বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করুন
দেশে এখন দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। পত্রিকা খুললেই অবৈধ সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য ফাঁকি, উৎকোচ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার, সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতিসহ নানা অপরাধের খবর। এসব অভিযোগ দায়ের করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও হচ্ছে; কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতার সুযোগে মামলা প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না। বিচার কার্যক্রম থমছে থাকছে। ফলে জমছে মামলার পাহাড়।
রোববার (৭ জুলাই) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিচারে ধীরগতির কারণে সুযোগ নিচ্ছে দুর্নীতিবাজরা। বিচারিক প্রক্রিয়ায় ধীরগতির সুযোগে অনেক অপরাধী এমনকি দেশ ছেড়েও পালাচ্ছে। আর এসব দুর্নীতিবাজরা বেশির ভাগই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা বিচারের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকলে অপরাধীরা কিছুটা হলেও আইনের আওতায় থাকে। বিপরীতে বিচার ব্যাহত বা বিলম্ব হলে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।
আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান স্তম্ভই আইন-আদালত-বিচার প্রক্রিয়া। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত না থাকলে তা রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করে। বাংলাদেশের আইন ও বিচার প্রক্রিয়া নানাভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ। আইনি দুর্বলতার কারণেই যে বাংলাদেশে দিন দিন দুর্নীতি বাড়ছে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে আইনের লোক হয়েই আইনের ব্যত্য়য় ঘটিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে জনগণও আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আদালতে অসংখ্য মামলা পড়ে আছে। কিন্তু বিচারে রাঘব বোয়াল কারও শাস্তি দেখছি না। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় দুর্নীতিবাজরা আরও বেপরোয়া। দুর্নীতি মামলায় বিচারের গতি না বাড়লে জনগণের কাছে বিচার বিভাগের দুর্বলতা প্রতীয়মান হবে।
আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতি হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্নীতির মামলা শুনানির জন্য ঢাকায় বিচারিকে ১৩ ও উচ্চ আদালতে রয়েছে এখতিয়ারভুক্ত ১০ বেঞ্চ। এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মামলা লড়ছেন যথাক্রমে ১১ ও ২৬ আইনজীবী। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই খণ্ডকালীন। ফলে যে হারে দুর্নীতির অভিযোগ, এরপর মামলা হচ্ছে; সে হারে এগোচ্ছে না বাকি প্রক্রিয়া।
দুর্নীতির মামলা ত্বরান্বিত করার বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থায়ী আইনজীবী ক্যাডার না থাকায় সরকারের মামলাগুলো যতটা ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। দুদকের পক্ষে এখন ২৫-২৬ আইনজীবী দিয়ে চার হাজার মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। আমাদের আইন ও বিচার ব্যবস্থায় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ খুবই কম। আইনজীবী ক্যাডার তৈরি, আইন মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দ, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক ও বেঞ্চ এবং দুদকের নিজস্ব আইনজীবী বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে