Views Bangladesh Logo
author image

এম এ খালেক

  • অর্থনীতি বিষয়ক লেখক

  • থেকে

অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক

প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত করা না হলে স্থবিরতা কাটবে না
প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত করা না হলে স্থবিরতা কাটবে না

প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত করা না হলে স্থবিরতা কাটবে না

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা এবং সরকার- এই চারটি আবশ্যিক উপকরণের সমন্বয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। এই উপকরণগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং কোনো একটি ব্যতীত আধুনিক এবং পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। যে চারটি উপকরণের সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং একমাত্র পরিবর্তনশীল উপকরণ হচ্ছে সরকার। সরকার দেশের মালিক নন, দেশের জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমানতদার মাত্র। সরকার আসবে সরকার যাবে; কিন্তু রাষ্ট্রের অন্য তিনটি উপকরণ অপরিবর্তনীয় থাকবে। সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকবে কি থাকবে না তা নির্ভর করে সাধারণ মানুষের চাওয়ার ওপর। কোনো কারণে দেশের নাগরিকরা যদি সরকারের প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয় তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা শক্তিশালী সরকারকেও পরিবর্তিত করতে পারে।

বাস্তবতার ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে
বাস্তবতার ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে

বাস্তবতার ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে

সরকারি সমর্থনপুষ্ট এই পরিবারটি দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অভিশাপ হিসেবে কাজ করেছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাত উদ্ধারের জন্য ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোনো কোনো ব্যাংকেও সমস্যা রয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যাতে ব্যাংকিং খাতে কোনো রকম প্রভাব ফেলতে না পারে তা নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। গভর্নর অবশ্য এটা সুস্পষ্টভাবে বলেননি যেসব ব্যাংক বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না তাদের পরিণতি কী হবে বা তাদের কীভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে বিদায় করা হবে। তবে গভর্নরের বক্তব্যে এটা সুস্পষ্ট যে, দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১০ ফেব্রুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এটি ছিল চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) দ্বিতীয় এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মুদ্রানীতি। ঘোষিত মুদ্রানীতি নিয়ে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষ আগ্রহ প্রত্যক্ষ করা গেছে। তবে সবাই ধারণা করেছিলেন প্রস্তাবিত মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হতে পারে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ঘোষিত মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক বলা যেতে পারে। কারণ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এটা বিগত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থাৎ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি এখন অনেকটাই মন্থর হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আহরণের হারও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আহরণের পরিমাণ কমেছে ৭১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার

সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন
সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ চারটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জ্বালানি উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে লেখা এক যৌথ পত্রের মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে শিল্প-কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পণ্য উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাতে পারে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তাদের পত্রে আরও উল্লেখ করেছেন, গত ৫ বছরে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ২৮৬ শতাংশ, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে ৬৮ শতাংশ। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে ৫৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বর্ধন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে ৯ শতাংশ। উচ্চ মূল্য দিয়েও প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করেছে। অধিকাংশ শিল্প-কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় আগামীতে শিল্প সেক্টর, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে দুরবস্থা নেমে আসতে পারে।

টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই
টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই

টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই

প্রতিটি রাষ্ট্রেরই লক্ষ্য থাকে কীভাবে দ্রুত এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যায়। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সর্বাধিক জনকল্যাণ সাধন এবং দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়াই একটি সরকারের মূল দায়িত্ব। যে সরকার এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে সমাজের সর্বস্তরে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে পারে, সেই সরকারই জনকল্যাণমূলক সরকার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অনেকের মনে এমন একটি ধারণা আছে যে, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা গেলেই উন্নয়ন অর্জনের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে; কিন্তু এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কারণ উন্নয়ন বলতে শুধু একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বুঝায় না। উন্নয়ন হচ্ছে একটি সামগ্রিক ধারণা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনো দেশের উন্নয়নের একটি মাত্র সূচক কিন্তু এটাই সামগ্রিক উন্নয়নসূচক নয়। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়নসূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধন করা না গেলে তাকে কোনোভাবেই সুষম উন্নয়ন বলা যাবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এটাই উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয়।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা পেতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা পেতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা পেতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

আশির দশকে তৎকালীন সামরিক-স্বৈরশাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদ অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ‘এক নম্বর জাতীয় সমস্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তার এই বক্তব্য সেই সময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেলেও এটা ছিল সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এই মন্তব্য। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি তা পরিকল্পিতই হোক বা অপরিকল্পিতই হোক কখনো একটি দেশের জন্য এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হতে পারে না। জনসংখ্যা এমনই এক সম্পদ, যার কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা জনসংখ্যা ব্যতীত কোনোভাবেই কল্পনা করা যায় না। জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ এবং উৎপাদনশীল উপকরণে পরিণত করা গেলে তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হয়। আর জনসংখ্যা যদি অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠে, তাহলে তা একটি দেশের জন্য ‘দায়’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার দায়িত্ব একান্তভাবেই রাষ্ট্রের। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্র কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আরা যদি বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দিই তাহলে দেখব, আমাদের এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে অমার্জনীয় ব্যর্থতা রয়েছে, যার দায় কোনোভাবেই রাষ্ট্র এড়াতে পারবে না।