Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

স্মরণীয় টেস্ট সিরিজ জয়

Ekramuzzaman

ইকরামউজ্জমান

সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

০০০ সালের ১০ নভেম্বর অভিষেক টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে। এর পর থেকে প্রায় চব্বিশ বছরে গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলেছে ১৪৪টি টেস্ট ম্যাচ। এর মধ্যে বাংলাদেশ দল জিতেছে ২১টি। পরিসংখ্যান পদ্ধতি তার বুকে ধারণ করে রেখেছে বড় বেশি অস্থিরতা। আর এটিই বাস্তবতা।

১৪৩ আর ১৪৪ টেস্টে (বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ) দেশের বাইরে ভিন্ন কন্ডিশনে পাকস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ যথাক্রমে ১০ ও ৬ উইকেটে দাপটের সঙ্গে ‘কমপেক্ট’ ক্রিকেট যেন শ্রেয় দল হিসেবে সিরিজ জয় শুধু স্মরণীয় নয়, অবিস্মরণীয়। পাকিস্তানের কন্ডিশনে তাদের বিপক্ষে সিরিজ জয় শুধু বাংলাদেশের নয়, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যান্ডের মতো দলের অনেক বড় সমস্যা। বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছে ১০ উইকেটে। পাকিস্তান কখনো টেস্ট ক্রিকেটে তার কন্ডিশনে অতীতে টেস্টে ১০ উইকেটে পরাজিত হয়নি। পাকিস্তান এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো তার কন্ডিশনে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২-০ ম্যাচে। প্রথমবার হয়েছে ৩-০ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২২-২৩ সালে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ম্যাচে সিরিজ জয় হলেও দেশের বাইরে ভিন্ন কন্ডিশনে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় সিরিজ জয়। এর আগে বাংলাদেশ যথাক্রমে ওয়েস্টইন্ডিজ (২০০৯) এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (২০২১) সিরিজ জিতেছে। দেশের বাইরে ভিন্ন কন্ডিশনে জয়ের আলাদা গুরুত্ব এবং মর্যাদা আছে। সব টেস্ট খেলুড়ে দেশ চায়, বাইরে ভালো ক্রিকেট খেলে জিততে। আর এর জন্য প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৮টি টেস্ট জিতেছে- ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা, নিউজল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ খেলেতে গিয়েছিল। বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি পাকিস্তানের চেয়েও ভালো ছিল। এই প্রস্তুতিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পেরেছে টিম বাংলাদেশ। খেলোয়াড়রা সবসময় বিশ্বাস করেছেন, সবাই মিলে খেললে জয় অবশ্যই সম্ভব। এই আত্মবিশ্বাস জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে উৎসবের সন্ধ্যে। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছে নতুন অধ্যায়।

বাংলাদেশের এই অসাধারণ বিজয় দেশের ক্রিকেটকে এক ধাপ উঁচুতে পৌঁছে দিয়েছে। খেলোয়াড়দের শুধু উজ্জীবিত করেনি, তাদের সামর্থ্যের প্রতি আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। খেলোয়াড়রা বুঝতে পেরেছেন, সঠিকভাবে টেস্ট খেলতে পারলে বন্ধ দরজা খুলতে বেশি সময় লাগবে না। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় সময়ের ফসল নয়। গোলায় তোলা ফসলের পেছনে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা কঠোর পরিশ্রম অনুশীলন এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। এই বিজয়ের অংশীদার অনেক সময় ধরে অনেকে। সবাই মিলে বাংলাদেশকে বিজয় উদযাপন করতে হবে।

দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো ক্রিকেটাররা ক্রমেই দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে নিজেরা দাঁড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। যেন উপভোগের পাশাপাশি সব সময় তারা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। আর তাই তো টেস্টে বাংলাদেশ স্বাগতিক দলের প্রথম ইনিংসে যে ২৭৪ রানের জবাবে মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়েও ধৈর্য্য এবং মানসিক শক্তি নিয়ে বীরেরমতো লড়েছে। সপ্তম উইকেটে লিটন দাস এবং মেহেদী হাসান খেলার রঙ পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছেন। ১৮৮৭ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এবারই প্রথম এত বড় বিপর্যয় কাটিয়ে একটি দল প্রথমবারের মতো জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছে। লিটন দাসের ১৩৬ রান আর মেহেদী হাসান মিরাজের ৭৮ রানের অনবদ্য ইনিংস এখন যে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্য অনুপ্রেরণা।

টেস্ট ক্রিকেটে ধৈর্য্যের সঙ্গে দায়িত্বশীল ‘পার্টনারশিপ’ একটি দলকে কীভাবে চরম বিপদ থেকে রক্ষা করে, বিজয়ের সান্নিধ্য দিতে পারে (৬ উইকেটে জয়লাভ)। রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে মর্যাদার লড়াইয়ে বিশ্বের সচেতন ক্রিকেট অনুসারীরা এটা দেখেছেন। দেখেছেন একটি দলের বিজয় কত বেশি আবেগঘন এবং আনন্দঘন হতে পারে।

বাংলাদেশের ব্যাটিং বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে পরিবর্তন এসেছে। তিন ডিপার্টমেন্টে উন্নতি করার সুযোগ সব সময় প্রত্যাশিত। যেটি উল্লেখ করতে চাচ্ছি, সেটি হলো দলের প্রতিটি ক্ষেত্রে পারফরমার বাড়ছে। দেশের বাইরের কন্ডিশনে দুটি টেস্টে পেসাররা (হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা,তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম) নিয়েছেন ২১টি উইকেট। আর স্পিনাররা (মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান) নিয়েছেন ১৫টি উইকেট। ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহিম (তিন ইনিংসে) ২১৬, লিটন দাস (দুই ইনিংসে) ১৯৪, মেহেদী হাসান মিরাজ (দুই ইনিংসে) ১৫৫, সাদমান ইসলাম (চার ইনিংসে) ১৩৬, মমিনুল হক (তিন ইনিংসে) ৮৫, জাকির হাসান (চার ইনিংসে) ৬৮, নাজমুল হোসেন (তিন ইনিংসে) ৫৮ রান করেন। ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, আর দ্বিতীয় টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন লিটন দাস।

চলতি মাসের শেষ দিকে ভারতের কন্ডিশনে বাংলাদেশ দল আবার লড়াইয়ে মাঠে নামবে। ভারত দলটি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং ভারসাম্যময়। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে আরও ভালো ব্যাটিং করতে হবে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এখনো তার ফর্ম ফিরে পাননি। মমিনুল হক এখনো তার ছন্দে নেই। সাদমান এবং জাকিরকে ভারতের পেস আক্রমণ সামলে আরও অনেক বেশি গোছানো ও দায়িত্বশীল ক্রিকেট খেলতে হবে। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো জয়ের মুখ দেখেনি।

বাংলাদেশ দলটি জয়ের মন্ত্রে দারুণভাবে উজ্জীবিত। উইনিং কম্বিনেশন চমৎকার। দলের কোচকে (হাথুরুসিংহে) পছন্দ করেন না বোর্ডের নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ। আর এ কথা তিনি প্রকাশ্যে সব সময় বলেছেন। সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পরও বলেছেন হাথুরুসিংহেকে বোর্ড থেকে বিদায় করা হবে। কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের পারফর্মেন্স যথেষ্ট উজ্জ্বল। তাকে যারা বিরোধিতাও করেন, তারাও তার ক্রিকেট চিন্তা পরিকল্পনা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেন না। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে অসাধারণ জয়ের পেছনে হাথুরুসিংহের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। বোর্ড প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই সবার সঙ্গে আলোচনা করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন, হাথুরুসিংহ দলের সঙ্গে ভারতে যাবেন কী যাবেন না।

লেখক: কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার ফুটবল এশিয়া।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ