নিবন্ধ
শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শনে স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির যে ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন, তার প্রধান আর্কিটেক্ট হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা এবং একই বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন এবং ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তার এই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরে দেশে এসে তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে ভাষণ দেন, সেখানেও ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতির ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। এগুলোই ছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি বা ফাউন্ডেশন। বর্তমান সরকারও বঙ্গবন্ধু অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু একাধিকবার বলেছেন, বাংলাদেশ হবে প্রচ্যের সুইজারল্যান্ড। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু বলতেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল কাঠামোই হবে, ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি শত্রুতা নয়। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি তৈরি করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শুধু মুখেই এ কথা বলেননি। তিনি তার পররাষ্ট্রনীতিকে স্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের ২৫নং ধারায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির স্বরূপ বা বৈদেশিক সম্পর্কে ভিত্তি কী হবে, তার একটি ধারণা দেয়া হয়েছে। সেখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যেসব মৌল নীতি অনুসরণ করা হবে, তা হলো জোট নিরপেক্ষতা, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যে সব দেশ বা জনগোষ্ঠী নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের সমর্থন দেয়া। ১৯৭১-১৯৭২ সালের বাস্তবতায় বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদ একটি বড় মানবিক সমস্যা ছিল। বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদের বিরোধিতা করাও বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় ধরনের অঙ্গীকার ছিল। এ ছাড়া কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা অর্থাৎ প্রত্যেকটি দেশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাও বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল।