Views Bangladesh Logo

প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত করা না হলে স্থবিরতা কাটবে না

M A  Khaleque

এম এ খালেক

ধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা এবং সরকার- এই চারটি আবশ্যিক উপকরণের সমন্বয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। এই উপকরণগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং কোনো একটি ব্যতীত আধুনিক এবং পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। যে চারটি উপকরণের সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং একমাত্র পরিবর্তনশীল উপকরণ হচ্ছে সরকার। সরকার দেশের মালিক নন, দেশের জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমানতদার মাত্র। সরকার আসবে সরকার যাবে; কিন্তু রাষ্ট্রের অন্য তিনটি উপকরণ অপরিবর্তনীয় থাকবে। সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকবে কি থাকবে না তা নির্ভর করে সাধারণ মানুষের চাওয়ার ওপর। কোনো কারণে দেশের নাগরিকরা যদি সরকারের প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয় তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা শক্তিশালী সরকারকেও পরিবর্তিত করতে পারে।

রাষ্ট্রের মধ্যে সরকারের কোনো নিজস্ব সম্পত্তি নেই। সরকার শুধু রাষ্ট্রীয় সম্পদের পাহারাদার মাত্র। আমরা কথায় কথায় বলি, সরকারি প্রতিষ্ঠান; কিন্তু এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাদের আখ্যায়িত করা হয় তা আসলে রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান। আর যারা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তারা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা বা কর্মচারী মাত্র।

প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মূল দায়িত্ব হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি অনুগত হয়ে তাদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয় তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারী প্রথাগতভাবে দ্বিমত প্রকাশ করে নোটে তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই। কারণ নোটে কি লিখতে হবে তা উপরের কর্মকর্তাই নির্ধারণ করে দেন। কোনো কর্মকর্তা যদি উপরের কর্মকর্তার নির্দেশ মানতে অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে তাকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুসারি আখ্যা দিয়ে হয়রানি করা হয়। চাকরিতে পদোন্নতি বন্ধ, দুর্গম এলাকায় বদলি এবং ক্ষেত্র বিশেষে চাকরিচ্যুত করার আশঙ্কাও থাকে।

এমনকি তাকে দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে মামলায় জড়ানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চাকরি এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। কোনো চাকরিজীবীই তার চাকরি হারানোর মতো ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। যিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হবেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ পছন্দ করতে পারেন কিন্তু প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় তিনি ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করতে পারবেন না। সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ তার নেই।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন ব্যানারে সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবার প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে এরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকেন তার মতাদর্শের অনুসরণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন। ১৯৯০ সালে প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের পতন ঘটলে ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করে। সেই সময় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে জিয়া পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পরিষদের আবির্ভাব ঘটে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জিয়া পরিষদ এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের নামে পালাক্রমে প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। তবে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জিয়া পরিষদ বা বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যক্রম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ছিল; কিন্তু ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হবার পর সরকারি প্ররোচনায় প্রতিটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অফিসে বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠিত হয়। তারা বিপুল বিক্রমে প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে সরকারদলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে।

যারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অফিসে বঙ্গবন্ধু পরিষদ অথবা জিয়া পরিষদের নামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তারা পছন্দনীয় রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। দল ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে এদের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা নিশ্চুপ হয়ে থাকেন। অর্থাৎ এরা মধুলোভী। যারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অফিসে কর্মরত অবস্থায় দলীয় রাজনীতি চর্চা করেন তাদের সুকর্মের কারণে পছন্দনীয় দল ক্ষমতায় আসে না। অর্থাৎ নিজস্ব মতাদর্শের রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য তাদের সামান্যতম কোনো কৃতিত্ব নেই; কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকাকালীন এদের নানামুখী অপকর্মের কারণে দলীয় জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন হয়। নিজস্ব পছন্দনীয় রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে থাকলে এরা রাজনীতি চর্চা করেন না। কারণ তাহলে চাকরি হারানোর ভয় আছে।

কাজেই বলা যায়, যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় দলীয় রাজনীতি চর্চা করেন তারা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের শুভাকাঙ্ক্ষী নন। তারা সুযোগ সন্ধানী মাত্র। আরও সুস্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় দলীয় রাজনীতি চর্চা করেন তাদের একটি বড় অংশই অতীত অপকর্ম বা কৃত দুর্নীতি থেকে বাঁচার জন্য অথবা নতুন করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিত্তবৈভব গড়ে তোলার জন্যই প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে দলীয় রাজনীতি চর্চা করেন।

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল নানাভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে স্থবির করে দিয়েছে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর সরকারে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪) অনুষ্ঠানের সুযোগ পেয়েছিল। এসব নির্বাচনের কোনোটিই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত এবং একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাদের আমলে। এক সময় যে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে জানমালের ক্ষতি সাধন করেছিল সেই দলটিই নির্লজ্জের মতো কোর্টের দোহাই দিয়ে জনপ্রিয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সংবিধান থেকে বাদ দিয়েছিল।

শেখ পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠজনদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বে নিযুক্ত করে দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদে দলীয় সমর্থক ও আত্মীয়স্বজনদের বসিয়ে দুর্নীতির স্বর্ণ দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। বিতর্কিত এবং চরম দুর্নীতিবাজ আত্মীয়স্বজনকে বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আসীন রেখে দুর্নীতির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কেউ যদি ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান তাহলে তার কর্মকাণ্ডের দায়বদ্ধতা থাকে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে বলেছিলেন তার বাসার পিয়নও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজির গাড়ি চালন আবদুল মালেক হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। পিএসসির গাড়িচালক আবেদ আলি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। প্রতিটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল।

বিগত সরকারে সেই সুবিধাভোগীরা কিন্তু এখনো বিভিন্ন দায়িত্বে রয়ে গেছেন। বর্তমানে এমন একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না যেখানে দলীয়করণ, আত্মীয়করণের মাধ্যমে শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অবশ্য শুধু দলীয় পরিচয় থাকলেই হতো না সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতে হতো। শোনা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো। যারা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে নিয়োগ লাভ করতেন তাদের প্রাথমিক কাজ হতো উৎকোচ হিসেবে প্রদান করা অর্থ সুদে-আসলে তুলে নেয়া।

দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের পেছনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দলীয়করণ বহুলাংশে দায়ী। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে আমলারা ঘুষ গ্রহণ করেছেন ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর রাজনীতিবিদরা ঘুষ নিয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। দুবাইতে বাংলাদেশিদের ৫৩২টি এবং মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বাংলাদেশিদের ৩ হাজার ৬০০টি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব বাড়ির মালিকদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশই হচ্ছেন বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মকর্তাকে যে বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় তা দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড মেইটেন করে সংসার চালানোই কঠিন। তারা বিদেশে বাড়ি করেন কীভাবে? বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের যোগসূত্র রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আফিম খাইয়ে যেমন একজন মানুষকে নেশায় আচ্ছন্ন করে রাখা যায় তেমনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অবারিত দুর্নীতির সুযোগ দিয়ে তাদের আনুগত্য অর্জন করেছিল বিগত সরকার। বর্তমানে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পেছনে বিগত সরকারের পদলেহনকারীরা ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমলাতন্ত্র এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে যারা বিগত সরকার আমলে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালানো প্রয়োজন। যারা দুর্নীতিবাজ এবং নানাভাবে পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে সরকারের লেজুরবৃত্তি করেছেন তাদের অবিলম্বে পদচ্যুত করা যেতে পারে। পেছনে শত্রু রেখে যুদ্ধযাত্রা যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয় তেমনি দলকানা কর্মকর্তাদের স্বপদে বহাল রেখে কখনোই সঠিকভাবে প্রশাসন পরিচালনা সম্ভব নয়। বিপ্লবোত্তর প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। যারা বিগত সরকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করতেন তারাই প্রশাসনকে পরিকল্পিতভাবে স্থবির করে রেখেছে। আমলাতন্ত্র এবং প্রশাসন যদি আন্তরিকভাবে সরকারকে সহযোগিতা না করে তাহলে কোনো সরকারের পক্ষেই দেশের সমস্যা সমাধান এবং জনকল্যাণের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। মধ্যযুগের বিস্ময়কর প্রতিভাবান শাসক সম্রাট তুঘলক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল যুগের চেয়েও অগ্রগামী; কিন্তু তিনি আমলাতন্ত্রের সহযোগিতা পাননি। যে কারণে মোহাম্মদ বিন তুঘলকের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। আমরা বর্তমানে যে কাগজি মুদ্রা ব্যবহার করি তা উপমহাদেশে সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেছিলে মোহাম্মদ বিন তুঘলক।

বিগত সরকার আমলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন তাদের চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে। একইভাবে যারা চাকরিরত অবস্থায় দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন তাদের পেনশন সুবিধা বাতিল করা যেতে পারে। চাকরিবিধি এমনভাবে পরিবর্তন করা প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বপ্নেও দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হবার কল্পনা করতে না পারেন।

এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ