Views Bangladesh Logo

সমাজ-রাষ্ট্রে নৃশংসতা বাড়ছে: কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকার জরুরি

মাদের সমাজ-রাষ্ট্র যে দিন দিন অসহিষ্ণু-অমানবিক, সহিংস ও নৃশংস হয়ে পড়ছে তার নজির প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনায় ফুটে উঠছে। খুন-হত্যা-ধর্ষণ-আত্মহত্যা লেগেই আছে। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পিতা-মাতার হাতে সন্তান খুন। গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) এমনই এক ঘটনা জানা গেল সংবাদমাধ্যমে।


গাজীপুরের টঙ্গীতে মালিহা আক্তার (৬) ও মো. আবদুল্লাহ (৪) নামে দুই ভাইবোনকে ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে তাদের মা সালেহা বেগম কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে কেন বা কী কারণে হত্যা করেছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নিহত দুই শিশুর বাবার নাম আবদুল বাতেন মিয়া। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা। পরিবার নিয়ে আরিচপুর জামাইবাজার এলাকার সেতু ভিলা নামে আটতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন বাতেন। পুলিশ জানিয়েছে, টঙ্গীর আরিচপুরের যে বাড়িতে ওই পরিবার ভাড়া থাকত, সেখানে আশপাশে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এসব ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা গেছে, ঘটনাটি যে সময়ে ঘটেছে সেই সময়ের মধ্যে তাদের ঘরে বা ফ্ল্যাটে সালেহা বেগম ছাড়া আর কেউ যাতায়াত করেননি। এ ছাড়া ঘটনার পর সালেহা নিজেই পাশের বাড়ি থেকে তার দুই দেবরকে ডেকে নিয়ে আসেন। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় সন্ধ্যায় তাকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় তার হাতে কাটা দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। একপর্যায়ে মধ্যরাতে সালেহা বেগম তার দুই সন্তানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।

কী কারণে মা তার আপন সন্তানকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে পারেন? পুলিশ জানায়, সালেহা বেগমের স্বজনরা জানিয়েছেন যে তিনি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন; কিন্তু মানসিক সমস্যা আছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। পুলিশ এখন তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি, পারিবারিক অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও পরকীয়ার কারণে সন্তান বলি হয়েছে। এটা কোনোভাবেই সুস্থ সমাজের পরিচয় নয়। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখারও আর সুযোগ নেই। মানুষের পাশবিকতা কোন পর্যায়ে গেলে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এসব ঘটনা জেনে অন্য মানুষও মানসিক চাপের শিকার হন।

এসব নৃশংস ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। মানুষের মানসিক দিক নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। শুধু মানসিক সমস্যা থাকলেই মা সন্তানদের কুপিয়ে মেরে ফেলবেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর পেছনের আরও গভীর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ না জানা গেলে প্রতিকারও করা যাবে না। এসব শুধু আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তার জন্য দরকার সমাজের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা। মূল্যবোধ বাড়ানো। আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এটা থামানোর উদ্যোগ নিতে হবে।


এর দোষ কোনো ব্যক্তি বিশেষের কাঁধে দিলে হবে না, সমাজের প্রতিটা মানুষকেই এর দায় নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি দায় নিতে হবে রাষ্ট্রকেই। আধুনিক রাষ্ট্রে প্রতিটা ব্যক্তির অসুস্থতা, ব্যর্থতার দায়ভার একমাত্র রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে অবশ্যই সেরকম সহনশীল সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে মায়ের হাতে সন্তান খুন হবে না। পিতা-মাতার কাছে সন্তান নিরাপদ থাকবে সেরকম এক সুন্দর সমাজ-রাষ্ট্রই আমাদের কাম্য।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ