Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

২০০ বছরের পুরনো আইনগুলো খুব বেশি সংস্কার দরকার নেই

Dr Shahdeen  Malik

ড. শাহদীন মালিক

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এখনো ব্রিটিশদের প্রণীত ফৌজদারি, দেওয়ানি কার্যবিধি, দণ্ডবিধিসহ বিভিন্ন আইনের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ২০০ বছরের পুরনো আইনগুলো কিছু  সংস্কার দরকার হলেও খুব বেশি তা দরকার নেই। আমেরিকার মাত্র ৭টি অনুচ্ছেদ নিয়ে তাদের সংবিধান শত শত বছর ধরে চলছে। 

‘ব্রিটিশরা ছিল এখানে রুলিং ক্লাস, কলোনিয়াল। তারা চিন্তা করেছিল, তাদের সিস্টেমের মধ্যে ঢুকানো। তারা বিচার ও শাসনব্যবস্থা একজনের হাতে রেখে সেই ধাঁচেই আইন প্রণয়ন করেছে। তবে তাদের নিজের দেশের বিচার ও শাসনব্যবস্থা আলাদা। অথচ আজও আমরা ওই কলোনিয়াল আইনে বিচারব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু পরিচালনা করছি। এর একটি ফল হলো, আমাদের বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে টানাপড়েন। নির্বাহীরা আবার ম্যাজিস্ট্রেট হয় কী করে? এ কাজ করে গেছে ব্রিটিশরা। আমি এখনো মনে করি সেটাই করা উচিত হবে। অথবা সেগুলো সংস্কার করে আমাদের উপযোগী করে নিতে হবে।

প্রতিটি আইন পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনও পরিবর্তন হয়। এখন অনেক আইন পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন আইন হচ্ছে সরকারের স্বার্থরক্ষায়। তবে জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী আইনগুলো সংস্কারে সরকারের আগ্রহ কম।  

আইন তৈরি করে জাতীয় সংসদ। অথচ এখন বেশির ভাগ সংসদ সদস্যের আইন সম্পর্কে ধারণা কম। তাহলে আইন কিভাবে সংস্কার হবে, গণমুখী নতুন আইন হবে? আবার আইন কমিশন সংস্কারের যেসব সুপারিশ করে, অনেক ক্ষেত্রে সরকার তা আমলে নেয় না। কমিশনের মূল কাজ হলো সংশোধন, বাতিল ও নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা। আমরা সেটাই করছি। সরকার তা আমলে নেবে কি না তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা অনেক সময় সরকারের অনুরোধে প্রতিবেদন তৈরি করি আবার কখনো নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে সুপারিশ করে থাকি। যার অনেকটিই কাজে আসে না। আবার পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, নিরাপদ খাদ্য আইনসহ বেশ কিছু ভালো আইন হয়েছে কমিশনের সুপারিশ ও খসড়া অনুসরণ করেই।

তবে ২০০ বছর আগের আইন দিয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার করা সম্ভব নয়। ফৌজদারি কার্যবিধি প্রণয়ন করেছে ব্রিটিশরা। তাদের দেশেও বহুবার তা সংশোধন করে সময়োপযোগী করা হয়েছে। আর আমরা ২০০ বছর পিছিয়ে আছি।

২০১৬ সালে বহুল আলোচিত তনু হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, এটি একটি আধুনিক অপরাধ। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইনে তদন্ত করে এর বিচার করা যাবে না। এ ঘটনার তদন্ত করতে হবে নতুন ডিজিটালাইজড পন্থায়। বর্তমান সমাজব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের মিল নেই। একে ঢেলে সাজাতে হবে।

শুধু ফৌজদারি কার্যবিধি নয়, অনেক আইনেরই সংস্কার দরকার। আর কাজে লাগে না এমন আইনগুলো বাতিল করা প্রয়োজন।

১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গত ২০ বছরে ১৪২টি আইন সংস্কারের সুপারিশ করেছে আইন কমিশন। এর বেশির ভাগই আমলে নেয়নি সরকার। যদিও আইন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু কমিশন গঠন করা হয়েছে আইনকে যুগোপযোগী করার জন্যই।

কমিশনের সব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবে সুপারিশের বিষয়ে মতামত জানাতে হবে। সুপারিশ কেন গ্রহণযোগ্য নয়, সেটি অন্তত জানাতে হবে। বিশ্বের বেশির ভাগ উন্নত দেশে নতুন আইন প্রণয়ন ও বিদ্যমান আইন সংস্কারে তাদের আইন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ