Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ঢাকার খাল শুধু কাগজ-কলমে

উদ্ধারে আইনের প্রয়োগ জরুরি

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশের প্রাণ হলো নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়। অথচ এসবের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর শঙ্কা। একদিকে উজানে সীমান্তের ওপারে নদীতে ভারত সরকারের তৈরি করা বাঁধের কারণে আমাদের নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে পানির সংকট; অন্যদিকে দেশের মধ্যেই কোনো ধরনের নিয়মনীতি ছাড়াই নদ-নদী, খাল ও জলাশয় দখল করে ভরাটের কারণে বিপন্ন হচ্ছে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ। তা ছাড়া নানা ধরনের শিল্পবর্জ্যের দূষণে নদ-নদী, খাল ও জলাশয়ের প্রাণবৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। ফলে বহু নদ-নদী, খাল ও জলাশয় দেশের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।

গতকাল শনিবার (২৩ মার্চ) একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় অবস্থিত কাগজ-কলমে একটি খালের নাম মাণ্ডা। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি ‘মরা’ খাল নামে পরিচিত। এই খালের কোথাও আগাছা, কোথাও কচুরিপানা, আবার কোথাও বর্জ্যের স্তূপ। কিছু অংশ এমনভাবে ভরাট হয়েছে, দেখলে মনে হয় সবুজ মাঠ। দেড় বছর ধরে বর্জ্য অপসারণ না করায় এই খালে পানিপ্রবাহ নেই বললেই চলে।

এমন অবস্থা শুধু মাণ্ডা খালের নয় বরং ঢাকার জিরানী, শ্যামপুর ও কালুনগর খালের অবস্থাও ভয়াবহ। বর্ষার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বড় অংশের বৃষ্টির পানি মাণ্ডাসহ চারটি খাল হয়ে বালু নদ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ে। এই চার খালের বর্জ্য ও পলি অপসারণের পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ৮৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে; কিন্তু কাজ পুরোদমে শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে সিটি করপোরেশন। যে কারণে দেড় বছর ধরে চারটি খালের বর্জ্য অপসারণের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফল হচ্ছে, গত বছরও প্রবল বৃষ্টিতে অন্তত ছয়বার ডুবেছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর রাজধানীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধ থাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির বেশির ভাগ মূল সড়ক। সেদিন সড়কে অসংখ্য যানবাহন বিকল হয়ে যায়।

বৃষ্টির পানি নর্দমা হয়ে খালের মাধ্যমে নদ-নদীতে যাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে বৃষ্টির পানি ক্যাচপিটের (নালার ওপরের ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা) মাধ্যমে সড়কের নিচে পানিনিষ্কাশনের নালায় যায়। বিভিন্ন সড়কে সিটি করপোরেশনের আওতায় সড়ক ও ফুটপাত সংস্কারকাজের কারণে বহু ক্যাচপিট এবং নালার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা বর্জ্য ও বালু জমেও নালার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এসব নালা পরিষ্কারের কাজটি নিয়মিত করতে হয়। সিটি করপোরেশন কাজটি কতটা দক্ষতার সঙ্গে করে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা নির্বাচনি ইশতেহারে বলেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়র হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর হতে চলছে। বিভিন্ন সময়ে জলাবদ্ধতা দূর করার বিষয়ে তিনি নানা ধরনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। যেমন গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পানিনিষ্কাশন হবে; কিন্তু গত বর্ষায় ভারী বৃষ্টির পর ঢাকার কিছু এলাকার সড়ক ঘণ্টার পর ঘণ্টা তলিয়ে ছিল।

নদী ও খাল দূষণের ফলে কোনো না কোনোভাবে মানুষই ক্ষতির শিকার হবে। বিশেষ করে নর্দমার বর্জ্য মানব দেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। আমরা দেখেছি, পরিবেশ সুরক্ষায় দেশে আইন থাকলেও তা যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। কারণ খাল দখল ও দূষণকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের নদী, খাল ও পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে, পরিবেশ যতটা বিপন্ন হবে, ঠিক আমরাও ততটা বিপন্ন হবো।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ