খাগড়াছড়িতে জুম্মসম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক
খাগড়াছড়িতে জুম্মদের ওপর অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচারে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামের সড়ক ও নৌপথ ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়েছে ঢাকায় বসবাসকারী জুম্ম জনতা।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় ঢাকায় বসবাসকারী জুম্ম জনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আদিবাসী শিক্ষার্থী এবং নাগরিকরা ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার পাশাপাশি এই অঞ্চলে কথিত সামরিক সহিংসতার নিন্দা জানায়। দায়ীদের শাস্তি এবং হত্যাকাণ্ডের বিচারও দাবি করেন বিক্ষুব্ধরা।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে গণপিটুনির হাত থেকে বাঁচতে পালাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্থানীয় এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পানখাইয়াপাড়া এলাকায় সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের ধাওয়া করে। পরের দিন, একদল বসতি স্থাপনকারী বাঙালি দীঘিনালায় জুম্ম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মিছিল করে, যার ফলে সংঘর্ষ হয় এবং জুম্মের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ওই রাতেই খাগড়াছড়ির একাধিক এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলি চালায় সামরিক বাহিনী। এ ঘটনায় জামতলীর জুনান চাকমা ও পল্টনজয় পাড়ার রুবেল চাকমা নামে জুম্ম সম্প্রদায়ের দুইজন নিহত হন এবং অন্তত ৪০ জন আহত হন। আহতদের অনেকে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
এছাড়াও, বনরূপা মৈত্রী মঠ সহ বাড়িঘর ও ধর্মীয় স্থান ভাংচুর ও লুটপাটসহ অনিক কুমার চাকমা নামের একজন আদিবাসীকে হত্যা করা হয় বলে জানান তারা।
বিক্ষোভকারীরা নিম্নলিখিত দাবিগুলো পেশ করেন:
১. দীঘিনালায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তসহ তিন পার্বত্য জেলার জুম্মবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২. খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালার ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত শুরু করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
৩. সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহারগুলো পুনঃনির্মাণ এবং বিধ্বস্ত দোকান ও ঘরবাড়ির মালিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
৫. সহিংসতায় জড়িত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬. শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সামরিক ও বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের প্রত্যাহার করা।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং চলমান সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান হিসেবে স্বায়ত্তশাসন প্রদান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে