Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি আটাবের

Senior  reporter

সিনিয়র রিপোর্টার

শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

গ্রুপ বুকিংকে এয়ার টিকিট বাজারে অস্থিরতা এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ উল্লেখ করে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার নয়টি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনে এক হোটেলে ‘ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট' বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এজেন্সি ব্যবসায় শৃঙ্খলা ও সমতা আনা এবং বৈষম্য দূর করারও দাবি জানায় সংগঠনটি।

লিখিত বক্তব্যে আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন রুটের সিট যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট নম্বর ছাড়া পিএনআর তৈরির মাধ্যমে ফ্লাইটের দুই বা তিন মাস আগেই ব্লক ও টিকিট মজুতদারি করা হয়।

ব্লক সিটগুলো এয়ারলাইন্সগুলোই নির্ধারিত নির্দিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে সরবরাহ করে বলেও অভিযোগ তার।

আবদুস সালাম আরেফ বলেন, বিশেষ করে কম মূল্যের সিটগুলো গ্রুপ বুকিংয়ে ব্লক করায় অন্য ট্রাভেল এজেন্ট বা যাত্রীরা ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে কম মূল্যের টিকিট পান না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সিটের সংকট তৈরি ও উচ্চমূল্যে টিকিট বিক্রি করা হয়। অনৈতিকভাবে সিন্ডিকেট গড়ে গ্রুপ টিকিটিংয়ে টাকা বিনিয়োগে টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে লাভবান হচ্ছেন কিছু এজেন্ট।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো এয়ারলাইন্স থেকে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ কমিশন পেতে পারে। তাই এজেন্সির দেওয়া ছাড় কোনোভাবেই ৭ শতাংশের বেশি হতে পারে না। অথচ কোনো কোনো অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি প্রিডেটরি প্রাইসিং এর মাধ্যমে প্রকাশ্যে তাদের পোর্টালে গ্রাহকদেরকে ১৪ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ছাড় অফার এবং গ্রাহক আর্কষণে অসুস্থ, অসম প্রতিযোগিতা করছে। কম মূল্যের টিকিট অফারে কোনো কোনো সময় রি-ইস্যু, রিফান্ড এর সুযোগ থাকে না। ফলে যাত্রী অনেক ক্ষেত্রে এসব টিকিট কিনে নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন।

অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে পাশের দেশগুলোতে সরকারি নীতিমালা থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণে টিকিট মার্কেটে অনিয়ম, বৈষম্য ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিদেশি এপিআই ও বিদেশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকেট বিক্রি না করায় মার্কেটে টিকিটের মূল্যে তারতম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় টিকিট কেনা-বেচায় বৈধ চ্যানেলে পেমেন্ট বা টিকিট বিক্রিত অর্থ লেনদেনের সুযোগ থাকে না। এতে বাংলাদেশ সরকার বিক্রিত টিকিটের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় ও বৈদেশিক মূদ্রা অবৈধভাবে পাচার হয়ে যায়।

দেশি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের সাথে বিদেশি এজেন্সির এপিআই সংযুক্ত আছে বলেও দাবি করেন আটাব সভাপতি।

'ট্রাভেল এজেন্সি রেজিস্ট্রেশন এন্ড কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০২১' অনুসারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ছাড়া ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। তবে হাজার হাজার ভূয়া ট্রাভেল এজেন্সি বিভিন্ন অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর আইডি ব্যবহার করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ওটিএগুলো তাদের লগইন আইডি অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে দেওয়ার পাশাপাশি বৈধ ট্রাভেল এজেন্সির স্টাফদের নীতিহীনভাবে গোপনে যোগান দিচ্ছে। ফলে ওই স্টাফরা যে এজেন্সিতে কর্মরত, সেই এজেন্সির টিকিট বিক্রি না করে ওটিএগুলোর টিকিট বিক্রি করে সেই এজেন্সিগুলোর ব্যবসার ক্ষতি করছেন।

অবৈধ এই ব্যবসা বন্ধ না করলে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরাও এক পর্যায়ে লাইসেন্সবিহীন হয়ে ব্যবসা পরিচালিত করতে অনুপ্রানিত হবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

অগ্রিম টাকা ডিপোজিট অথবা অগ্রিম পেমেন্টের বিপরীতে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়াকে টিকিট মার্কেট সিন্ডিকেট ও ব্যবসায় অবৈধ, অসম, অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টির আরেকটি কৌশল বলেও উল্লেখ করেন আটাব সভাপতি আরেফ।

তিনি বলেন, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো মার্কেট একচেটিয়া দখলে নেয়ার লক্ষ্যে মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাকের চটকদার প্রলোভন দেখিয়ে যাত্রী ও ছোট ছোট এজেন্সিগুলে থেকে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মার্কেটে অসামঞ্জস্য তৈরি হচ্ছে।

অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর (ওটিএ) এয়ারলাইন্স নির্ধারিত প্রকৃত মূল্যের চেয়েও কম মূল্য, আকর্ষণীয় অফার ও ছাড়ের ফাঁদে পড়ে এয়ার টিকিট কিনে প্রতারিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এভাবে অগ্রিম অর্থ আদায় করে হালট্রিপ, টিকিট২৪.কম, লেটস ফ্লাইসহ অনেক এজেন্সির লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাই দ্রুত অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) ব্যবসা পরিচালনার যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি এয়ার টিকেটের মজুতদারী ও সিন্ডিকেট বন্ধ করে গ্রুপ টিকিটিং এর নীতিমালা / নির্দেশনা প্রদান, টিকিটের গায়ে এজেন্সির নাম, যোগাযোগের ফোন নম্বর, টিকেটের মূল্য উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা, বিদেশি ওয়েবসাইট বা এপিআইগুলো যেন বাংলাদেশে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য বিদেশি ওয়েবসাইট ব্লক করা ও অর্থপাচার বন্ধ করাসহ নয়টি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, এসব বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন করা না গেলে এই সেক্টরের শৃঙ্খলা থাকবে না। নিবন্ধনহীন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর টিকিট দেওয়ার নামে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াও বন্ধ হবে না'।

তিনি বলেন, 'আমাদের কাজ হলো সরকারকে অনিয়ম-অন্যায় দেখিয়ে দেওয়া। কাজ করবেন তারা। আমরা আশা করছি, এই নয় বিষয়ের ওপর সরকার গুরুত্ব দেবে এবং এ সেক্টরের যে সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি তা দূর করতে উদ্যোগী হবে'।

লাইসেন্সবিহীন কোনো ভুয়া এজেন্ট প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা করতে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) যেন লগইন আইডি না দেয়, সেজন্যও দ্রুত নির্দেশনা দেবে সরকার, এমন আশাও ব্যক্ত করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন আটাবের মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান হিরো, মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান খান নেওয়াজ, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর রহমান প্রমুখ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ