Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

২২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হলো না পরাণগঞ্জ ২০ শয্যার হাসপাতাল, চিকিৎসাবঞ্চিত ১০ লক্ষাধিক মানুষ

Nazrul  Islam

নজরুল ইসলাম

রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

নির্মাণের ২২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ ২০ শয্যার হাসপাতাল। জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের দুর্গম চরাঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক মানুষ।

সদর উপজেলার অষ্টধর, বোরোরচর, চর সিরতা ও চর ঈশ্বরদিয়া এবং ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলবাসীকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পরাণগঞ্জ ইউনিয়নে। ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর উদ্বোধন হলেও কোনো জনবল নিয়োগ ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের নামের পাশে ‘২০ শয্যা’ শব্দটি জুড়ে দেয়া হলেও বাস্তবে শয্যাগুলোর অস্তিত্ব নেই। সার্বক্ষণিক অবস্থানের লক্ষ্যে চিকিৎসক-নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টারসহ নান্দনিক অবকাঠামো থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় জনবল। প্রবেশমুখে চুনকাম উঠে যাওয়া দেয়ালে গর্ভবতী ও স্বাভাবিক প্রসবসহ নানা সেবার উল্লেখ থাকলেও চালু হয়নি কোনোটিই। জোড়াতালি দিয়ে শুধু চালু রয়েছে বহির্বিভাগ চিকিৎসাকেন্দ্র (আউটডোর)। প্রেষণে নিযুক্ত চিকিৎসকরা মাঝে মধ্যে এসে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেও প্যারাসিটামল, স্যালাইন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধের বরাদ্দ নেই। বন্ধ রয়েছে ইনডোর বিভাগও।

দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলো। বরাদ্দের অভাবে প্রয়োজনীয় মেরামত সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পালাক্রমে ডেপুটেশনে যাওয়ার কথা থাকলেও সময়মতো তাদের দেখা মেলে না। ফলে সাধারণ চিকিৎসা নিতেও প্রায় ২৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাদের যেতে হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

পরাণগঞ্জ ইউনিয়নের চর বওলা গ্রামের দেলোয়ার ও বাহা উদ্দিন জানান, গর্ভবতী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে দুবছর আগে মারা যান বেগম নামে এক নারী।

একই গ্রামের আবুল হোসেন, মিয়া আলী, আলিমুদ্দিন, মো. মিন্নত আলী, খুদে ব্যবসায়ী ফজর আলীর অভিযোগ, এ হাসপাতালে ছিল এক্স-রে মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। দক্ষ কর্মীর অভাবে সেগুলো ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল হক ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই হাসপাতালে বিছানা (শয্যা) নাই। এইটাকে অহন আর আমরা হাসপাতাল মনে করি না। বেলা ১১টায় মাঝে মধ্যে চিকিৎসকরা এলেও দুপুর দেড়টার মধ্যে চলে যান। শুক্রবার তো খোলাই হয় না। এমন হাসপাতাল আমাদের দরকার নেই।’

ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সুদৃশ্য ভবন হলেও ওষুধ, শয্যা ও খাবারের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে, প্রতিদিনই এখানে চিকিৎসক থাকেন। মানুষজন যেন ন্যূনতম ওষুধ পান, সে চেষ্টা করছি।’

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহজাহান কবির জানান, কয়েকবার হাসপাতাল ভবন ও আবাসিক কোয়ার্টারের বৈদ্যুতিক লাইনসহ মেরামত ও সংস্কারে জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরে তাগিদপত্র দিয়েছেন তিনি; কিন্তু প্রতিবারই স্বাস্থ্য প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এ খাতে বরাদ্দ নেই।

তিনি বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরি ও অন্তঃবিভাগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে কর্মরত চিকিৎসক-স্টাফ নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত আনসার সদস্য মোতায়েনসহ আনসার ক্যাম্প স্থাপনও জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ