Views Bangladesh Logo

পর্যটকদের বাঁচাতে জঙ্গিদের রাইফেল কেড়ে নিতে গিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা পহেলগাঁওয়ের আদিল

ম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাধারণ পর্যটকদের ওপর ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন দুজন নেপালিসহ অন্তত ২৬ জন, আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, ওড়িশার বাসিন্দারাও।

জঙ্গিদের গুলিতে নিহতদের মধ্যে ভারতবাসীর মনে বেশি দাগ কেটেছে পহেলগাঁওয়েরই টাট্টুচালক সৈয়দ আদিল হুসেন শাহের মৃত্যুর ঘটনা। পর্যটকদের বাঁচাতে হামলাকারী জঙ্গিদের রাইফেল কেড়ে নিতে গিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মারা যান ২৫ বছরের এই যুবক।

আর ২৬ বছর বয়সী নৌ-বাহিনীর লেফটেন্যান্ট নিহত বিনয় নারওয়ালের মরদেহের পাশে বসা স্ত্রীর করুণ ছবিতে আঁতকে উঠছেন সবাই। গত ১৬ এপ্রিল বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন বিনয়।

এই হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্করের টিআরএফ বা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। ওই জঙ্গিদের বেশিরভাগই বিদেশি।

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ 'মিনি সুইজারল্যান্ড' বলে বিখ্যাত। বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের বেশিরভাগেরই পছন্দের শীর্ষে থাকে জায়গাটি। ভারতে পুলওয়ামার পর মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এই অপূর্ব সুন্দর মাটিতেই সবচেয়ে বড় এই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। বিকেলে পহেলগাঁওয়ে রীতিমতো ধর্মীয় পরিচয় দেখে দেখে পর্যটকদের লক্ষ্য করে সব মিলিয়ে ৪০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয় বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।

সৈয়দ আদিল হুসেন শাহের পরিবার হতদরিদ্র। পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের আশায় দিন গোনা তাদের। ভূস্বর্গ কাশ্মীরে আদিলের কাজ ছিল, পর্যটকদের আনন্দ দেয়া। ঘোড়ায় চড়িয়ে তাদের বৈসরণে নিয়ে আসা।

পেশায় টাট্টুচালক এই যুবককে হত্যার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চারদিকে আনন্দ, মজা, ফূর্তিতে তখন। বৈসরণে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে আছেন পর্যটকের দল। কোথাও কেউ ভেলপুরি খাচ্ছেন, আবার কোথাও কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আবার কোথাও কেউ ক্যামেরাবন্দি করছেন এই ভূস্বর্গের সৌন্দর্য্য। কিন্তু এক নিমেষেই পালটে গেল গোটা চিত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুসারে, ধর্ম জিজ্ঞেস ও পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়ে হিন্দু পর্যটকদেরই হত্যা করা হয়েছে।

সে সময় সেখানেই ছিলেন সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। বৈসরণের কাছে একটি গাড়ি পার্কিংয়ে জায়গা থেকে পর্যটকদের নিয়ে এসেছিলেন তিনি। গুলিবর্ষণের সময় অনেকেই যে যার মতো প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলেছেন। ভয় না পেয়ে জঙ্গিদের মুখোমুখি রুখে দাঁড়ান আদিল। পর্যটকদের প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টায় তাদের হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন আদিল। তবে তিনি মুসলিম বলে রেহাই পাননি। জঙ্গিদের গুলির নিশানায় ঝাঁঝরা হয়ে যায় কাশ্মীরি এই যুবকের শরীর।

ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ আদিলেন পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন তিনি। স্বজনেরা তাই জানেন না, কীভাবে বাকি জীবনটা চলবে!

আদিলের বাবা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো কাজে গিয়েছিলেন তার ছেলে। তিনটে নাগাদ তারা জানতে পারেন, বৈসরণে গুলি চলেছে। তখনই ছেলেকে ফোন করেন তারা। কিন্তু ফোন বন্ধ। বিকেলে থানায় গিয়েই ছেলের মৃত্যুর খবর পান তারা। দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবি তুলেছেন আদিলের পরিবার।

বৈসরণের পাশের জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসা জঙ্গিদের নির্বিচারে গুলির শিকার হন নিরীহ পর্যটকেরা। এই ভয়াবহ হামলায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন জম্মু ও কাশ্মীরবাসী। আদিলের পরিবারও চায়, এর বিচার, অপরাধীদের শাস্তি। তবে দরিদ্র পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যের এভাবে চলে যাওয়ায় সেই পরিবার যে অন্ধকারে নিমজ্জিত হল, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রতিবেশিরাও।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ