Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

দেশজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

ম্প্রতি বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের করা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েকটি জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিকের ওপরে পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও ছাত্র আন্দোলনের নামে কোথাও কোথাও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। এসব ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিকেরও বেশী আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এমনকি এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঢাকার বাইরেও জারি করা হয় কারফিউ।

জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কক্সবাজার
কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৬-২০ জুলাই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় দায়ের করা ৬টি মামলায় প্রায় ২ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এসব মামলার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দায়ের করা দুটি মামলায় মোট ২৯৭ জনকে  আসামি করা হয়েছে।

গত ২১ জুলাই (সোমবার) কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমীর উদ্দিন। সেই মামলায় জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলাম হাসান ছাড়াও কক্সবাজার জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও কাউন্সিলর নাসিমা আক্তার বকুল, বিএনপি নেতা ও কাউন্সিলর ওসমান সরোয়ার টিপু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপন, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, আহ্বায়ক সারোয়ার রোমান, জামায়াত নেতা শহিদুল আলম বাহাদুর, লিয়াকত আলী ছাড়াও অনেক ছাত্রদল ও শিবিরকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়াও একইদিনে ( ২১ জুলাই) জেলা জাসদ কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ এনে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেন পৌর জাসদের সভাপতি মোহাম্মদ হোসাইন মাসু। এতে অজ্ঞাতনামাসহ ৮৪ জনকে আসামি করা হয়।

এর আগে ১৭ জুলাই (বুধবার) পুলিশের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সদর ও চকরিয়া থানায় দায়ের করা আরও ৩ মামলায় অজ্ঞাত ১ হাজার ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

তবে এই ৬ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চকরিয়া থানার ওসি শেখ নাদেম আলী ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রাকিবুজ্জামান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বরিশাল
ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত ৪ দিনে বরিশাল মহানগর ও জেলার ১০ উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের ১১০ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।

বরিশাল মহানগর ও জেলা পুলিশ জানিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় মহানগরীর চার থানায় ৬টি ও জেলার তিন থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট নয় মামলায় ১১০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক জানান, নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুরের মামলায় আসামি হিসেবে বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের করা মামলায় আসামি হিসেবে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কোতোয়ালী মডেল থানার জিআরও এনামুল হক জানান, নাশকতার মামলায় ওই দুজনসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে জিয়াউদ্দিন সিকদার পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া অপর তিন আসামি হলেন-নগরীর চার নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তসলিম, কামাল শিকদার, ফেরদৌস আহমেদ, মিরাজ উদ্দিন।

এয়ারপোর্ট থানার এসআই মিলি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- নিজামুল হাসান সুমন, শহীদ সরদার, জামাল শরীফ ও মোঃ সবুজ।

বন্দর থানার জিআরও মো. হারুন জানান, তার থানা এলাকা থেকে হালিম মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বরিশাল জেলার আদালত পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, বানারীপাড়া থানা এলাকা থেকে বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ময়মনসিংহ
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহে সংঘর্ষে দুই ওসিসহ ৭০-৮০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিআইজি মোঃ শাহ আবিদ হোসেন।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি এ তথ‍্য নিশ্চিত করে আরও বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ কোনো সাংঘর্ষিক আচরণে যায়নি। কিন্তু দুষ্কৃতকারীদের একটি অংশ এর ওপর ভর করে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, নাশকতার চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের ৭০-৮০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশ বক্স, সিসি ক‍্যামেরা এবং পুলিশের স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়েছে। শেরপুরে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে সদর থানার ওসি আহত হয়েছেন। জামালপুরে ট্রেন আটকে নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছে। গৌরীপুর থানার সাবেক ওসি সুমন চন্দ্র রায় আহত হয়ে ঢাকায় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রাজশাহী
ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে একক বা সঙ্গবদ্ধভাবে সকল প্রকার চলাচলের উপর তিন ঘন্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের জারি করা কারফিউ শিথিল সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগ, রাজনৈতিক শাখা-২ এর অনুসরণে রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা, জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে জারিকৃত সান্ধ্য আইন (কারফিউ) ২৬ জুলাই শুক্রবার দুপুর ১২টা হতে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। তবে বিকাল ৩টা হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সান্ধ্য আইন (কারফিউ) অব্যাহত থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বগুড়া
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সম্প্রতি বগুড়ায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা জেলা প্রশাসনের।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে আরও জানা গেছে, কোটা আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে এক কিশোরের (১৬) মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও পুলিশের সাথে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের টানা পাঁচ দিনের (১৬-২০ জুলাই) সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছেন অন্তত ২১ জন।


তবে সেনা মোতায়েনের পর গত ২১ জুলাই (রবিবার) থেকে জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২৫ জুলাই বগুড়ায় আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি দুর্বৃত্তদের হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেন।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় বগুড়ায় ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১৪ ও শেরপুর থানায় ১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ১৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৯৭ ও শেরপুর থানায় ৩৯ জন গ্রেপ্তার হন।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় অনেক ব্যবসায়ী বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ক্ষতির হিসাব এখনো করা হয়নি।

ডিসি আরও জানান, এ রকম সহিংসতা যেন আর না ঘটে, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।




মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ