সারাবিশ্ব থেকে করোনার টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা অ্যাস্ট্রাজেনেকার
বিশ্বব্যাপী করোনা-প্রতিরোধী টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এর আগে আদালতের নথিতে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছিল যে, তাদের তৈরি করোনা-প্রতিরোধী টিকা বিপজ্জনক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তবে সেটা খুবই বিরল বলে উল্লেখ করা হয়। দ্য টেলিগ্রাফ এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাক্সজেভরিয়া করোনা-প্রতিরোধী টিকার অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই তা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ গ্রহণ করেছে।
তবে সম্প্রতি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক ঘোষণায় জানিয়েছে যে, তাদের তৈরি করোনার সব টিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সংস্থাটি স্বেচ্ছায় তাদের করোনা-প্রতিরোধী টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে আর এই টিকা ব্যবহার করা যাবে না। গত ৫ মার্চ টিকা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল এবং ৭ মে থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, বাণিজ্যিক কারণে তাদের তৈরি করোনা-প্রতিরোধী টিকা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, আপাতত এই টিকা আর তৈরি বা সরবরাহ করার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।
গত কয়েক মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর আসতে থাকে। অনেকেরই রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ডাক্তারি ভাষায় যাকে টিটিএস বলা হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে দায়ের করা আদালতের নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে যে, তাদের তৈরি টিকা থেকে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তবে তা খুবই বিরল বলে জানায় সংস্থাটি।
টিটিএস-এর কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং প্ল্যাটিলেট কমে যায়। যুক্তরাজ্যে এ রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটিশ হাইকোর্টে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে।
কিন্তু অ্যাস্ট্রাজেনেকা জোর দিয়ে বলেছে, ভ্যাকসিন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আদালতের মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বলছে, এটা কাকতালীয় ঘটনা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের তৈরি করোনা-প্রতিরোধী টিকার অবদান নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। বিশ্বে করোনা মহামারি শেষ করার ক্ষেত্রে তাদের এই টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সংস্থাটির দাবি, করোনার প্রথম বছরেই ৬৫ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে তাদের তৈরি টিকা। বিশ্বব্যাপী তারা ৩০০ কোটি ডোজ সরবরাহ করেছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, করোনা-প্রতিরোধী একাধিক টিকা তৈরি হওয়ায় সর্বশেষ ভ্যাকসিনগুলো বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে ভ্যাক্সজেভরিয়ার চাহিদা কমে গেছে, যা আর তৈরি বা সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই তারা এই টিকা বাজারজাতের অনুমোদন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে