Views Bangladesh Logo

ডাকসু নির্বাচনের আগে সংস্কার চায় ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘবিরতির পর খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বন্ধ দুয়ার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কিংবা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হতে পারে ডাকসু নির্বাচন। তবে নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে দেব। ছাত্র সংঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে কীভাবে নির্বাচন হবে এবং এর আগে যে যে সংস্কার দরকার, সেগুলো করার চেষ্টা চালাব।’

দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে ২০১৯ সালের মার্চে সচল হয় ডাকসু। এরপর করোনা মহামারি, প্রশাসনের অনীহা ও সরকারি দলের প্রভাবে চার বছর ধরে বন্ধ নির্বাচন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘গণআন্দোলনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশই যেন ট্রমাটাইজড হয়ে আছে। তবে ছাত্রলীগের রোষানলে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী ফের হলে উঠছেন। ছাত্রদলসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো অনেক বছর পর মুক্তভাবে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান করতে পারছে। তাই খুব জরুরিভিত্তিতে বা খুব দেরিতে ডাকসু নির্বাচনের মানে হতে পারে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করা।’

‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত, সব স্টেকহোল্ডারের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে উপযুক্ত সংস্কারে ডাকসুর গঠনতন্ত্রকে আধুনিক ও কার্যকরী করার পরই নির্বাচনের সময় নির্ধারণ। যেন মোটাদাগে ভয়ঙ্কর ট্রমা কাটিয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা সুন্দর মন-মানসিকতা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সত্যিকার অর্থেই কার্যকর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন’- বলেন তিনি।

সাহস বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্রের সংস্কার ও পদক্ষেপ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অচিরেই জানাবো। শিক্ষার্থীদের অবহিত ও সচেতন করতে চালাবো সচেতনতামূলক কার্যক্রমও’।

ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ঢাবি সংসদ সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘দীর্ঘাদন পর ডাকসু চালু হচ্ছে। এর আগে তো সংস্কার অবশ্যই দরকার। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রভাব ছিল। আগামীতে যেন কোনো দলই যেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে না পারে, সেটি আমাদের দেখতে হবে। তবে ডাকসুর সংস্কার না করে নির্বাচন দেয়াটা ঠিক হবে না’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ছাত্রশিবির থাকায় সভা ছেড়ে বের হয়ে যান বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ)- এই তিন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

তাদের দাবি, ‘ছাত্রলীগের মতো ছাত্রশিবিরকেও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ফ্যাঁসিস্ট শক্তির ছায়াতলে ছাত্রশিবিরের গুপ্ত রাজনীতি এবং বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইঙ্গিত বহন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় শিবিরের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালু হলে একই প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগেরও পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হবে। ফলে ফ্যাঁসিবাদ, স্বৈরাচারের অংশীজন ও গণহত্যার সহযোগী ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির ও জাতীয় ছাত্র সমাজকে পুনর্বাসনে ডাকসু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার সুযোগ নেই’।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সসবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির থাকবে কি না, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই ঠিক করবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের কাছে যাবো। তাদের কাছে ভোট চাইবো’।

তার দাবি, ‘ডাকসু নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেন সব সংগঠন সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে। ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো বাতিল করতে হবে। এবারের ডাকসু নির্বাচন যেন ২০১৯ সালের মতো প্রহসনমূলক না হয়ে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় হয়, সেদিকে প্রশাসনকে নজর দিতে হবে’।

‘ডাকসু সংস্কারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছিলো। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিক ভিতে দাঁড় করানোর আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন চালু করতে হবে’- বলেন তিনি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ছাত্রশিবির যদি ডাকসু নির্বাচনে থাকে, তবে বিভিন্ন সময় তাদের রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত অবস্থানগুলো স্পষ্ট করা দরকার। আগামী দিনে তাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কেমন হবে, সেটার উপরেই নির্ভর করবে, শিক্ষার্থী এবং আমরা ছাত্র সংগঠন হিসেবে তাদেরকে কীভাবে নেব’।

তবে ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েমের দাবি, ‘ডাকসু নির্বাচনের আগে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। গঠনতন্ত্রের বিষয়গুলোর সমাধান করতে হবে। আমরা দেখেছি, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগকে সমর্থন করেছে। আগামী নির্বাচনে এ রকম যেন না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে’।

বিশ্ববিদ্যালয়কে নারী শিক্ষার্থীদের হলে শতভাগ আসন বরাদ্দ এবং গবেষণায় নজর দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ