Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

আমরা দাঁড়িয়ে আছি আগুনের চুল্লির ওপর: ধৈর্যধারণই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা

Kamrul  Ahsan

কামরুল আহসান

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

ণঅভ্যুত্থানের পর পর অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পরিস্থিতি এখন খোলা থেকে আগুনে, আগুন থেকে খোলায়। দিন যত যাচ্ছে, সলিমুল্লাহ খানের কথা ততই প্রমাণিত হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ ক্রমেই উত্তপ্ত থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ কথা সত্য যে, এত বড় একটি গণঅভ্যুত্থানের পর, দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার হঠানোর পর তেমন কোনো বড় অরাজক ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন পক্ষের দাবি-দাওয়া, আন্দোলন-সংগ্রামকে স্বাভাবিকই বলা যায়। অনেক দিন যারা বিভিন্নভাবে অবহেলিত, নিগৃহীত, অত্যাচারিত ও বঞ্চিত ছিলেন, তারাই নিজেদের প্রাপ্য আদায়ের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। যেমন শ্রমিকদের বিক্ষোভ বা চাকরি স্থায়ীকরণ বা বেতন আদায়ের দাবিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আন্দোলন; কিন্তু এই সপ্তাহে দেশে যা ঘটে গেল, তাতে দেশের পরিস্থিতি কোনোভাবেই শান্ত, স্বাভাবিক বলা যায় না।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই সপ্তাহে যা ঘটে গেল, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সামনে নামাজ আদায় ও গরু জবাই করার মধ্য দিয়ে উত্তেজনাকর এই সপ্তাহ শুরু। দেশের প্রথম সারির দুটি দৈনিক পত্রিকা বন্ধের দাবিতে ইসলামপন্থিদের একদল বিক্ষোভ করে। তাদের অভিযোগ পত্রিকা দুটি ভারতপন্থি। এরকম আরও অভিযোগ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই যে কোনো পক্ষের থাকতে পারে; কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে পত্রিকা দুটি বন্ধের দাবি তোলায় তারাও এই বিক্ষোভের বিপক্ষে চলে গেছেন, যারা আগে পত্রিকা দুটির নানা সমালোচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলেছে। অনেকে এমনো মন্তব্য করেছেন, এতে ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এমন বিষয় আন্দোলনের হাতিয়ার হতে পারে না।

তারপরই ঘটল ঢাকার তিন কলেজে ভয়াবহ সংঘর্ষ। সংঘর্ষে তিনজন মারা গেছেন এমন খবর সারা দেশেই একটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। পরে জানা গেল, সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন বটে; কিন্তু তিনজন নিহত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। তাহলে কারা কেন ছড়াল এই খবর? গত সপ্তাহে ছাত্রদের তাণ্ডব দেখা গেছে রাস্তায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ঢাকা কলেজ ও তিতুমীর কলেজের ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন চালানোর কারণে গত সপ্তাহজুড়ে ঢাকা শহর কার্যত স্থবির ছিল। এরপরই লেগে যায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে মারামারি। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ছাত্রদের নানা আন্দোলন-সংগ্রাম লেগেই আছে। এসব দেখে দেশের সাধারণ জনগণ থেকে সুধীমহল প্রশ্ন তুলছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের হয়তো যৌক্তিকতা আছে, বাস্তবতা আছে; কিন্তু শিক্ষার্থী যদি মাসের পর মাস এমন আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তাহলে পড়াশোনা করবে কখন?

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অনেকদিন বন্ধ ছিল। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ পেতেই দুমাস লেগে গেছে। এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস চললেও পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে বলা যাবে না। বিশেষ করে সরকারি কলেজগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, বিশেষত ঢাকা শহরে। এর মধ্যে অটোপাসের মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে , কদিন পরেই হয়তো শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা; কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাক্ষেত্র খুব ভালোভাবে চলছে বলা যাবে না।

এগুলোকেও হয়তো খুব বড় ধরনের ঘটনা বলা যাবে না। গণঅভ্যুত্থানের পর ছোটখাটো ঘটনা বলেই চালিয়ে যায়; কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে যা ঘটল, এটাকে আর কোনোভাবেই ছোট ঘটনা বলার সুযোগ নেই। গত সোমবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ইসকনের সাবেক নেতা বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। গত কয়েক দিন ধরেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস একাধিক সমাবেশের নেতৃত্ব দেন। তিনি দাবি করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হওয়া ‘নিপীড়নের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার অনেক কথাই নানা বিতর্কের জন্ম দেয়।

বিশেষ করে গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে একটি মিছিলের সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলার জের ধরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গত মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নেওয়ার সময় তার সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দুই ঘণ্টা ধরে এই সংঘর্ষ চলে। পুলিশ ও সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘর্ষ চলাকালে একজন আইনজীবী প্রাণ হারিয়েছেন। তার নাম সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫)। তিনি হাইকোর্ট বারের সদস্য ছিলেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সংঘর্ষ চলাকালে অন্য কয়েক আইনজীবীসহ প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৬ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খবর কিন্তু এতটুকুই। এ খবরের আড়ালে ছড়িয়ে পড়ে অনেক গুজব। এই ঘটনায় চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। সারা দেশের মানুষ একটা ভয়ংকর আতঙ্কের মধ্যে চলে যায়। কাল (২৭ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই বারবার একটাই আহ্বান জানান: ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন, কোনোরকম সাম্প্রদায়িক উসকানিতে কান দেবেন না। সরকার ও গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের পক্ষ থেকেও একই আহ্বান জানানো হয়। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর যদি কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ, কোনো প্রকার আঘাত আসে এবং রাষ্ট্রের প্রতি অবমাননা হয়, রাষ্ট্রদ্রোহের মতো ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে সরকার অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশের কোনো সম্প্রদায়কে শুধু সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারণে বঞ্চিত বা নিগ্রহের শিকার যাতে হতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

বলা যায় গণঅভ্যুত্থানের পর এটাই সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও ভয়ানক ঘটনা। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করার জন্য ভারতও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার এ উদ্বেগ জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুরের বিষয়টি আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি। বাংলাদেশে উগ্রপন্থিদের দ্বারা হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর একাধিক হামলার পর এ ঘটনা ঘটেছে। তবে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাশাপাশি চুরি ও ভাঙচুর এবং দেবতা ও মন্দিরের অপবিত্রতার একাধিক নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে।’

ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের পাল্টা জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে ভারত সরকারের বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ অভিহিত করে বলেছে, এ ধরনের বক্তব্য দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপন্থি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার চরম হতাশা এবং গভীর বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, কোনো বিশেষ মহল শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে, কারণ শ্রী চিন্ময় দাসকে সুনির্দিষ্ট চার্জের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করার জন্য প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের কবি ও ভাবুক ফরহাদ মজহার। কয়েক দিন আগেই তিনি চিন্ময় দাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন চট্টগ্রামে। চিন্ময় দাসের মুক্তি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অবিলম্বে মুক্তি দিন, সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ ধর্ম ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা করুন, আত্মঘাতী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করুন।

অনেকটা ফরহাদ মজহারের কণ্ঠস্বরেই শুনতে পাওয়া গেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় বুধবার বক্তব্য দেয়ার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই কয়টা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা এত দিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’

গত তিন মাসের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবের তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না, যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, আমরা সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।’

দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটা অনুমান করা যাচ্ছে যে, আমরা দাঁড়িয়ে আছি আগুনের চুল্লির ওপর। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা ভেতর-বাহির উভয় দিক থেকেই হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে চার মাসের মতো হয়, এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক হয়নি। নির্বাচন কবে হবে তার দিন-তারিখও ঠিক হয়নি; কিন্তু গঠিত হয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, সংস্কার হওয়ার আগেই কেন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেল? প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন না হলে কি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে? সংস্কারের জন্য ৬টি কমিশন গঠিত হয়েছে, আরও চারটি কমিশন গঠনের কথা হচ্ছে; কিন্তু তারা কী সংস্কার করবেন, করতে পারবেন এবং কতদিনের মধ্যে তাদের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য চাপ না দিলেও যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের তাগাদা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি চাপের মধ্যে আছে এটা বলাই বাহুল্য। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারেও তা বোঝা গেছে। তিনি এমনও বলেছেন যে, উপদেষ্টরা যত দ্রুত সম্ভব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। তার মানে কি উপদেষ্টরা দায়িত্ববোধের চেয়ে দায়িত্বের চাপ অনুভব করছেন বেশি?

পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের সাধারণত চার ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেখা গেছে। বিপ্লবী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সংস্কারমূলক বা ক্ষমতা হস্তান্তরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কারমূলক বা ক্ষমতা হস্তান্তরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই বলা যায়। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো মোটামুটি ঠিক করা, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক করা। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক সময় দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ঠিক করাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঁধে বর্তায়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ কতখানি ঠিক করতে পারবেন, তাও প্রশ্ন। কারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ একটি দেশের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংস্কার করছে, কিছু প্রতিষ্ঠানও ঠিক করছে; কিন্তু দেশের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের ওপর তাদের খুব প্রভাব বা হস্তক্ষেপ আছে বলা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সামগ্রিক রূপরেখা এখনো পাওয়া যায়নি, যার কারণে দেশের জনগণ এখনো বেশ সংশয়ে আছে বলা যায়। এদিকে ছাত্রদেরও একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা আমরা শুনছি। ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তাদের রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করছে। ফেব্রুয়ারি মাস আসতে আরও তিন মাস বাকি। তার মানে ধারণা করা যায়, আগামী ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে না। হয়তো আরও এক-দেড় বছর লাগতে পারে নির্বাচন হতে।

আমরা এখনো জানি না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে, না কি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে? দেশের সাধারণ মানুষ অনেক ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। এমন অবস্থায় দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উসকানিও এক ভয়াবহ ভবিষ্যৎকেই চিহ্নিত করে। সবাইকে সবার ধৈর্যধারণের আহ্বান জানানো ছাড়া যেন আর কিছু করার নেই। ধৈর্যধারণই এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বটে; কিন্তু কতদিন ধৈর্য ধরবে দেশের মানুষ? যেভাবে চারদিক থেকে আগুন জ্বলে উঠছে, কোন আগুনে কখন কোথায় কী পুড়ে যায়, সে ভয়েই তো এখন সবাই অস্থির।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ