Views Bangladesh Logo

আমার দেখা একাত্তরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, সুপরিচিত কথাসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও কলাম লেখক। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যাসহ নানা ঘটনাপ্রবাহ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করেছেন একজন কালজয়ী সাক্ষী হিসেবে। ১৯৭১ সালের প্রত্নস্মৃতি, বামপন্থি রাজনীতি ও নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজ-এর সঙ্গে।

রাহাত মিনহাজ: সেনা কর্তৃপক্ষ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার একটা পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালুও হয়েছিল। এই ঘটনাটা কী ছিল?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: বিশ্ববিদ্যালয় চালুর একটা কারণ ছিল। এর আগে আমি কেন পালালাম, সেটা একটু সংক্ষেপে বলি। ২৫ মার্চের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জনের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। আমরা যারা সভা-সমিতি করি, জোহা দিবস পালন করি, ক্লাবে বক্তৃতা করি, তাদের নিয়ে এই তালিকা। ক্লাব ছিল পাকিস্তানি সেনাদের জন্য শত্রু পক্ষের ঘাঁটি। তারা মনে করত ক্লাবে আমরা ষড়যন্ত্র করি। শহীদ ড. খায়ের, রফিকুল ইসলাম, সাদউদ্দীন, শহীদুল্লাহ– এই চারজন ক্লাব থেকে পরপর চারবার সেক্রেটারি ছিলেন। তাদের ধরে নিয়ে গেছে। আমার সহকর্মী এবং সহপাঠী আহসানুল হক, উনি ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, উনাকেও ধরে নিয়ে গেছে। ওদের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেসা করত, এখানে কে কে বক্তৃতা করছে, তার নাম ঠিকানা কী। হানাদারদের বক্তব্য ছিল, ক্লাব সব ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি। তারা ক্লাবের ওপর প্রথমে এসে আক্রমণ করেছে। ক্লাবের তিন কর্মী ২৫ মার্চের রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল।

যাই হোক, যেটা বলছিলাম ওরা তালিকা তৈরি করেছিল। ওরা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ অব ইনটেলিজেন্সের কাছে লিস্ট দিয়েছে ঠিকানা জোগাড় করার জন্য। পুলিশে বেশির ভাগই ছিল বাঙালি। তারা তো হানাদারদের সঙ্গে কোলাবোরেট করছে না। ওরা যে পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল, সেখানে আমার এক আত্মীয় এসপি ছিলেন। তার ওপরের একজন আমার এক আত্মীয়কে জানালেন, পাকিস্তান আর্মি লিস্ট পাঠিয়েছে তাদের ঠিকানা ম্যানেজ করতে। আমার আত্মীয় সেই লিস্টে আমার নাম দেখেন ৪ নম্বরে। উনি এসে আমাকে বলেন, তোমার নাম ৪ নম্বরে। কাজেই আমি বুঝে ফেলেছি, এখানে আমার নিরাপত্তা নেই। যাই হোক পাকিস্তান আর্মি পুলিশকে বলছেন ঠিকানা নিয়ে আসতে। পুলিশের সিনিয়ররা আবার ঠিকানা নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল নিচের লোকদের। নিচের লোকরা আবার ঠিকানা নিতে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে আমাদের যে ঠিকানা আছে, সেটা নিয়ে চলে গেছে। আমরা তো ইউনিভার্সিটি চাকরির আবেদনের সময় যে ঠিকানা দিয়েছিলাম, সেটা ছিল রেজিস্ট্রারের অফিসে। আমি যখন দরখাস্ত করেছিলাম, তখন আজিমপুর কলোনিতে ছিলাম আমার বাবার সঙ্গে, সেই ঠিকানা দিয়ে। ওই ঠিকানায় আর্মি গিয়ে এখন পরে আমাকে পাবে? এসব দেখে পরে আর আর্মিরা পুলিশ ইনটেলিজেন্সের ওপর নির্ভর করেনি।

রাহাত মিনহাজ: মুক্তিযুদ্ধের ভেতরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি চালু হয়েছিল কবে। আপনারা কি ক্লাস নিতে পারতেন তখন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তখনতো ক্লাস নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা যেতাম নাম সই করতে। আমরা একদিন গিয়ে অনেক দিনের নাম সই করে আসতাম। একদিনের ঘটনা। ওখানে কয়েকটা বিহারি ছেলে ছিল। আবার কয়েকজন পাকিস্তানপন্থি ছেলে ছিল। তারা সেখানে ঘোরাঘুরি করত। আমরা ক্লাস নিচ্ছি কি নিচ্ছি না, তারা রিপোর্ট করবে এরকম একটা ভাব। তারা কয়েকজন মিলে আমাকে ধরলেন, স্যার ক্লাস নেবেন না? প্রহসনের মতো আরকি। তাদের কয়েকজনকে নিয়ে ক্লাসরুমে বসছি। সেখানে দেখি আর্মি এসেছে। আর্মির লোক বন্দুক নিয়ে এসে প্রথমেই জিজ্ঞেস করছে, ক্যায়া নাম হ্যায়? সেদিনই আমি বুঝে ফেললাম, এখানে আর আসা যাবে না। তারপরে আমি আর দ্বিতীয় দিন যাইনি ওইদিকে।

আরেকটা খুব ট্র্যাজেডিক ঘটনা ঘটল। আর্মিরা রশিদুল হাসানকে খুঁজতে এসেছে। রশিদুল হাসান খুব স্পষ্টভাষী লোক ছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে কথা বলতেন। ওই দালাল ছেলেরা হয়তো তার নামে রিপোর্ট করেছে। আর্মিরা অফিসে এসে খোঁজ করছেন, রশিদুল হাসান কোথায় আছেন? রশিদুল হাসান সাহেব ওইদিকেই আসছিলেন। আমাদের অফিসে পিয়ন ছিল নূর মোহাম্মদ রফিক তাকে আর্মির লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে রশিদুল হাসানকে খুঁজতে। রশিদুল উল্টোদিক থেকে আসছে। আমাদের পিয়ন তখন ভয়ংকর দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছে। সামনের লোকটাই যে রশিদুল, এটা পাকিস্তান আর্মিকে বলবে কি বলবে না। কারণ বললেইতো তাকে মেরে ফেলবে। আর্মিরাই সরাসরি রশিদুল হাসানকে জিজ্ঞেস করলো, ক্যায়া নাম হ্যায়। রশিদুল হাসান নাম বলতেই আর্মিরা তাকে ধরে নিয়ে গেলো। রশিদুল হাসানকে সাত দিন রমনা পুলিশ স্টেশনে রেখে দিয়েছিল। এটা একাত্তরের আগস্টের ঘটনা। তারপরেতো শেষ অবধি ১৪ ডিসেম্বর ধরেই নিয়ে গেলো।

রাহাত মিনহাজ: একাত্তরের পুরো ঘটনাপ্রবাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চালু দেখানোর চেষ্টা করেছিল। ২নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা চলে তখন তারা বোমা মেরেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ঘটনা কি আপনার মনে আছে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: বোমা-টোমাতো হরদমই মার তো; কিন্তু সেই দিনও মেরেছিল কি না, আমার মনে নেই। কারণ সেইদিন হয়তো আমি ছিলাম না। আমিতো ক্যাম্পাসেই থাকি না। আমি কালেভদ্রে যেতাম।

রাহাত মিনহাজ: আপনি একাত্তর সালের ঘটনা প্রবাহে, সই করতে বা কাজে কতদিন ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন, এটা কি আপনার স্মরণ আছে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: খুবই অল্প দিন ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। সই করার পাশাপাশি গিয়েছি ব্যাংকে টাকা তুলতে। তখন আমাদের বেতন ব্যাংকেই জমা হচ্ছিল।

রাহাত মিনহাজ: ১৬ ডিসেম্বরের সকালটা কেমন ছিল আপনার কাছে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তারা যে আত্মসমর্পণ করবে, এরকমটা আমরা শুনছি তখন। এটা আমরা ইন্ডিয়ান রেডিওতে শুনেছিলাম। ঢাকার রেডিওতে তেমন কোনো সাড়াশব্দ নেই। রেডিও বন্ধ। বিদেশী রেডিও থেকেও শোনা যাচ্ছে। আমরা টেনশনে আছি। তারপরে শোনা গেল পাকিস্তানিরা স্যারেন্ডার করবে। আমরা আর বের হইনি তখন। আশ্চর্যের সঙ্গে দেখলাম যারা রাজাকার ছিলেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। তারাই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। এটা ওয়ারী এলাকার ঘটনা। তারাই গাড়ি-বাড়ি লুট করছে, যা যা পাচ্ছে নিয়ে নিচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা আর বের হলাম না।

রাহাত মিনহাজ: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘটনাটা, এটা আপনি প্রথম লোকমুখে শুনেছেন নাকি রেডিওতে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এটা প্রথম রেডিওতেই শুনলাম। পাকিস্তান রেডিও থেকেই বোঝা গেলো ঘটনাটা। পাকিস্তান রেডিওতে ইয়াহিয়া খানের একটা বক্তব্য প্রচার করা হলো। সেখানে ইয়াহিয়া খান বললেন, আমাদের আর্মি স্যারেন্ডার করছে। সবুর খান একটা বক্তৃতা দিলেন, বেজন্মা একটা রাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছে। এ বাস্টার্ড ন্যাশন ইজ বিং বোর্নড। এটা পাকিস্তান রেডিওতে এমনকি টেলিভিশনেও দেখা যাচ্ছে। তবে ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা থেকে বোঝা গেল, তারা আত্মসমর্পণ করেছে।

রাহাত মিনহাজ: আপনি ১৭ ডিসেম্বর সকালের ঘটনা বলছিলেন। ওই দিন কি দেখলেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ১৭ তারিখে সকালে বের হয়ে অনেক দৃশ্য দেখলাম। আশপাশের সব দোকান লুট হলো। আরেকটা দৃশ্য দেখলাম। গভর্মেন্ট হাউসে (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ভবন) লুট হলো। লোকজন হাসিখুশি মনে লুট করছে। একজনকে দেখলাম একটা সিঙ্গার মেশিন নিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে যেভাবে উপহার দিতে যায়, ওরকম হাসতে হাসতে যাচ্ছে। চারদিকে এরকম লুটপাট দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হাটখোলার মোড়ে এসে আমাদের তরুণ সহকর্মী আহমদ কামালের সঙ্গে দেখা। সে তখন ইতিহাস বিভাগের লেকচারার। ও ওখানে আমাকে দেখে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নামল। জিজ্ঞাসা করল, স্যার আপনি বাইচ্যা আছেন! আমি তাকে বললাম, কেন, কি হয়েছে। সে বলল, তারা তো অনেককে মেরে ফেলেছে। ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটা তখনই প্রথম শুনলাম। তারপরে আস্তে আস্তে জানলাম কাদের ধরে নিয়ে গেছে।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালকে নানাজন নানাভাবে ব্যাখ্যা করেন। এই সময়ে আপনি একজন তরুণ শিক্ষক। আপনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষের একজন মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে থাকার পরেও মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নেওয়া, রণাঙ্গনে না থাকা–এটা কি আপনাকে কোনো কারণে চিন্তিত করে, যুদ্ধ করতে পারলে ভালো হতো?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা যুদ্ধে ছিলাম এ অর্থে যে আমরা যুদ্ধের আগেও বিদেশিদের কাছে চিঠিপত্র পাঠিয়েছি। আমরা জানিয়েছি এখানে একটা গণহত্যা হবে। বিবিসির একটা পোস্টাল অ্যাড্রেস ছিল। যুদ্ধের সময় সেই পোস্ট বক্সে আমরা এখানকার ঘটনাপ্রবাহ বিবিসিতে পাঠিয়েছি। আমরা স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছি। আমাদের অনেকে বর্ডার ক্রস করে চলে গেছেন। তারাও খবর নিচ্ছেন। যোগাযোগটা ছিল। আমরা কিন্তু পার্টিসিপেট করছি। হয় কোলাবোরেশন, নয় পার্টিসিপেশন। এর মাঝখানে তো কোনো অবস্থা ছিল না। আমরা পার্টিসিপেশন করেছি।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, আপনার স্মৃতি, বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া, পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিকে চলে যাওয়া–এই সার্বিক বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমাদের স্বপ্ন ছিল এই রাষ্ট্রটা একটা গণতান্ত্রিক হবে। পাকিস্তান কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের যে ধারণা, সমাজতান্ত্রিক না হলে গণতান্ত্রিক হওয়া যায় না। মানে পুঁজিবাদীরাও গণতন্ত্র করে, বুর্জোয়া গণতন্ত্র; কিন্তু আমরা একটা সমাজতন্ত্রের কথা ভাবছি। এ জন্য আমাদের সেমিনারেও (২৩ মার্চ ১৯৭১) ওই কথাটাই এসেছে। আমরা কিন্তু একটা সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথাই ভাবছি; কিন্তু যেটা ঘটল, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হলো না। পুঁজিবাদী বাংলাদেশ হলো।

পাকিস্তানিরা ওদের স্বার্থে যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা করেছিল, সেই ব্যবস্থাটা কিন্তু ভাঙল না। রাষ্ট্র চরিত্রগতভাবে আগের মতোই থেকে গেলো। অর্থনৈতিকভাবে যে উন্নয়নটা হলো সেটা পুঁজিবাদী উন্নয়ন। বাংলাদেশে আরেকটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তৈরি হলো। আমরা এখন দেখি সম্পদ পাচার হচ্ছে। এটা তো আগে থেকেই চলে আসছে। মোগলরা সম্পদ দিল্লিতে নিতো, ব্রিটিশরা লন্ডনে নিতো, পাকিস্তানিরা করাচিতে নিতো। এখন বাঙালি ধনীরা তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র রয়ে গেছি আমরা। ঐতিহাসিকভাবে দেখলে প্রথমে ব্রিটিশ উপনিবেশন, পরে পাকিস্তানি উপনিবেশ। এখন বাংলাদেশে ধনীদের একটা উপনিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। দেশপ্রেমের ভবিষ্যৎ আছে বলে তারা মনে করে না। তারা এখানকার সম্পদগুলো যেভাবে পারে বিদেশে পাচার করছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ