৫৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হলো না শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা
পূর্ণাঙ্গ তালিকা ছাড়াই স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীর চূড়ান্ত এবং পূর্ণাঙ্গ তালিকা এবারও প্রকাশ পেল না। জানা গেছে, এ বছর চূড়ান্ত হবার কথা থাকলেও, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই তালিকাটি সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া আবার পিছিয়েছে।
গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এ বছর কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হলো না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জটিলতার কারণে তালিকা চূড়ান্তের প্রক্রিয়াটি এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে।
পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৬০ জনের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে, প্রথম ধাপে ১৯১ জনের নামের তালিকা ৭ এপ্রিল, ২০২১-এ প্রকাশিত হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৪৩ জনের নামের তালিকা প্রকাশিত হয় ২৯ মে, ২০২২-এ। এ বছর আরও দুটি তালিকা প্রকাশিত হয়- ফেব্রুয়ারিতে ১০৮ জনের এবং মার্চে ১১৮ জনের।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা তৈরি করতে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো একটি ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে। তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে সংকলিত ১,২২২জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামের তালিকা অনুমোদন করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, এবছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এবারও সেটি প্রকাশিত হচ্ছে না। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বুদ্ধিজীবী কথাটির সংজ্ঞাগত জটিলতার কারণেই এই তালিকা সম্পন্ন করায় দেখা দিয়েছে জটিলতা।’
তারা বলছেন, বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, সব পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র ও নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী। শহীদ বুদ্ধিজীবী বলতে এমন ব্যক্তিদের বুঝানো হয়, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ২৫ মার্চ, ১৯৭১ থেকে ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭২ এর মধ্যে যাদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বা তাদের দোসররা অপহরণ করে হত্যা করেছে। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী নির্ধারণে এই সংজ্ঞাটির মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে তারা দাবি করেন এবং এ কারণেই তালিকার তৈরির কাজ শেষ করতে সময় লাগছে বলে জানান তারা।
উপসচিব (গেজেট) হরিদাশ ঠাকুর এ ব্যাপারে ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাজটি ঐতিহাসিক এবং এটি সম্পন্ন করতে জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে কাজের অগ্রগতি কিছুটা কমে গিয়েছে। তাছাড়া বিলম্বের কারণে পূর্ববর্তী যাচাই-বাছাই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং কাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
যুগ্ম সচিব মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, তিনি কেবল কাজে যোগদান করেছেন এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের প্রস্তুতির দিকে মনোনিবেশ করেছেন। এ ছাড়াও তালিকার সম্পূর্ণ তথ্য তিনি এখনো পাননি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ব্যাপারে উনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয়ের আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধের তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ড. এম এ হাসান এই প্রক্রিয়ার বিলম্বে গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগকে সম্মান করতে ব্যর্থ হওয়া একটি জাতীয় ত্রুটি।
সরকার পরিবর্তনের ফলে যেন এসব প্রক্রিয়ায় বাধা না আসে সে ব্যাপারে তিনি একটি ধারাবাহিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে