Views Bangladesh Logo
author image

এম এ খালেক

  • অর্থনীতি বিষয়ক লেখক

  • থেকে

অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১০ ফেব্রুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এটি ছিল চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) দ্বিতীয় এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মুদ্রানীতি। ঘোষিত মুদ্রানীতি নিয়ে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষ আগ্রহ প্রত্যক্ষ করা গেছে। তবে সবাই ধারণা করেছিলেন প্রস্তাবিত মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হতে পারে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ঘোষিত মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক বলা যেতে পারে। কারণ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এটা বিগত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থাৎ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি এখন অনেকটাই মন্থর হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আহরণের হারও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আহরণের পরিমাণ কমেছে ৭১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার

সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন
সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ চারটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জ্বালানি উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে লেখা এক যৌথ পত্রের মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে শিল্প-কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পণ্য উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাতে পারে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তাদের পত্রে আরও উল্লেখ করেছেন, গত ৫ বছরে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ২৮৬ শতাংশ, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে ৬৮ শতাংশ। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে ৫৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বর্ধন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে ৯ শতাংশ। উচ্চ মূল্য দিয়েও প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করেছে। অধিকাংশ শিল্প-কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় আগামীতে শিল্প সেক্টর, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে দুরবস্থা নেমে আসতে পারে।

টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই
টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই

টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই

প্রতিটি রাষ্ট্রেরই লক্ষ্য থাকে কীভাবে দ্রুত এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যায়। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সর্বাধিক জনকল্যাণ সাধন এবং দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়াই একটি সরকারের মূল দায়িত্ব। যে সরকার এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে সমাজের সর্বস্তরে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে পারে, সেই সরকারই জনকল্যাণমূলক সরকার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অনেকের মনে এমন একটি ধারণা আছে যে, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা গেলেই উন্নয়ন অর্জনের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে; কিন্তু এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কারণ উন্নয়ন বলতে শুধু একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বুঝায় না। উন্নয়ন হচ্ছে একটি সামগ্রিক ধারণা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনো দেশের উন্নয়নের একটি মাত্র সূচক কিন্তু এটাই সামগ্রিক উন্নয়নসূচক নয়। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়নসূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধন করা না গেলে তাকে কোনোভাবেই সুষম উন্নয়ন বলা যাবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এটাই উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয়।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা পেতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা পেতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা পেতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

আশির দশকে তৎকালীন সামরিক-স্বৈরশাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদ অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ‘এক নম্বর জাতীয় সমস্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তার এই বক্তব্য সেই সময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেলেও এটা ছিল সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এই মন্তব্য। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি তা পরিকল্পিতই হোক বা অপরিকল্পিতই হোক কখনো একটি দেশের জন্য এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হতে পারে না। জনসংখ্যা এমনই এক সম্পদ, যার কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা জনসংখ্যা ব্যতীত কোনোভাবেই কল্পনা করা যায় না। জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ এবং উৎপাদনশীল উপকরণে পরিণত করা গেলে তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হয়। আর জনসংখ্যা যদি অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠে, তাহলে তা একটি দেশের জন্য ‘দায়’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার দায়িত্ব একান্তভাবেই রাষ্ট্রের। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্র কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আরা যদি বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দিই তাহলে দেখব, আমাদের এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে অমার্জনীয় ব্যর্থতা রয়েছে, যার দায় কোনোভাবেই রাষ্ট্র এড়াতে পারবে না।

অর্থবছরের দ্বিতীয় ষাণ্মাসিক মুদ্রানীতি হবে চ্যালেঞ্জিং
অর্থবছরের দ্বিতীয় ষাণ্মাসিক মুদ্রানীতি হবে চ্যালেঞ্জিং

অর্থবছরের দ্বিতীয় ষাণ্মাসিক মুদ্রানীতি হবে চ্যালেঞ্জিং

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৫ মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে খুব একটা সাফল্যের লক্ষণ দৃশ্যমান হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতির চেয়ে রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বেশি সময় ব্যয় করছে। নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে প্রস্তাবিত মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২২ তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই মুদ্রানীতি অনুমোদিত হবে এবং তারপর তা প্রকাশ করা হবে। এটি হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মুদ্রানীতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই প্রথম মুদ্রানীতি। নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ অন্যতম। তবে এ দুটি উদ্যোগ আরও আগেই গ্রহণ করা উচিত ছিল। আগে যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন তিনি এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে অর্থনীতির গতিপথ মন্থর এবং উল্টোমুখী হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিকট অতীতে যতগুলো মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তার কোনোটিই প্রস্তাবিত মুদ্রানীতির মতো এতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল না। যদিও বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সবসময়ই কঠিন একটি কাজ।

অতিমাত্রায় বিদেশি ঋণ জাতির আর্থিক স্বাধীনতা বিপন্ন করে
অতিমাত্রায় বিদেশি ঋণ জাতির আর্থিক স্বাধীনতা বিপন্ন করে

অতিমাত্রায় বিদেশি ঋণ জাতির আর্থিক স্বাধীনতা বিপন্ন করে

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। সেই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মার্কিন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কেন হচ্ছে না, সে সম্পর্কে তার গুরুত্বপূর্ণ মতামত উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষকরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো মার্কিন অধ্যাপকের বক্তব্য শ্রবণ করছিলেন। এমন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক তরুণ শিক্ষক দাঁড়িয়ে মার্কিন অর্থনীতিবিদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের অর্থনীতির ওপর নানাভাবে হস্তক্ষেপ করছেন বলেই আমরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নয়ন অর্জন করতে পারছি না। মার্কিন অর্থনীতিবিদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর তরুণ অধ্যাপকের উদ্দেশে বলেন, যে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ৮০ শতাংশ অর্থ আমরা জোগান দিই, সেই অর্থনীতি কি আপনাদের নাকি আমাদের? আপনার যদি নিজস্ব উৎস থেকে উন্নয়ন কাজের অর্থায়ন করতে পারতেন তাহলে আমাদের পরামর্শ দেবার কোনো প্রয়োজন হতো না। তার এই বক্তব্য শুনে বাংলাদেশি তরুণ অধ্যাপক আর কোনো কথা না বলে বসে পড়েন।