Views Bangladesh Logo
author image

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

  • ইমেরিটাস অধ্যাপক

  • থেকে

ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ কেন করতে হবে!
ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ কেন করতে হবে!

ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ কেন করতে হবে!

ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছরে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ নিয়ে বলতে হচ্ছে, স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে যে মর্যাদা বাংলার পাওয়ার কথা, তা সে পায়নি। বাংলা যে আজও তার সঠিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারল না, এর পেছনে দেশে একই সঙ্গে তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান থাকা, উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার না হওয়া, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া ইত্যাকার নানাবিধ কারণের কথা বলা যাবে। তবে মূল কারণ অন্বেষণের জন্য আমাদের আরেকটু গভীরে তাকাতে হবে।

রাষ্ট্র যখন বৈষম্যের সন্তান এবং বৈষম্যের প্রতিপালক
রাষ্ট্র যখন বৈষম্যের সন্তান এবং বৈষম্যের প্রতিপালক

রাষ্ট্র যখন বৈষম্যের সন্তান এবং বৈষম্যের প্রতিপালক

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাত বিশেষ- এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল; কিন্তু রাষ্ট্রের উৎপাত কমেনি, ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়িয়েছে শোষণ ও লুণ্ঠনে অতিশয় বিশ্বস্ত যন্ত্র। যন্ত্র সে শাসকদের হাতে। শাসকরা অধীন সাম্রাজ্যবাদের হাতে। আমরা দেখছি রাষ্ট্র আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক দক্ষ ও সর্বগ্রাসী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আছে এনজিও। এরা অনেকটা মিশনারিদের মতো। নতুন ধর্ম প্রচার করছে, সেটি হলো পুঁজিবাদ। রাষ্ট্র নিজে পুঁজিবাদী ও আমলাতান্ত্রিক; এনজিওদের সাহায্য দানও পুঁজিবাদী; তাদের লক্ষ্য মানুষকে বিশ্ব পুঁজিবাদের অংশ করে ফেলা। রুশ বিপ্লবের পর, রবীন্দ্রনাথ, আপনি সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। গিয়ে মনে হয়েছিল আপনার যে আপনি তীর্থ দর্শনে এসেছেন। মানব-মুক্তির নব আয়োজন আপনাকে অভিভূত করেছিল। সেই সোভিয়েত এখন আর নেই। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন সেখানে বিদেশি বণিক ও স্বদেশি মতলবীদের দানবীয় পদচারণায় নতুন মানুষ সৃষ্টির সমস্ত উদ্যমসহ সবকিছুই লন্ডভন্ড।

সম্প্রদায়গত পরিচয়ে নয় বাঙালি এক হয়েছিল ভাষাগত পরিচয়ে
সম্প্রদায়গত পরিচয়ে নয় বাঙালি এক হয়েছিল ভাষাগত পরিচয়ে

সম্প্রদায়গত পরিচয়ে নয় বাঙালি এক হয়েছিল ভাষাগত পরিচয়ে

জাতীয়তাবাদে রাজনীতি থাকে, প্রশ্ন থাকে রাষ্ট্র ভাঙা ও গড়ার। ভাষা রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যায় এবং ভাষার ভেতর নিহিত থাকে যে সম্ভাবনা, তা একাধারে ব্যাপক ও গভীর, কেবল যে গণতান্ত্রিক তা নয়, সমাজতান্ত্রিকও; কেননা ভাষার পরিচয় শ্রেণিকে অতিক্রম করে চলে যেতে পারে, ক্ষমতা রাখে যাওয়ার। আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন গণতান্ত্রিক ছিল, একাধিক অর্থে। প্রথমত, তা পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতর সংখ্যাগরিষ্ঠের অর্থাৎ বাংলাভাষীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তা বাঙালিদের এক করতে চেয়েছিল শ্রেণি বা সম্প্রদায়গত পরিচয়ে নয়, ভাষাগত পরিচয়ে। সেখানে তার আকাঙ্ক্ষাটা সমাজতান্ত্রিক।

আমার দেখা একাত্তরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার দেখা একাত্তরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমার দেখা একাত্তরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, সুপরিচিত কথাসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও কলাম লেখক। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যাসহ নানা ঘটনাপ্রবাহ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করেছেন একজন কালজয়ী সাক্ষী হিসেবে। ১৯৭১ সালের প্রত্নস্মৃতি, বামপন্থি রাজনীতি ও নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজের সঙ্গে।