Views Bangladesh Logo

আগামী মার্চের মধ্যে গ্রাহকবান্ধব নীতিমালা তৈরি হবে: বিটিআরসি চেয়ারম্যান

আগামী মার্চের মধ্যে টেলিযোগাযোগ খাতে একটি গ্রাহকবান্ধব নীতিমালা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারি ।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি অডিটোরিয়ামে টেলিযোগাযোগ খাতের সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসময় বিটিআরসি’র কমিশনার, মহাপরিচালক ও পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নেটওয়ার্ক কাঠামো এবং লাইসেন্সিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি স্টেকহোল্ডার ও বহুপক্ষীয় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এই সভা মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় সরকারি নীতিনির্ধারক, বিটিআরসির সব কমিশনার, পরিচালক, শিক্ষাবিদ, টেলিকম আইন বিশেষজ্ঞ, টেলিকম শিল্পের প্রতিনিধি, আইসিটি ও ডিজিটাল শিল্পের শীর্ষ বিশেষজ্ঞ এবং টেলিযোগাযোগ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অংশগ্রহণকারীরা দেশের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো আধুনিকীকরণ, সেবার মানোন্নয়ন এবং সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিতকরণ নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করেন।

সভায় পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রাহক ব্যয় হ্রাস এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেবার মান বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এছাড়াও, একটি কার্যকর সংযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যমান কাঠামো আধুনিকীকরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেবা প্রদানকারীদের জন্য একটি স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা তৈরি এবং গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় উন্নত সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্রস্তাবও আহ্বান করা হয়।

সভা শেষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, টেলিযোগাযোগ  খাতের লাইসেন্সিং ব্যবস্থা সময়োপযোগী করার জন্য সংস্কারকাজ শুরু করেছে বিটিআরসি। এ উদ্দেশ্যে নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রোডম্যাপ পুনর্বিন্যাস  কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের টেলিকম খাতকে সুস্থ, প্রতিযোগিতামূলক এবং সমন্বিত করার লক্ষ্যে গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও সরকারের ত্রিমুখী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সংস্কারকাজ চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিটিআরসি গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে।’

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বর্তমান লাইসেন্সিং ব্যবস্থার রূপান্তর, টেকসই বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন এবং নীতিগত সংস্কারকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে, তিনি বলেন, ‘এসব বাধা দূর করতে এবং নেটওয়ার্ক ও ব্যবসায়িক লাইসেন্স পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন করতে বিটিআরসি আগামী মার্চের মধ্যে সরকারের কাছে প্রাসঙ্গিক সংস্কার প্রস্তাব দাখিল করবে।’ এ বিষয়ে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে জনমত গ্রহণ করবেন। এ জন্য আজ থেকে [email protected] ই-মেইল সেবা চালু করা হয়েছে।

ডিজিটাল উন্নয়নকে একটি সমন্বিত খাত হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারকে প্রস্তাবনা দেয়া হবে উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমন ভিত্তির ওপর নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। বর্তমানে পরিষ্কার এবং টেকসই নীতিমালার অভাব রয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী নন। এছাড়া জটিল ও বিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কগুলো একীভূত করে একটি সহজ, সক্ষম এবং সাশ্রয়ী নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্পেকট্রামের ওপর চাপ কমিয়ে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বৃহৎ পরিসরে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের পথে বাধাগুলো অতিক্রম করার জন্য নতুন প্রযুক্তি সহজে গ্রহণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জন্য অ্যাকটিভ শেয়ারিং চালু করা হচ্ছে এবং সবুজ প্রযুক্তির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও, অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স বাতিল এবং সুস্থ প্রতিযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করে এমন লাইসেন্সগুলো বাতিল করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটে শুল্ক আরোপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না কমিশন। এটি সরকারের বিষয়। তবে, ভ্যাট-ট্যাক্স যতটা সম্ভব কমানো দরকার। ইন্টারনেট সহজলভ্য হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টেলিকম খাতে এমন কোনো নীতিমালা তৈরি হবে না, যা সকালে তৈরি করে বিকালে বদলাতে হয়। এই খাত পুনর্গঠন করা হবে এবং একটি নতুন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা তৈরি করা হবে, যেখানে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না।’

৫জি চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কখন এবং কোথায় ৫জি চালু হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে, আমরা বিভিন্ন পরামর্শমূলক সভা এবং ৫জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়া, জুনের মধ্যে ৭০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামের প্রস্তুতি চলছে।’

সংস্কার কার্যক্রম আগামী রাজনৈতিক সরকারের সময় টিকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১১-২০১২ সালে ইস্যু করা লাইসেন্সগুলো ২০২৬ সালের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। ২০২৭ সালে লাইসেন্স নবায়নের সময় এই সংস্কার কার্যকর হবে। নতুন কাঠামো পুনর্বিন্যাস  একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি টেকসই হবে কেবল তখনই, যদি একটি সমন্বিত ব্যবস্থা চালু করা যায়।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ