Views Bangladesh Logo

মরুর বুকে নতুন ট্র্যাজেডি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ২১ মে দিবাগত রাতে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হারের পর মাঠ থেকে দলের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মেজাজ হারান শামীম হোসেন পাটোয়ারী। গ্যালারিতে থাকা দর্শকের কোনো কথা হয়তো তার গায়ে লেগেছে! যে কারণে ওই ক্রিকেটার দাঁড়িয়ে গিয়ে পাল্টা জবাব দেন। তবে শামীম হোসেন পাটোয়ারীর এটাও মনে রাখা উচিত, আমিরাতের মাঠে যে নতুন ট্র্যাজেডি রচনা করেছেন তারা, সেটি বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি কালো অধ্যায় হয়েই থাকবে। আইসিসি সহযোগী দেশ ও র্যাংকিংয়ের ১৫তম অবস্থানে থাকা দলের কাছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে যে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করলেন শামীম পাটোয়ারীরা, এখন কী আর গলার স্বর উঁচু করে কথা বলার সুযোগ আছে?

সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২০৫ রান টপকে যে ম্যাচ জিতল আমিরাত, সেটিকে না হয় একটি ‘স্রেফ দুর্ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেয়া যেত; কিন্তু পরের ম্যাচে যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল বাংলাদেশ, সেটিকে তো আর ‘দুর্ঘটনা’ বলা যায় না। বলতে পারেন, হার-জিত তো খেলারই অংশ। আর সেই হার আর জয়েরও তো যৌক্তিকতা বা প্রাসঙ্গিকতা আছে। যদিও ম্যাচ শেষে অধিনায়ক লিটন কুমার দাস বললেন, রাতের শিশিরই তাদের ‘সর্বনাশ’ করেছে! কিন্তু টানা হারের পর পেশাদার ক্রিকেটে কী আর এসব অজুহাত- ধোপে টিকে?
ক্রিকেট ইতিহাস-ঐতিহ্য আর অর্জন বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আর আমিরাতের রয়েছে যোজন যোজন পার্থক্য! দুদলের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। এমন একটি দলের কাছে যখন অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করবে দল, তখন বুঝে নিতে হবে সেই দলের বর্তমান সামর্থ্য এতটুকুই। নামে ভারে বাংলাদেশ যত বড় দলই দাবি করুক না কেন, ভেতরটা যে আসলে একদম ফাঁফা তা বলাই বাহুল্য।

মাশরাফী, সাকিব, তামিমরা চলে যাওয়ার পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেই দৈন্যতা মাঠে ফুটে উঠছে বারবার। শুধু আমিরাতই নয়, ঠিক এক বছর আগে এই মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে বিধ্বস্ত চেহারায় দেখা যায় বাংলাদেশকে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে রাখে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে কোনো রকমে জয় পায় বাংলাদেশ। অথচ যুক্তরাষ্ট্র দলটিতে তেমন কেউই নেই বাংলাদেশের মতো পেশাদার। প্রবাসী খেলোয়াড়দের নিয়ে তাদের দল। তারা চাকরির ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেট খেলেন। এর আগে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের কাছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হারের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। ২০২৩ সালের মার্চে চট্টগ্রামের মাঠে স্বাগতিকদের ৭ উইকেটে হারিয়ে আইরিশ রূপকথা রচিত হয়েছিল। এছাড়া ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হার বাংলাদেশ বড় ধাক্কা খেয়েছিল। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে হংকংয়ের কাছে ২ উইকেটের হার ও ২০১২ সালে আইসিসির সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ডের কাছে হারও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে হতাশার গল্প হয়ে আছে। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সিরিজ হারের কালিমা লেগে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তাও আবার শক্তিশালী পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ শুরুর ঠিক আগে।

পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ; কিন্তু পাকিস্তান সফর বিলম্বিত হওয়ায় সিরিজে বাড়তি আরেকটি ম্যাচ যুক্ত করা হয়; কিন্তু পাকিস্তান সফরের আগে মরুর বুকে যে চিত্রনাট্য মঞ্চস্থ করল বাংলাদেশ দল, এখন পাকিস্তান সিরিজে কী হয় সেটিই দেখার বিষয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ