Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছিল আমাদের জাতীয় জীবনের সাম্প্রতিকতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। গণঅভ্যুত্থান যেমন গর্বের, তেমনি দুঃশ্চিন্তারও। এই গণঅভ্যুত্থানে অনেকে আহত ও নিহত হয়েছেন। গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে অনেক সাধারণ স্বাভাবিক মানুষও, যারা রাস্তায় নামেননি, ঘরে বসে টেলিভিশনে-খবরের কাগজে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘর্ষের, হত্যার খবর পেয়েছেন তারাও ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

আর যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন, চোখের সামনে আপন সতীর্থদের মৃত্যু দেখেছেন তাদের কী অবস্থা হতে পারে তা সহজেই ভাবা যায়। তেমনি যারা এখনো আহত অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে আছেন তাদের মানসিক অবস্থার কথাও আমরা কল্পনা করতে পারি। গর্বের ব্যাপার হলেও, অনেকের জন্য সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

কেউ হয়তো কোনোদিন আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পাারবেন না, কেউ কোনোদিন দুচোখে পৃথিবীর আলো দেখবেন না। তা ছাড়া তাদের অনেকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত, এমন অভিযোগও উঠেছে; এবং কিছুদিন আগেই জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহতরা যথাযথ চিকিৎসার দাবিতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে তারা বিক্ষোভ করেছেন।

এর মধ্যে, গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সংবাধমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ৭৫ শতাংশ ব্যক্তিই বিভিন্ন মাত্রায় বিষণ্নতায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ২৭ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি রোগীর বিষণ্নতা তীব্র মাত্রায় রয়েছে। প্রায় অর্ধেকের বেশি (৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ) রোগীর মৃদু থেকে খুবই তীব্র মাত্রার উদ্বেগ এবং ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ আহত ব্যক্তির স্ট্রেস বা মানসিক চাপের উপসর্গ রয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ঠিক কী কী কারণে তাদের এই মানসিক বিষণ্নতা তা প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়নি। ধারণা করা যায় সুচিকিৎসার অভাব ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা থেকেই। যে ট্রমায় তারা আক্রান্ত হয়েছেন, তার থেকে এখনো বের হতে পারেননি। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরে যে-ধরনের মানসিক চিকিৎসা দরকার, যে সেবাযত্ন দরকার তাও হয়তো তাদের জোটেনি।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য আমরা গর্বিত। এখন নানাভাবেই রাষ্ট্রে মেরুকরণ চলছে। যারা গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি তাদের নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, কতিপয় আন্দোলনকারী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নীতি-নির্ধারণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কতিপয় আহত-নিহতদের প্রতি বেশি মনোযোগ চলে যাচ্ছে। বিপরীতে অনেক আহত ব্যক্তির প্রতি রয়েছে অবহেলা। পরিবার-পরিজন তাদের নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভুগছেন। আহত ব্যক্তিরাও হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকতে থাকতে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

আহত বিষণ্ন এই ব্যক্তিদের সুকিচিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। শুধু তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগী হতে হবে। তাদের সেবাযত্নের যেন কোনো ত্রুটি না হয়, সেদিকে রাষ্ট্রকে খেয়াল দিতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ