বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৫৮ কৃষকের
কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু কমলেও ২০২৪ সালে প্রাণ গেছে ৭৫৮ জনের
আগের বছরের তুলনায় কমলেও ২০২৪ সালে দেশজুড়ে কর্মক্ষেত্রে ৬৩৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৫৮ জন কৃষক-শ্রমিক। কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যেসব শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, তারাও এ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ৫৮ কৃষকের, যারা জনগণের খাদ্য চাহিদা মেটাতে ফসলের মাঠে কাজ করতে গিয়ে সেখানেই বজ্রপাতের শিকার হন। আর মাছ ধরতে নদীতে নৌকায় এবং সেবা বা অন্য খাতে মারা গেছেন আরও আটজন। বাকি তিনজনের একজন নির্মাণকাজে এবং দুজন ম্যানুফ্যাকচারিং কাজে ছিলেন।
২০২৩ সালে৭৭২টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৮৭৫ জন কৃষক-শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন, যার তুলনায় ১৩.৩৭ শতাংশ কমেছে বিদায়ী বছরে।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত কৃষক-শ্রমিক এবং বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে ১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে পরিসংখ্যানটি তুলে ধরেছে সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতের ৩৭৯ জন। এর পরেই রয়েছে ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ১২৯ জন। বাকিদের মধ্যে নির্মাণ খাতের ৯২ জন, কল-কারখানা ও অন্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের ৭০ জন এবং কৃষি খাতের ৮৬ জন নিহত হয়েছেন।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮১ জন, বজ্রপাতে ৬৯ জন, মাচা বা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছেন ৫০ জন, আগুন ও বিভিন্ন বিস্ফোরণে ৩০ জন, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর আঘাতে বা এর নিচে চাপা পড়ে ২১ জন, পানিতে ডুবে ১৭ জন, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১১ জন, পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ ও দেয়ালধসে সাতজন এবং অন্য কারণে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
এসআরএসের প্রতিবেদন বলছে, বজ্রপাতে ২০২৪ সালে মারা গেছেন যে ৬৯ জন, তাদের সবারই প্রাণ গেছে খোলা স্থানে কর্মরত অবস্থায়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, অন্তত ২৯টি জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ছিল সিলেটে ছয়টি।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীতে এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা জানান, ধানক্ষেেতে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের। এ ছাড়া সল্টফিল্ডে দুজন, পশু খামারে আটজন, মাছ ধরার সময় তিনজন মারা যান।
‘একটু সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই পারতো এই জীবনগুলো বাঁচাতে’- বলেন তিনি।
সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, যেসব কৃষক-শ্রমিক মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ যুবশক্তি। এসব মৃত্যুর আর্থিক ক্ষতিও নিরূপণ করা হয় না।
কমপক্ষে ১৫ জন নিহত কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে জানিয়ে কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুল ইসলাম ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে বজ্রপাত বেশি ঘটেছে। তাই সচেতনতামূলক ব্যবস্থা রাখা বেশি দরকার ছিল।
বজ্রপাতে বেশি মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু বেশি গাছপালা বা উচ্চ কোনো জায়গা নেই, তাই বজ্রপাতটা প্রথম আঘাত মানুষকেই করবে’।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক হাজার ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি জেলায় প্রায় সাত হাজার বজ্রনিরোধক দণ্ড বসানো ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার।
তবে সেকেন্দার আলী মিনা জানান, কৃষিকাজে কর্মরত অবস্থায় মৃত শ্রমিকরাই বেশি সমস্যায় পড়েন। তাদের মালিকদের হয় খুঁজে পাওয়া যায় না, না হয় তারা ক্ষতিপূরণ দিতে অক্ষম। তাই শ্রমিক কল্যাণ তহবিলই কিছুটা কাজে আসে। যার সভা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরে আর হয়নি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে