বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের আরও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে
গত জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে মূলত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের ডাকেই সারা দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন সাধারণ নারী-পুরুষ শিশুরা পর্যন্ত। শিক্ষার্থীদের নিঃস্বার্থ আত্মদান সারা দেশের মানুষকেই স্পর্শ করেছিল গভীরভাবে; কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে ছাত্ররা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। এর কারণ তারা বিচার হাতে তুলে নিচ্ছেন, নিজেরা নানাভাগে ভাগ হয়ে গেছেন; এবং যে কোনো অজুহাতে হঠাৎ হঠাৎ আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন- রাস্তা অবরোধ করছেন, সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতেও তারা দ্বিধাবোধ করছেন না। এতে করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই নাজুক হয়ে গেছে, কারণ সরকারও তাদের সেভাবে কিছু বলছে না; কিন্তু এবার রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙ্চুরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ ১৪ জন গ্রেপ্তারের ঘটনাটি সত্যিই দেশের মানুষকে হতবাক করে দিল।
গতকাল শনিবার (৮ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুক্তারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন সালমানসহ ১৪ জন রাসেল স্কয়ারের একটি ভবনে শেখ কবির নামে এক ব্যক্তির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করে এবং হামলা করেছেন। এমন খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শেখ কবির অভিযোগে বলেন, হামলাকারীরা তার অফিসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং কিছু নগদ টাকা ও চারটি কম্পিউটার লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দাবি ওই ভবনে আওয়ামী লীগের অফিস চলছে, এমন খবর পেয়ে তারা সেখানে গেছেন। ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের কোনো অফিস পাওয়া গেছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো অফিস ছিল না, শেখ কবিরের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক অফিস।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে ছাত্রদের এমন তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েক দিন ধরেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কেউ কোনো অভিযান চালাতে পারবে না। তারপরও যদি ছাত্ররা এমন অভিযান চালায় এবং তারপর যদি তাদের বিরুদ্ধে টাকা ও সম্পদ লুটের অভিযোগ ওঠে তাহলে তার দায়ভার ছাত্রদেরই নিতে হবে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের আরও তৎপরত হতে হবে। কতিপয়ের এমন দৌরাত্ম্য সব ছাত্রদেরই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এটা কোনোভাবেই হতে দেয়া যাবে না। ছাত্ররাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এমনটা চলতে থাকলে ছাত্রদের ডাকে হয়তো সাধারণ মানুষ আর ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে না। এ বিষয়ে সরকারকেও আরও সচেতন হতে হবে, কোনো অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে ছাত্র বলেই যেন তাদের ছাড় দেয়া না হয়। বিশেষ করে বিচার হাতে তুলে নেয়ার মতো গর্হিত অপরাধ যারা করছেন তাদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনকারীদেরও আরও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। তারা যেন কোনোভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন না হোন তার ব্যবস্থা তাদেরই করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে