে পড়ে না। থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনাসভার জন্য মুক্তমঞ্চ। তাছাড়া আয়োজক গিল্ডের প্যাভিলিয়নেও প্রতিদিন কবিতা পাঠ, আলোচনা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি বুধবার কলকাতায় ৪৮তম আন্তর্জাতিক বইমেলার পর্দা উন্মোচন হয়েছে। এবারের বইমেলার থিম জার্মানি। মেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এবারের বইমেলায় ফোকাল থিম কান্ট্রি জার্মানি। সেক্ষেত্রে মেলা প্রাঙ্গণের একদম কেন্দ্রে রয়েছে জার্মানির একটি বিশাল প্যাভিলিয়ন। জার্মানি ছাড়াও থাকছে ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, গুয়েতেমালাসহ অন্যান্য লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশের প্যাভিলিয়ন। থাকছে বহুজাতিক প্রকাশনা সংস্থা এবং ভারতের প্রায় সব রাজ্যের প্রকাশনা সংস্থা।

প্রতিবার বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন দেখা গেলেও এবার সেই অভাবটা থাকছে। এতো বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে কোনো স্টল থাকছে না ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়।

আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই বইমেলা। দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইমেলার প্রবেশদ্বার খোলা থাকবে। এবারের বইমেলায় প্রকাশক ও লিটল ম্যাগাজিন মিলিয়ে সর্বাধিক প্রায় ১০০০ প্রকাশনী সংস্থা অংশগ্রহণ করছে।

কায়রো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার (মিসর)
আরব বিশ্বের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম বইমেলা হলো কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা। এ বইমেলা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়। কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার এক হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৬৯ সালে এ বইমেলার সূচনা। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই মাদিনাত নাসারের কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ার গ্রাউন্ডে এ মেলার আয়োজন করে ‘জেনারেল ইজিপশিয়ান বুক অর্গানাইজেশন’। প্রায় ২০ লাখ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ আয়োজন।

সর্বশেষ ৫৫তম কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু হয়েছে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। ৮০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ মেলায় ৭৭টি দেশের এক হাজার ২০০ প্রকাশনী অংশগ্রহণ করে। নিউ কায়রোর ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে মেলাটি উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। অতিথি দেশ হিসেবে নরওয়ে নিজেদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি আরব পাঠকদের কাছে তুলে ধরছে ‘জ্ঞান বিনির্মাণের মাধ্যমে আমরা শব্দের সুরক্ষা করব’ প্রতিপাদ্যে।

এবারের মেলাটি আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ বছর প্রাচীন মিসরবিদ সেলিম হাসান এবং শিশু সাহিত্যের অগ্রদূত ইয়াকুব আল-শারুনিকে কায়রো বইমেলার বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বই প্রদর্শনীর পাশাপাশি মেলায় সাড়ে পাঁচশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনাসভা চলমান রয়েছে।

মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার (রাশিয়া)
শরতের সময় আয়োজিত এ বইমেলা প্রথম শুরু হয় ১৯৭৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকে প্রতি বছর ৩ থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মস্কো এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার। এখানে রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থাগুলো অংশ নেয় এবং পাঠকরা বিশেষ মূল্যে বই কিনতে পারেন।

বলগ্না চিলড্রেনস বুক ফেয়ার (ইতালি):

শিশুসাহিত্যের জন্য ‘বলগ্না চিলড্রেনস বুক ফেয়া’ একটি প্রধান বইমেলা। বিশ্বজুড়ে সবার কাছেই বইমেলা অসম্ভব জনপ্রিয়। ১৯৬৩ সাল থেকে প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিলের চার দিন এ মেলা ইতালির বলগ্নায় অনুষ্ঠিত হয়। শিশুসাহিত্য, শিশুচলচ্চিত্র এবং অ্যানিমেশন নিয়ে যারা কাজ করেন তারাই মূলত এখানে শিশুসাহিত্য সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করতে আসেন। এ ছাড়া এ মেলায় শিশুসাহিত্য, চলচ্চিত্র ও অ্যানিমেশন ইত্যাদিতে কৃতিত্ব রাখার জন্য মোট চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হয়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রকাশক মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন।

গুয়াদালাজারা আন্তর্জাতিক বইমেলা 

মেক্সিকান শহর গুয়াদালাজারা স্প্যানিশ ভাষার প্রকাশনা জগতের প্রধান অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। এ মেলাটি বইয়ের জগতের পেশাদারদের জন্য সবচেয়ে ভালো বাণিজ্যিক পরিবেশ নিশ্চিত করে, তেমনি পাঠকদের মনেও এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতি বছর গুয়াদালাজারা বিশ্ববিদ্যালয় এই মেলার আয়োজন করে আসছে, যার ব্যাপ্তি এখন মেক্সিকান শহর গুয়াদালাজারার প্রায় ৪০,০০০ মিটার স্কয়ার জায়গাজুড়ে। এটি সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে এবং ডিসেম্বরের শুরুতে ৯ দিন ধরে চলে। ২০২৩ সালের গুয়াদালাজারা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ১২ শতাধিক স্টল এবং প্রায় ৫০টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ২৫০০ প্রকাশক অংশ নিয়েছে যেখানে প্রায় ১০ হাজার সাহিত্যানুরাগী দর্শনার্থী প্রতিদিন পরিদর্শন করছে।

হংকং বুক ফেয়ার 
হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় হংকং বইমেলার। হংকং বইমেলা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে। প্রতি বছর মধ্য জুলাইয়ে এ মেলা শুরু হয়। হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত মেলার উদ্দেশ্য হংকংয়ের জনগণের জন্য কম দামে দেশি বা বিদেশি বই পৌঁছে দেয়া। এ মেলা মূলত আন্তর্জাতিক বই ব্যবসাকে উৎসাহিত করে। হংকংয়ে কমিকসের বই খুব জনপ্রিয়। এ কারণে এখানে আলাদাভাবে একটি কমিকস মেলাও অনুষ্ঠিত হয়।

এইগুলো ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে ছোট-বড় অনেক বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যাদের ভাষাগত বৈচিত্র্যের পাশাপাশি পরিকাঠামোগত অনেক বৈচিত্র্যও আছে।

লেখক: শাহাদাত হোসেন তৌহিদ

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ