Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কক্সবাজারে বৌদ্ধবিহারে হামলার একযুগ,সাক্ষী না আসায় ঝুলছে বিচার প্রক্রিয়া

Esmat Ara Issu

ইসমত আরা ইসু

রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ক্সবাজারের বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে হামলার একযুগ পার হলো আজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজবের জেরে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামু, উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি মন্দির এবং ৩০টিরও বেশি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় দুষ্কৃতকারীরা।

একযুগে হামলার সেই ক্ষত মুছে গেছে। সোনা রঙের কংক্রিটের মন্দিরও পেয়েছেন, তবে কোনো বিচার পাননি ভুক্তভোগী বৌদ্ধরা।

‘এই বিভীষিকার দাগ কোনোদিন মুছে যাবে না মন থেকে। ঈশ্বর নিশ্চয় এর কর্মফল নির্ধারণ করবেন।' এমন আক্ষেপের কথা ভিউজ বাংলাদেশকে বলছিলেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ শীলোপ্রিয় মহাথেরো।

প্রত্যক্ষদর্শী মিথুন বড়ুয়া জানান, রাত নয়টার পরে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন রামু-চৌমুহনীর লোকজন। কিন্তু কেন এই জমায়েত, সেটি বুঝে ওঠার আগেই পাশের লালচিন ও সাদাচিন মন্দিরে আগুন দেয়া এবং ভাঙচুরের কথা শুনতে পান সীমা বিহার এলাকার লোকজন। রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে হামলা চালানো হয় কেন্দ্রীয় সীমা বিহারসহ অন্য মন্দিরগুলোতেও।

শীলোপ্রিয় মহাথেরো বলেন, ‘সেদিনের মন্দির ও বসতবাড়িতে হামলায় জড়িত ছিলেন সব দলের লোকজন’।

হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনায় সে সময় ১৯টি মামলা হয়েছিলো উখিয়া, টেকনাফ এবং রামু থানায়। ২০১৫ সালে একটি মামলা তুলে নেন বাদী। বাকি ১৮টির মধ্যে পুন:তদন্তে পিবিআই- এ পাঠানো হয়েছে তিনটি মামলা। অন্যগুলোতে তদন্ত শেষে বিচারকাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি ১২ বছরেও।

শীলোপ্রিয় মহাথেরো জানান, প্রায় সবগুলো মামলারই বাদী ছিলো সরকার। ভয়ে বাদী হননি বৌদ্ধদের কেউ এবং ভয়ে সাক্ষ্যও দেননি অনেকে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ছৈয়দ রেজাউর রহমান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন ও পুন:তদন্ত চলমান ১৮টি মামলায় প্রায় ৯০০ জন আসামি ও ১৬০ জনের মতো সাক্ষী আছেন। আলোচিত এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আমাদের আন্তরিকতার কমতি নেই’।

‘তদন্তকারী কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দলের প্রভাবের বাইরে গিয়ে বিচক্ষণতা ও পেশাদারিত্বের সাথে তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলেই মনে করি। তথ্য-প্রমাণ আর সাক্ষ্যের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আমরাও চেষ্টা করছি’- বলেন তিনি।

ছৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, কয়েকটি মামলায় সাক্ষ্যদান চলছে। কিন্তু সাক্ষীদের অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া কিছুটা থমকে আছে। সাক্ষীদের সমন পাঠানো হয়েছে অনেকবার। কিন্তু সাক্ষ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন তারা। সাক্ষীরা আদালতে এলে প্রয়োজনে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘নতুন করে আবার কোনো সংঘাত যেন না হয়, সে কারণেই অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন বলে মনে হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ হিসাবে আমরা চাই, দ্রুত মামলাগুলোর নিষ্পত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক’।

তবে প্রত্যক্ষদর্শী মিথুন বড়ুয়া বলেন, ঘটনার পরপরই সাক্ষীদের বয়ান এবং পরে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যের সবকিছুই এলাকায় প্রকাশ করে দেয় একটি মহল। তাদেরই লোকজন হুমকি দেওয়ায় আর সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি সাক্ষীরা। হুমকি এখনও দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার।

স্থানীয় সংবাদকর্মী কাইয়ুম উদ্দিন ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মনের ক্ষত মোছাতেও ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার জরুরি’।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ