বন্যার আশঙ্কা: মোকাবিলায় অগ্রিম প্রস্তুতি জরুরি
দীর্ঘ তাপপ্রবাহের পর টানা বর্ষণে নাগরিক জীবনে যেমন স্বস্তি এসেছে, তেমনি নদী ও হাওর অঞ্চলের জনজীবনে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবারের ভারি বর্ষণ যেন কবি গুরুর ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’ গানের কথাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। প্রতি বছরই মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে এমন সময় ও পরিস্থিতিতে দেশে বন্যা আসে। হিমালয়ের পাদদেশে হাজার নদীর বঙ্গীয় বদ্বীপে এটি এক অনিবার্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের ভারি বৃষ্টিপাত নদীপথ গড়িয়ে এসে এখানে বন্যা ঘটায়। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। এরই মধ্যে টানা ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমোর, সুরমা, সোমেশ্বরী ও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমেশ্বরী, সুরমা আর পুরোনো সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
তা ছাড়া লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কয়েকটি এলাকায় বন্যার আশঙ্কা আছে। গত বছরের জুন মাসে সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয়ে প্রবল বর্ষণের ফলে ১৬ জুন ১ দিনের মধ্যেই সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। তখন এই দুই জেলার সড়ক, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়ে সারা দেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই সময় কয়েক লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু দালান ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল।
সরকারি হিসাব মতে, মাসব্যাপী এ বন্যায় জেলার ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এ বছর ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কার আগেভাগে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি, উদ্ধার তৎপরতা কীভাবে চলবে, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেমন হবে- এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। যদি বন্যা মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের অনেক সুনাম আছে। তবু সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
আমরা অতীতে দেখেছি, ভালোভাবে বন্যা মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতিকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার আভাব। তাই সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ, ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহ করা হলেও তা সমন্বয়হীনতার কারণে বন্যার্তদের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা পৌঁছাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।
আমাদের যা দরকার তা হলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, যাতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানো যায়। ত্রাণ ও চিকিৎসা দলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুৎ চালু করা।
মনে রাখতে হবে, সরকারি ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, গাফিলতি, অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আর বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সাধারণত পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত ওষুধ-পথ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে