Views Bangladesh Logo

কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে চিত্রাপাড়ের বাঁধাঘাট

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নড়াইলের চিত্রাপাড়ের জমিদারদের বাঁধাঘাট। ১৬৫ বছর আগে নড়াইল-লক্ষ্মীপাশা-নওয়াপাড়া সড়ক সংলগ্ন শহরের কুড়িগ্রামে ‘জলজ তাজমহল’ খ্যাত বাঁধাঘাটটি নির্মাণ করেছিলেন প্রভাবশালী জমিদার কালী শংকর রায়।

নাটোরের রাণী ভবানীর পতনের পর নড়াইলের জমিদার কালী শংকর রায় ছিলেন এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী জমিদার। খুলনা, যশোর ও নড়াইল জেলার বিশাল এলাকা ছিল তার অধীনে। কালের পরিক্রমা আর দখলে হারিয়ে গেছে অধিকাংশ স্থাপনা।

তবে এখনো সগৌরবে টিকে আছে চিত্রা নদীর পাড়ে ১৮৫৩ সালে নির্মিত বাঁধাঘাটটি। জমিদার বাড়ির গৃহবধূদের স্নানের জন্য চুন-সুঁড়কির প্রলেপ আর রেলের স্লিপার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বাঁধাঘাটটি। ২১টি সিড়ি বেয়ে চিত্রা নদীর দিকে নামিয়ে দেয়া হয় সেটি।

নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশের ঐতিহ্যবাহী এ বাঁধাঘাটটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসেন অনেকেই। শহরে কোনো বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় ঈদসহ উৎসবের দিনগুলোতে পরিণত হয় দর্শনার্থীদের আড্ডাস্থলেও।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় ভেঙে পড়ছে সিঁড়িগুলো। বর্তমানে ১৫টি সিড়ি অক্ষত রয়েছে।

ইতিহাস বলছে, ১৭৯১ সালে নড়াইলে আসেন প্রথম জমিদার রূপরাম রায়। শহরের আলাদাতপুর তালুক কিনে তিনিই জমিদারির গোড়াপত্তন করলেও এর প্রকৃত প্রসার ঘটে জমিদার কালী শংকর রায়ের আমলে। ইংরেজদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালুর সময় তিনি নামে-বেনামে রাণী ভবানীর তেলিহাটি, বিনোদপুর, রূপপাত, তরফ কালিয়া, তরফ দারিয়াপুরসহ বিভিন্ন তালুক কিনে জমিদারির বিস্তৃতি করেন। বৃহৎ অট্টালিকা, ডজনখানেক দীঘি, পুকুর, নাট্যমঞ্চ, মন্দির, ফলের বাগানসহ বিশাল রাজবাড়ী নির্মাণ করেন।

কালী শংকর রায়ের পর তার দুই ছেলে রাম নারায়ণ নড়াইলের জমিদার এবং জয় নারায়ণ নড়াইলের হাটবাড়িয়ার জমিদার হিসেবে জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। রাম নারায়ণের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে রাম রতন রায় জমিদারির হাল ধরেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ভারতে চলে যান জমিদাররা। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত দুই একজন এলেও পরের ছয় দশকে আর কেউ আসেননি। ১৯৬৫ সালে জমিদারি প্রথার বিলুপ্ত ঘটে।

ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী শান্তা বিশ্বাস বলেন, ‘ক্লাস না থাকলে বন্ধুরা মিলে বাঁধাঘাটে এসে আড্ডা দেেই। চিত্রা নদীর কারণে এ স্থানটিতে সব সময় মনোরম পরিবেশ থাকে। খুব ভালো লাগে’।

কলেজের ছাত্র হিমেল কুন্ড, দিগন্ত বিশ্বাস, জসিম ও তিতাস বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমেও বাঁধাঘাটের আবহাওয়া সব সময় ঠাণ্ডা থাকে। আমাদের এখানে কোনো বিনোদনকেন্দ্র নেই। তাই অবসরে এখানে এসে সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে। এখানে প্রায়ই আসা হয়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেই, ছবি তুলি। বাঁধাঘাটের পরিবেশটা অনেক সুন্দর’।

জেলা প্রশাসক আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, নড়াইল বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য। জমিদারদের কিছু স্মৃতিচিহ্ণ ঐতিহ্যকে আরো বেগবান করেছে। ব্রিটিশ আমলের জমিদারদের রেখে যাওয়া বাঁধাঘাটটি জেলার দর্শনীয় স্থান।

তিনি জানান, জমিদারদের বিশাল সম্পত্তির অনেক কিছুই অবৈধভাবে দখল হয়েছিল। সেগুলো উদ্ধারের পর ডিসি ইকোপার্ক নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন। চিত্রাপাড়ের বাঁধাঘাটেরও সংস্কার করা হয়েছে। সারা দেশের দর্শনার্থীরা পুরো এলাকাটিতে এসে এখন আনন্দ-বিনোদন উপভোগ করেন।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ