তীব্র তাপপ্রবাহের মাঝে লোডশেডিং
পরনির্ভর জ্বালানিনীতির বিকল্প প্রয়োজন
সম্প্রতি দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব জায়গাতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসঙ্গে তাপ বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে, প্রকৃতিতে, জীব ও উদ্ভিদ জগতে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে জনজীবন অসহনীয় করে তুলেছে লোডশেডিং। খোদ রাজধানীতেও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে এ পরিস্থিতি আরও অসহনীয়। এখন সবাই একটু বৃষ্টির অপেক্ষায়।
গত ১৫-১৬ বছরে দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঈর্ষা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, গত দেড় দশকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে চরম পর্যায়ে, সে অনুযায়ী সরকারও সাধ্যমতো উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে; কিন্তু তবুও দেশজুড়ে চলছে লোডশেডিং।
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ওয়াদা করেছিল বর্তমান সরকার। সে অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছিল দেশ; কিন্তু হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ বিপর্যয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ যখন ক্ষতি সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দামের পাশাপাশি গ্যাস ও কয়লার দামও বেড়েছে কয়েক দফা। সে কারণে গত বছর লোডশেডিং হয়েছিল। এ বছরও শুরু হয়েছে লোডশেডিং।
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের যুদ্ধ যুগ-যুগান্তরের। আর এই যুদ্ধের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো তীব্র তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহে কাহিল হয়ে উঠছে জনজীবন। অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে উঠছে মানুষ। তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে প্রাণিকুল। কোনো কোনো পরিবারে শিশুরা ঠান্ডা ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রবীণরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাপপ্রবাহে শিশু, বয়স্ক ও কোমরবিডিটি (বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি) রোগীরা বেশি বিপাকে পড়ছেন। তাদের পরিচর্যায় তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে লোডশেডিং যদি আরও বেড়ে যায়, তাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে।
সচ্ছলদের কেনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বাইরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে গিয়ে সরকারের জ্বালানি ব্যয়ও বাড়ছে। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলছেন, এ হারে তাপ বৃদ্ধির ধারা চলতে থাকলে তার প্রভাব মোকাবিলা করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপরও তাপ বৃদ্ধির ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। সৃষ্টি হবে চরম তাপদাহ।
যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস বৈশ্বিক, তাই এর সমাধান ও ব্যবস্থাপনাও বৈশ্বিক হতে হবে। শুধু যদি বিশ্বব্যাপী ও পৃথক দেশের প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করে কার্যকর নীতি, পরিকল্পনা ও কার্যকর শাসন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তবেই কর্মপ্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে বহুতল ভবন, কংক্রিটের রাস্তা ও এসি ঢাকাকে একটি তপ্ত ভূখণ্ডে পরিণত করেছে। এ জন্য বিরূপ পরিস্থিতি বাড়ছে। তাই আমাদের সবার জন্য একটি টেকসই ও প্রতিকূলসহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি প্রয়োজন। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ সংকটে পরনির্ভর জ্বালানিনীতি থেকে দেশকে বের করে আনার জন্য নতুন উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে