Views Bangladesh Logo

চট্টগ্রাম নগরীর খাল-নালার ৫৩৬টি স্থানই ঝুঁকিপূর্ণ, শিগগির বসছে নিরাপত্তা বেষ্টনী

ট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন খাল-নালায় ৫৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। চিহ্নিত স্পটগুলোর অধিকাংশেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব নেই, বাকিগুলোতে নেই ম্যানহোলের ঢাকনা। দুর্ঘটনাপ্রবণ সব স্পটে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও ঢাকনা বসানোর আশ্বাস দিয়েছে চসিক। নগরবাসী বলছেন, বিভিন্ন সড়কের পাশের খোলা নালা ও খালগুলো পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে।

গত চার বছরে এগুলোতে পড়ে অন্তত ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও নালা সংস্কারের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও আলাদা বাজেট না থাকায় এসব নালার পাশে গড়ে ওঠেনি কার্যকর কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। দুর্ঘটনা ঘটার পরে কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার খুব একটা প্রতিফলন দেখা যায়নি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত চলাফেরা করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরীর ডবলমুরিংয়ের বাসিন্দা আমজাদ হোসেনের দাবি, উন্মুক্ত খাল-নালাগুলোতে রয়েছে অসংখ্য মরণফাঁদ। বেশি ঝুঁকিপূর্ণগুলোতে এখনই বেষ্টনী দিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।

চসিক সূত্র জানায়, ২০২১ সালের অক্টোবরে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ নালা-নর্দমা ও খালের তালিকা করে সংস্থাটি। ওই তালিকা অনুসারে, সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার খালপাড় এবং ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানের উন্মুক্ত নালাকে মরণফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তালিকাটি প্রণয়নের সাড়ে ৩ বছর পরও অরক্ষিত খাল-নালাগুলো।

২০২২ সালের ৬ এপ্রিল ‘জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্প’ নিয়ে চসিকের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সভায় দুর্ঘটনা রোধে খাল ও নালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণে জোর দেয় দুই সংস্থাই। তবে, তিন বছর কেটে গেলেও দুর্ঘটনা রোধে শতভাগ খাল-নালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে পারেনি সংস্থা দুটি। নগরবাসীর অভিযোগ, খাল-নালায় পড়ে প্রাণহানি এড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু তা খুব একটা আমলে নেয় না চসিক-সিডিএসহ সেবা সংস্থাগুলো। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু শেহরিজের মৃত্যুর পর এ দাবি আরো জোরালো হয়েছে।

আর সিটি করপোরেশন বলছে, এবার নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ২০ এপ্রিল তিনি বেষ্টনী ও স্ল্যাবহীন খাল-নালা ও ঢাকনাহীন ম্যানহোল সংবলিত ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর তালিকা তৈরি এবং ২৪ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন চসিকের প্রকৌশলীদের। চসিক জানিয়েছে, মেয়রের নির্দেশনায় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নগরবাসীর কাছ থেকে উন্মুক্ত খাল-নালার তথ্য চাওয়া হয়। তথ্য সংগ্রহে দায়িত্ব দেয়া ছয়জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে। চলতি সপ্তাহে সংস্থাটির ছয়টি জোনের আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের চূড়ান্ত তালিকাটি প্রকাশ করেছে প্রকৌশল বিভাগ।

তালিকা অনুসারে এক নম্বর জোনে ৪৭টি, দুই নম্বর জোনে ৭৮টি, তিন নম্বর জোনে ৬৮টি, চার নম্বর জোনে ৭৪টি, পাঁচ নম্বর জোনে ৩৩টি এবং ছয় নম্বর জোনে ঝুঁকিপূর্ণ স্পট রয়েছে ২৬৩টি। দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন স্থানে নানা পরিমাপের ৮৬৩টি স্ল্যাব বসাতে হবে। এ ছাড়া ১৪৬টি স্পটে বেষ্টনী ও কয়েকটিতে ম্যানহোল নেই। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘তালিকা পেয়েছি। বর্ষা চলে আসছে, তাই আপাতত বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হবে। কিছু জায়গায় প্রকল্পের কাজ চলছে।

প্রকল্পে ধরা থাকলে দেয়ালের স্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী এখনই দেয়া হবে। স্ল্যাব বসানোর কাজও চলমান। যেখান থেকে তথ্য পাচ্ছি, সেখানেই স্ল্যাব বসানো হচ্ছে।’ সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি ওয়ার্ডের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের তালিকা পেয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেষ্টনী দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আপাতত বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী ঘেরাও তৈরি ও লাল ফিতা দিয়ে পথচারীদের সতর্ক করা হবে। পরে স্থায়ী ঘেরা দেয়া হবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ