২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে ২৮ কোটি ২০ লাখ মানুষ
জাতিসংঘের গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস অনুসারে, ২০২৩ সালে ৫৯টি দেশের প্রায় ২৮ কোটি ২০ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে গাজা উপত্যকা ও সুদানে খাদ্য নিরাপত্তার তীব্র অবনতির কারণে ২০২২ সালের তুলনায় ২ কোটি ৪০ লাখ বেশি মানুষ তীব্র খাদ্যাভাবের মুখোমুখি হয়েছে। খাদ্য সংকট রয়েছে এমন দেশের সংখ্যাও বেড়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরেরো জানান, পাঁচটি দেশের ৭ লাখ ৫ হাজার মানুষ পঞ্চম ধাপে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্ধারিত ক্ষুধার স্কেলে সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি জানান, দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হওয়া ৮০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ, ৫ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ গাজাবাসী ছিলেন। দক্ষিণ সুদান, বুরকিনা ফাসো, সোমালিয়া ও মালির কয়েক হাজার মানুষকেও ভয়াবহ ক্ষুধার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
প্রতিবেদনের ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস অনুযায়ী, গাজার প্রায় ১১ লাখ মানুষ এবং দক্ষিণ সুদানের ৭৯ হাজার মানুষ আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হবে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আঞ্চলিক ও বহুজাতিক সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, কারিগরি সংস্থা এবং অন্যান্য ১৬টি অংশীদারের সহযোগিতায় ফুড সিকিউরিটি ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের ফ্ল্যাগশিপ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই প্রতিবেদনকে 'মানবিক ব্যর্থতার নিদর্শন' হিসেবে অভিহিত করে বলেন, প্রাচুর্যের এই পৃথিবীতে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে।
প্রতিবেদনের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, গত ১২ মাস ধরে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে তা ভয়াবহ বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
গুতেরেস গাজা উপত্যকার সংঘাতের কথা তুলে ধরেন, কারণ ছিটমহলটিতে বিপর্যয়কর ক্ষুধার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে বেশি মানুষ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুদানে বছরব্যাপী সংঘাত চলছে, যা ক্ষুধা ও পুষ্টির উপর মারাত্মক প্রভাবসহ বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব খাদ্য সরবরাহকারী ব্যবস্থার রূপান্তরের পাশাপাশি তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির অন্তর্নিহিত কারণগুলো মোকাবেলা করে প্রতিবেদনের ফলাফলের বিষয়ে জরুরি প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থায়নও চাহিদার তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসেইন বলেন, “আমাদের অবশ্যই পর্যাপ্ত তহবিল গঠন করতে হবে এবং আমাদের সব জায়গায় প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। কেননা সকলে মিলে হাতে হাত রেখে চলার মধ্য দিয়েই অতি দুর্ভিক্ষ মোকোবেলা সম্ভব।”
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে