আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখন যা করতে হবে
আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখন যা করতে হবে
আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখন যা করতে হবে
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উৎপাদনে মন্থরগতি, আমদানি হ্রাস ও সরবরাহ চেইনে বিপত্তি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সাধারণত ২০ থেকে ২২ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা অবহিত ছিলাম। এখন তা বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কার্তিক মাস চলছে। এটি গ্রাম-বাংলায় অভাবের মাস। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ সময়টাকে বলা হতো মঙ্গাকাল। এ সময় মাঠে কাজ থাকে কম। হ্রাস পায় কৃষি শ্রমিকদের আয়। ক্ষেতে আমন ধান থাকে বাড়ন্ত অবস্থায়। অন্য ফসলের সমারোহ থাকে কম। এ সময় গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির সরবরাহ হ্রাস পেয়ে নেমে আসে তলানীতে। শীলকালীন সবজি আসতে শুরু করে কার্তিকের শেষে। এর সরবরাহ বাড়ে হেমন্তের শেষভাগে, অগ্রহায়ণে। এ সময় কৃষিজাত পণ্যের মূল্য থাকে চড়া। তাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি পায়। নুন আনতে তাদের পান্তা ফুরায়। অনেক সময় বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য। কখনো অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। দেশের গরিব মানুষের আহাজারি তখন মরা কার্তিকের বিলাপের মতো শোনায়।
ড. জাহাঙ্গীর আলম, দেশব্যাপী কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং গবেষক হিসেবেই পরিচিত। বর্তমানে তিনি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের উপাচার্য ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি দেশের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ মুহূর্তে কি ধরনের পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেসব বিষয়ে তিনি ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর মুখোমুখি হয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কে এম জাহিদ।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। আকস্মিক এই বন্যায় এরই মধ্যে ভেসেছে ১১টি জেলা। তার আশপাশের জেলাগুলোতেও রয়েছে বন্যার প্রভাব। তাতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৩ জন। দুর্বিসহ ক্ষুধা আর রোগ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আরও অসংখ্য মানুষ। যারা পেরেছে, তারা অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থানে, হাটে, স্কুলে, বাঁধে, বড় সড়কে কিংবা রেল স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে। যারা পারেনি, তাদের চোখের পানি বন্যার পানির সঙ্গে মিশে হয়েছে একাকার। তাদের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। পুকুর পরিণত হয়েছে অথৈ শায়রে। মাছ, হাঁস-মুরগি, গৃহপালিত পশু ভেসে গেছে সবই। তাদের খাদ্যের অভাব, সুপেয় পানির অভাব, ওষুধের অভাব, কাপড়ের অভাব বন্যাকবলিত এলাকায় তারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কেউ কেউ আকাশের পানে তাকিয়ে তাদের সৃষ্টি ও পালনকর্তাকে ডাকছে।
বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের উৎপাদন লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে বছরে গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ হারে। তারপরও বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমরা আমদানি করছি প্রতি বছর। এর মধ্যে আছে চাল, গম ও ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য। শুধু দানাদার খাদ্যশস্যের আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন। এর সঙ্গে অন্যান্য কৃষিপণ্য যেমন ডাল, তেলবীজ, চিনি, মসলা ও দুগ্ধজাত পণ্য যোগ করা হলে মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ থেকে ১০০ লাখ টন। টাকার অঙ্কে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা। তারপরও দেশে খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতি আছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি।