লাগামহীন মূল্যস্ফীতির হাত থেকে সুরক্ষা দিতে হবে
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবানুগ বলে উল্লেখ করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান। তবে তিনি আরও বলেছেন, এই প্রস্তাবনাগুলোকে আরও ন্যায়ানুগ করার সুযোগ রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবানুগ বলে উল্লেখ করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান। তবে তিনি আরও বলেছেন, এই প্রস্তাবনাগুলোকে আরও ন্যায়ানুগ করার সুযোগ রয়েছে।
সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে যে অল্প কিছু দেশ, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হওয়ার পরও পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। সমস্ত শান্তিপূর্ণ আলোচনা ব্যর্থ হয়, যার ফলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের নামে ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তান ছিল একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। অসাম্য ও অবিচারের কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্র দুই টুকরো হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
রপ্তানি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। আমাদের অর্থনীতি এখন যে রূপ নিয়েছে, তা আসলে ভারতের উন্নয়নের যে ধারা সেটি নয়। আমাদের উন্নয়নের ধারাটি হচ্ছে কার্যত সনাতনি। ম্যানুফ্যাকচারিং খাত নির্ভর ধারা। যেসব দেশ উন্নত হয়েছে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন তারা মূলত ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ওপর ভর করেই উন্নত হয়েছে। পূর্ব এশীয় দেশগুলো যেমন সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এগুলোকে ইস্ট এশিয়ান মিরাকল বলা হয়। এসব দেশও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কৌশল রচনা করে চলেছে।
বাংলাদেশের রাপ্তানি বাণিজ্যের আর একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আমরা সীমিতসংখ্যক দেশকে কেন্দ্র করেই বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছি। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর অতিমাত্রায় নিভরশীল হয়ে পড়েছে। অথচ আরও অনেক দেশ ও অঞ্চল আছে যেখানে চেষ্টা করলেই আমাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করা যায়। পূর্ব ইউরোপীয়দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি চমৎকার সুযোগ রয়েছে। রাশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ জন্য আমাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো পণ্য রপ্তানির বাজার অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আশার কথা জাপানসহ নয়া ডেস্টিনেশনে রপ্তানির পরিমাণ হ্রাস বেশ বাড়ছে।
যে অঞ্চল নিয়ে আজকের বাংলাদেশ সেখানে ভাষা-বিতর্কের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তা সত্ত্বেও ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে আছে বেশির ভাগ বাঙালির কাছে। তবে এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সময়টিকেই ঘিরে বলে বেশিরভাগ গবেষকদের লেখায় উঠে এসেছে। এই আন্দোলনকে নিছক বাংলা ভাষার মর্যাদার লড়াই মনে করলে সবটা বলা হবে না। ১৯৪৮ সালের শুরু থেকেই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব-বাংলার উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণির একজন প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দিলেও তার সঙ্গে গভীর সংযোগ ছিল এদেশের কৃষক, শ্রমিক ও নিম্নমধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের। তাই তো একুশে ফেব্রুয়ারির গণবিস্ফোরণের প্রথম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার দাবিতে ছিল না, সেটা ছিল আমাদের জীবন-মরণের লড়াই। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আমরা খাদ্য চাই, বস্ত্র চাই, আশ্রয় চাই, নাগরিক অধিকার চাই। আমরা কথা বলার অধিকার চাই, শোষণমুক্ত সমাজ চাই।’ (‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’, প্রতিবেদন নং ৪৭, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩)।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যে অর্জন করেছে, তা বৈরী রাজনীতি সত্ত্বেও এক কথায় চমকপ্রদ। এ কথা ঠিক যে, দীর্ঘ একটা সময় মুক্তিযুদ্ধের যে অর্থনীতি বাংলাদেশ চালু করেছিল, তা ওই রাজনৈতিক চাপে বিপর্যস্ত এবং বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই সময়টায় যে গরিব হিতৈষী, কৃষিবান্ধব, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাবান্ধব যে অর্থনীতি বাংলাদেশে চালু হয়েছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেটা ১৯৭৫-পরবতী সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। মাত্র ৯৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে যে অর্থনীতি যাত্রা শুরু করেছিল, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাড়ে তিন বছরেই তা প্রায় ২৬০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তার শারীরিক অনুপস্থিতিতে দেশ আবারও পিছিয়ে যেতে থাকে। অর্থনীতি উল্টোপথে চলতে শুরু করে। মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় পরের বছরই (১৯৭৬) ১৩৮ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। পরের বছরে তা আরও একটু কমে ১২৮ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। দীর্ঘ