Views Bangladesh Logo

৮ বছরের আরিয়েত্তির বিশ্বজয়

তার বয়স মাত্র ৮ বছর। এই বয়সেই রোবট বানাচ্ছে, রোবট তৈরি করছে। এই কারিগরি থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বিশ্ব জয় করে লাল-সবুজের পতাকা উড়ালো ছোট্ট মেয়েটি। নাম তার আরিয়েত্তি ইসলাম।

গত ১৭ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত বুসান শহরে বসেছিল ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের আসর। প্রতিযোগিতায় দুটি স্বর্ণ, চারটি রৌপ্য ও চারটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ দলের হয়ে আরিয়েত্তি পেয়েছেন একটি স্বর্ণ ও একটি রৌপ্য পদক।

আরিয়েত্তি মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিন থেকে চার বছর বয়সে বাসায় কিছু রোবটের উপকরণ ছিল। সেগুলো দেখেই তার মনে রোবট নিয়ে কৌতূহল জাগে, আগ্রহ বাড়ে রোবট কীভাবে তৈরি করা যায়।

আরিয়েত্তির বাবা শামীম রেজা বলেন, ‘আমার ডিভাইসগুলো খুবই কার্যকর ছিল। সে জিজ্ঞেস করতো যে, কীভাবে এই গ্যাপটা তৈরি করা যায় বা এই প্রোগ্রামটা তৈরি করা যায়। এরপর ইলেকটনিক্সে কীভাবে এলইডি জ্বালানো যায়, কীভারে রোবট কাজ করে- এগুলো আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করতো।’

এরপর শামীম রেজা তার মেয়েকে ভিডিওএসএনের (বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক) ল্যাবে নিয়ে যান। ভিডিওএসএনে একটি ওয়ার্কশপ করে আরিয়েত্তি। এখানে গিয়েই তার আরো আগ্রহ বাড়ে। কারণ সেখানে মনে যা আসে, তা বানানো যায়। নতুন কিছু করা যায়।

আরিয়েত্তির মা কামরুন্নাহার দিপা জানান, আরিয়েত্তি অন্য বাচ্চাদের চেয়ে আলাদা। তাকে বই পড়ে শোনানো লাগতো। হাতে বই থাকতো তার।

কামরুন্নাহার দিপা বলেন, ‘আমি লেখালেখি করি। ভয়েস টাইপ করে লিখি। সে এটা দেখে শিখেছে। তাকে কিছু কিছু শেখানো লাগে না। কিছু দেখে দ্রুত সেটি শিখে ফেলে এবং বুঝতে পারে যে, এটা এভাবে করা যায়। একদিন ছোট একটি গল্প লিখে এনে আমাকে বলছে যে, মাম্মি, এটা আমি লিখেছি। সেই গল্পটার নাম ছিল যে, খরগোশ খাস খাবে। আমি দেখে খুবই অবাক হয়ে গেছি যে, গল্পটি ছোট করে লিখেছে। কিন্তু, এটা শুরু, মাঝের যে একটা অংশ বর্ণনা, গল্পের যে একটা ফিনিশিং হয়, সেভাবে সে সাজিয়ে সুন্দর করে একটা গল্প লিখেছে।’

এরপর আরেত্তির বাবা শামীম রেজা বলেন, ‘সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকস বইটা কিনে। দেখি যে বইটা পড়ে পড়ে ও নিজেই ওখানকার প্রজেক্টগুলো করতে থাকে। সে ওখান থেকে জানতে পারে যে, বাংলাদেশে কারা রোবটিকসের ওপর ওয়ার্কসপ করায়, কারা কাজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রোবটিকসে অংশ গ্রহণ করে, কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করা যায়, এটা সে জানতে পারে।’

সেপ্টেম্বর মাসে রেজিষ্ট্রেশন করেন আরিয়েত্তি। দুইটা ধাপ পার করা পর জাতীয় পর্যায়ের রাউন্ডে নাম লেখায় এই প্রতিভাবান ছোট মেয়েটি। সেখানে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। আন্তর্জাতিক রোবটিকসে ২১টি হাই-পারফরম্যান্স ক্যাম্প হয়েছে। এরপর প্রতিযোগিতায় অংশ নেন আরিয়েত্তি। একেক একটি ধাপ সফলতার সঙ্গে পার করে। এরপর বিশ্ব অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ দলে যুক্ত হয় মেয়টি। কোরিয়াতে প্রতিযোগিতা হওয়ার কারণে তার আগ্রহ আরো বেশি বেড়ে যায়।

আরিয়েত্তির অর্জনের প্রসঙ্গে বিডিওএসএনের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সভাপতি অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, ‘মাত্র ৮ বছর বয়সে একাই সে একটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে সেখানে স্বর্ণ পদক পেয়েছে। আমরা জানি যে, এই দলে এক থেকে তিনজন সদস্য থাকতে পারে। সেখানেও সে কিন্তু একাই ছিল। তবে শুধু যে একা অংশগ্রহণ করেছে, সেটা নয়, রোবট তৈরির দক্ষতার দারুণ ভাবে উপস্থাপন করেছে। নির্বাচকদের নজর কাড়া, প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, একটি ৮ বছর বয়সী বাচ্চা তার প্রতিটা বিষয় দক্ষতার সঙ্গে প্রমাণ করেছে। এটা আসলে খুবই অবিশ্বাস্য।’

রোবট অলিম্পিয়াডে অনেক চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে আরেত্তিকে। লাফিফা জামাল বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় পাওয়া। বিশেষ করে আমাদের নারীদের। কারণ এসব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামুলক ভাবে অনেক কম। কিন্তু রোবট অলিম্পিয়াডের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, নারীদের অংশগ্রহণ যেমন বাড়ছে, তারা সাফল্যও নিয়ে আসছে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ