Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

রসায়নে নোবেল পুরস্কার-২০২৪ পাওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া

প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ ফান করছে আমার সঙ্গে

David   Baker

ডেডিড বেকার

বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নোবেল কমিটি থেকে ফোন করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রথম প্রতিক্রিয়া। নোবেল কমিটির ওয়েব সাইট থেকে এই সাক্ষাৎকারগুলো বাংলায় ভাষান্তরসহ প্রকাশিত হচ্ছে ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর পাঠকদের জন্য। ২০২৪ সালে রসায়নে নোবেলে পেয়েছেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার। আজ প্রকাশিত হলো ভেভিড বেকার এর প্রথম প্রতিক্রিয়া।

রসায়নে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরে সেদিন খুব সকালেই ঘুম ভাঙে ডেভিড বেকারের পরিবারের। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর পরই তাকে নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকার দিতে হয়। এখানে তিনি বলেছেন তার নতুন আবিষ্কৃত প্রোটিন নিয়ে। তার সহযোগী বিজয়ীদের নিয়ে, যারা তার কাজের ক্ষেত্রে ছিলেন বিশাল অনুপ্রেরণাদায়ক। তার কাজের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক অ্যালগরিদম কীভাবে কাজ করে, তা বোঝার প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও কথা বলেছেন।


ডেভিড বেকার: হ্যালো?
এডাম স্মিথ: ওহ, হ্যালো, ডেভিড বেকার বলছেন?

ডেভিড বেকার: জি, বলছি। আমি একটা সংবাদ সম্মেলকে আছি। তাও বলুন, শুনতে পাচ্ছি।
এডাম স্মিথ: ওহ, ক্ষমা চাচ্ছি। আপনি সংবাদ সম্মেলনে কী বলে শুনুন, আমি না-হয় ফোন ধরে থাকি।

ডেডিভ বেকার: সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর না-হয় আমরা কথা বলি। ঠিক আছে?
এডাম স্মিথ: নিশ্চয়। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরই আমি ফোন করছি।

ডেডিভ বেকার: হ্যালো?
এডাম স্মিথ: আমি এডাম স্মিথ, নোবেল প্রাইজ ওয়েব সাইট থেকে বলছি। অনেক অভিনন্দন আপনাকে।

ডেডিভ বেকার: ধন্যবাদ।
এডাম স্মিথ: কীভাবে প্রথম খবরটা পেলেন জানাবেন দয়া করে?

ডেভিড বেকার: আমি প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ ফান করছে আমার সঙ্গে। প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি কিছু। মনে হয় ওরা প্রথমে আমার ছেলেকে ফোন করেছিল, পরে আমার ছেলের কাছ থেকে আমার নম্বর নিয়েছে। আমি একটি ফোন পাই। আমি নোবেল পেয়েছি শুনেই আমার স্ত্রী চিৎকার শুরু করে। তাই আমি আর বাকি কথা ঠিক মতো শুনতে পাইনি। কিন্তু এর মধ্যে খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এডাম স্মিথ: আপনার আগে আপনার স্ত্রী বুঝতে পেরেছিলেন এটা ভালো।

ডেভিড বেকার: হ্যাঁ, তাই।
এডাম স্মিথ: মানুষ সব সময় বলত, যারা প্রোটিনের ভাঁজ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, তারা নোবেল পুরস্কার পাবেন। আপনারা তা পেলেন। কেমন লাগছে আপনার?

ডেভিভ বেকার: অবশ্যই এটা একটা বিরাট সম্মান। খুবই উত্তেজনার ব্যাপার। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পারের সঙ্গে এটা ভাগাভাগী করে নিতে পারা। জন জাম্পারের কথা আলাদা করে বলতেই হয়, যিনি প্রোটিনের ক্ল্যাসিক কাঠামোর পূর্বাভাস সমস্যার সমাধান করেছেন। আমি সব সময়ই ভাবতাম যদি প্রোটিন ডিজাইনের জন্য কোনো নোবেল পুরস্কার থাকত, আর আমি যদি তা স্টিভ মায়ো ও বিল ডিগ্র্যাডোর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারতাম! সেটা পাইনি বলে কিছুটা মন খারাপ। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই জানেন যে, প্রোটিন ভাঁজ করার সমস্যাটির দুটি দিক রয়েছে: ক্রম থেকে কাঠামোতে এবং তারপর কাঠামো থেকে ক্রমানুসারে। আমি জানি এটা ভালো যে, এর জন্য যৌথভাবে একটা পুরস্কার রয়েছে।
এডাম স্মিথ: হ্যাঁ, যৌথভাবে। আপনি কি মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে প্রোটিন ডিজাইনের সবচেয়ে উপকারী প্রভাব পড়তে চলেছে?

ডেভিড বেকার: আমি সত্যিই বিস্তৃত অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে খুবই আশাবাদী। আমরা এখন যা নিয়ে কাজ করছি আগামীর চিকিৎসাবিজ্ঞানে, স্বাস্থ্য আর ওষুধপত্রে তার বড় প্রভাব পড়বে। রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা হবে। রোগাক্রান্ত হলে যথাসময়ে শরীরে যথাবিহিত ওষুধ প্রয়োগ সম্ভব হবে। সিস্টেমেটিক ড্রাগ ব্যবহারের অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
শুধু ওষুধ না, অনুঘটন তৈরিতেও আমাদের অগ্রযাত্রা বিশাল। এর মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির দূষণকারী বস্তুগুলোও কমিয়ে আনতে পারব। যেমন, প্লাস্টিক। আমি মনে করি আমাদের হাতে এখন অনেক টেকসই অ্যাপ্লিকেশন আছে, যা দিয়ে আমরা প্রকৃতির অনেক কিছু আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। এতদিন প্রোটিনগুলো পরিবর্তিত হয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে; কিন্তু এখন প্রোটিন ডিজাইনের মাধ্যমে আমরা এর অনেক সমস্যা সহজেই সমাধান করতে পারব। এটা সত্যিই খুব উত্তেজিত হওয়ার মতো একটা ব্যাপার।
এডাম স্মিথ: নতুন এক দুনিয়ার ডাক শোনা যাচ্ছে। আহা।

ডেভিড বেকার: হ্যাঁ, তা-ই। সত্যিই এক নতুন পৃথিবী এটা।
এডাম স্মিথ: আরেকটি ছোট প্রশ্ন। প্রোটিন ভাঁজ প্রশ্নে আপনার প্রতিযোগীদের সঙ্গে পুরস্কৃত হয়ে কেমন লাগছে? আপনি জানেন এসবের জন্য তারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই পুরস্কার নিয়ে আপনারা এক হয়ে গেলেন। কেমন লাগছে?

ডেভিড বেকার: জন আর ডেমিসকে কখনো আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করিনি। বরং এটা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। বহু বছর ধরে আমরা প্রোটিন গঠন এবং এর ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে কাজ কাজ করছিলাম। প্রোটিন ডিজাইনের অনেক অগ্রগতি করেছি আমরা। কিছু ডিজাইন করতেও সমর্থ হয়েছি। প্রোটিনের অনেক জটিল গঠন বুঝতে পেরেছি; কিন্তু এটা একটা ধারাবাহিক অগ্রগতি। জন যখন আলফাফোল্ড-২ বিকশিত করল, এটা আমার জন্য ছিল ঘুম থেকে জাগানোর মতো ডাক। তারপর আমি আরও গভীর গবেষণা শুরু করি। আমার মনে হয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা অনেক অসাধ্য সাধন করেছি। মেশিন লার্নিংকে এই ক্ষেত্রে জন এবং ডেমিসের অবদান সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
এডাম স্মিথ: এটা হয়তো খুব বড় একটা প্রশ্ন হয়ে যাচ্ছে এখন, মূলত প্রোটিন ভাঁজ প্রশ্নের সমাধান হচ্ছিল বোঝার মাধ্যমে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত না বুঝেই সমাধান হয়ে গেছে। না বুঝেই যদি এটা কাজ করে, এটা কি কোনো মেটার করে?

ডেভিড বেকার: এটা একটি বড় প্রশ্ন। প্রোটিন কাঠামো ঠিকমতো না জেনেই অনেকে এ নিয়ে কাজ করেছেন। এর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আপনি সেখানে কীভাবে পৌঁছান, তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ নয়। জটিল এক নেটওয়ার্কের কোনোকিছু স্পষ্টভাবে না বুঝেই মানুষ প্রাত্যাহিক জীবনের অসংখ্য সমস্যার সমাধান করছে এবং তা করছে মূলত আমাদের মস্তিষ্ক। এর অনেক সমাধান নিয়ে আমরা খুশি; কিন্তু মস্তিষ্কটা সত্যিই কীভাবে কাজ করে, তা না জেনেই কিন্তু আমরা আরামে আছি। মানে মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, এ নিয়ে কিন্তু সবাই সমান উদ্বিগ্ন নয়!
এডাম স্মিথ: দারুণ। অনেক ধন্যবাদ। এখনকার মতো রাখছি। নিশ্চয়ই খুব ব্যস্ত সকাল শুরু হলো আপনার। কী করবেন আজ সারা দিন?

ডেডিভ বেকার: আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় কতগুলো ফোন আর ম্যাসেজ এসেছে জানি না। ফোনটা পিপপিপ করছেই ক্রমাগত। দেখি কিছু উত্তর দেব। তারপর আরেকটু ঘুমানোর চেষ্টা করব। জানি না সম্ভব হবে কি না। তবে সত্যিই একটা দারুণ দিন হতে চলেছে।
এডাম স্মিথ: অসাধ্য সাধন করেছেন যারা, সেসব বিজয়ীর দলেই আপনি থাকবেন। অনেক শুভকামনা। আশা করছি আপনার কাজ পৃথিবীকে বদলে দেবে।

ডেডিড বেকার: আমি খুব আশাবাদী নই, তাই...(হাসি) তাও এটা খুবই উত্তেজনার এক মুহূর্ত।
এডাম স্মিথ: নিশ্চয়ই। আবারও অভিনন্দন, ডেডিড।

ডেভিড বেকার: খুব ভালো লাগল কথা বলে।
এডাম স্মিথ: অনেক ধন্যবাদ। বাই বাই।

সূত্র: নোবেল প্রাইজ ডট ওআরজি
অনুবাদ: কামরুল আহসান।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ