বন্যার্তদের চিকিৎসা সংকট দূর করুন
আশঙ্কা যা করা হয়েছিল, তাই হচ্ছে। ফেনী এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোগব্যাধি। ডায়েরিয়া, চর্মরোগসহ জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যার্ত এলাকার মানুষ। অনেকের হাত-পায়ে ঘা, খোস-পাঁচড়া দেখা দিচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ৯ দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় বয়স্ক ও শিশুরা জ্বর, সর্দি-কাশি ও ডায়েরিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বন্যার্তরা বলছেন, চারদিক এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। বন্ধ আছে অনেক কমিউনিটি ক্লিনিক। পর্যাপ্ত ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
বন্যার পানি অনেক দূষিত আবর্জনা ও জীবাণু বয়ে নিয়ে আছে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ও উন্মুক্ত টয়লেট থাকার কারণেও এটা হয়। দীর্ঘদিন জলবদ্ধ অবস্থায় থাকার ফলে পানিবাহিত এসব রোগে আক্রান্ত হয় বন্যার্ত মানুষ। যখন একটা অঞ্চল পুরোপুরি তলিয়ে গেছে, তখন এর থেকে সাবধান থাকার কোনো উপায়ও ছিল না। বন্যার্তরা রোগাক্রান্ত হবেন- এটা ধরে নিয়ে আগে থেকেই চিকিৎসাব্যবস্থা জোরদার করার দরকার ছিল স্থানীয় প্রশাসনের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে ১১ জেলায় ৬১৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। এদিকে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৩১ জন মারা গেছেন বলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে।
যারা ত্রাণ-সরবরাহ করেছেন তারা কেবল খাদ্য-পানীয়, জরুরি চিকিৎসাসেবাই দিয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দেয়ার মতো দক্ষতা ও ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই স্বেচ্ছাসেবকদের থাকার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আগেই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন ছিল। দেশের এই মহাসংকটে সাধারণ মানুষ প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে ছুটে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। চিকিৎসকরাও এক্ষেত্রে সময়-উপযোগী দায়িত্বভার ও উদ্যোগ গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, অনেক বন্যাদুর্গত এলাকায় এখনো কোনো চিকিৎসক পৌঁছাননি। রাস্তাঘাট জলমগ্ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে অনেক রোগী নিয়ে হাসপাতালেও পৌঁছুতে পারছেন না স্বজন। শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের অবস্থা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ। এর সঙ্গে আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় বন্যাদুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ওষুধও মিলছে না। জ্বর-কাশি ও ডায়েরিয়ার ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে গ্রহণ করতে পারেন; কিন্তু হাতের কাছে ওষুধ মিলছে না, তাই রোগীরা অসহায় দশার মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা যদি সময় মতো স্যালাইন না পান, তাহলে ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা থাকে।
ত্রাণ-সরবরাহকারীরা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে অনেকে জরুরি কিছু ওষুধপত্রও নিয়ে গেছেন; কিন্তু তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে পারছেন না এখনো। এমতাবস্থায় আমরা চাই প্রশাসন আরও জরুরিব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আরও তৎপর হোক বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবায়। কোনো অবহেলায় একটি প্রাণও যেন না ঝরে যায়। আমরা চাই, যত দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, বন্যাদুর্গত এলাকার প্রতিটি মানুষের চিকিৎসা ও ওষুধপত্র বিনামূল্যে দেয়া হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে