Views Bangladesh Logo

রাখাইনের জন্য করিডোর: নানা প্রশ্নের উত্তর কী?

গাজাবাসীর পর এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি রাখাইন জনগোষ্ঠী। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটিতে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। এমন শঙ্কা থেকে সেখানে মানবিক সহায়তা দিতে বাংলাদেশের কাছে করিডোর চেয়েছে জাতিসংঘ।

গত রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, রাখাইন রাজ্যে করিডোরের ব্যাপারে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। তবে তাতে বাংলাদেশের কিছু শর্ত থাকবে। কী ধরনের শর্ত থাকবে, করিডোর কীভাবে পরিচালিত হবে, জাতিসংঘের নামে কারা পরিচালনা করবে সেসব ব্যাপারে বিস্তৃত কিছু এখনো জানা যায়নি। যদিও বলা হচ্ছে এই করিডোর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

এই ঘোষণা আসার পর থেকেই নানামহলে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। মানবিক করিডোর দিতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হয়নি বলে মত দিয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। আওয়ামী লীগপন্থি লোকজন একে দেশবিরোধী চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। অনেকে এটাকে বিরাট আতঙ্কজনক খবর হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। অনেকে এও বলছেন, এই করিডোরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গাজায় পরিণত হবে!

কী হবে আমরা এখনো জানি না। রাখাইনবাসীর জন্য অবশ্যই মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। যে করিডোর দিয়ে সহায়তা যাবে সেই একই করিডোর দিয়ে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়ে তাদের জন্য সেখানেই মানবিক সহায়তার কথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে পারবে বাংলাদেশ; কিন্তু এই করিডোর যেন খাল কেটে কুমির না আনা হয়। করিডোর জাতিসংঘ করলেও এতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কিংবা এমন আরও কোনো শক্তি যুক্ত আছে কি না সেটা জানতে হবে এবং তারা কিসের ভিত্তিতে যুক্ত হবে সেটাও সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটা করতে গিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে যেন নতুন সংকট তৈরি না হয়।

আশঙ্কা করা যাচ্ছে এই করিডোর করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সমস্যার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সমস্যাও তৈরি হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ না করে সরকার কেন এত বড় সিদ্ধান্ত নিল? জাতিসংঘের মহাসচিবকে এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের শিগগির স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে; কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখনো গণহারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।


রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় সমস্যায় রূপ নিচ্ছে দিন দিন। এই সমস্যাটিকে আর হেলাফেলা করে দেখার সময় নেই। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং করিডোর বিষয়ে আরও সাবধানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। মানবিক করিডোরের ব্যবস্থাপনা জাতিসংঘের হাতে থাকলেও এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ