খরচ কমাতে বান্দরবানে কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন বাগানিরা
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, পোকার উপদ্রব ও সেচ সংকটে আমের মুকুল ও গুটি ঝরে পড়ায় আশানুরূপ ফলন নিয়ে শঙ্কায় বান্দরবানের আমচাষিরা। খরচ কমাতে ও বেশি লাভের আশায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন বাগানিরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাহাড়ি চাষিদের কাছ থেকে বাগান থেকেই একেক মণ কাঁচা আম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) ও শুক্রবারও (২৮ এপ্রিল) কাঁচা আম বোঝাই পঞ্চাশটিরও বেশি ট্রাক-গাড়ি বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় গেছে। এগুলো মূলত আচার তৈরিতে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায়ই রাংগোয়াই ও আম্রপালিসহ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের আমের আবাদ বেড়েছে। তবে প্রচণ্ড তাপদাহে, খরায়, অনাবৃষ্টিতে পানির সংকটে উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তারপরও সদর উপজেলার লাইমিপাড়া, স্যারণপাড়া, ফারুকপাড়া, গেজমনিপাড়া, বসন্তপাড়া, ম্রোলংপাড়া, মেনরতপাড়া, ওয়াইজংশনপাড়া, চিম্বুক এবং রুমা-থানচি সড়কের আশপাশের পাহাড়ি এলাকাগুলোয় আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে।
এবার আমের আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে যা গতবারের চেয়ে ৯৪ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টরপ্রতি ১১-১২ মেট্রিক টন।
গত বছর ১০ হাজার ১০৬ হেক্টর জমিতে আমের চাষে উৎপাদিত হয়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ১০ হাজার ছয় হেক্টর জমিতে এক লাখ ১৩ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন এবং ২০২২ সালে নয় হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে ফলেছিল এক লাখ ১১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন আম।
চিম্বুক সড়কের আমচাষি জন বম ও মেনরত ম্রো বলেন, ‘প্রচণ্ড তাপদাহে পানির সংকটে কাঁচা আমই ঝরে পড়ছে। কীটনাশক ও পানি ছিটিয়েও রোধ করতে পারছি না। বাধ্য হয়েই ১৮ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছি। আর বাগানের ঝরেপড়া আম বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকায়।’
রুমা সড়কের দলিয়ানপাড়া ও ওয়াইজংশনপাড়ার রেয়াংরি ম্রো ও দলিয়ানপাড়ার সানথোয়ান জানান, কীটনাশক ছেটানোর পরও পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে বাগানে। আমের সৌন্দর্য নষ্ট ও আম ছিদ্রকারী পোকা উড়ে এসে হুঁল ফুটিয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে খরার কারণে গাছে থাকা অবস্থাতেও আমের বোটা শুকিয়ে কুঁচকে যাচ্ছে। যারা ঠিকঠাক সেচ ও সঠিক মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারছেন, তাদের বাগানের গাছে আম মোটামুটি ভালো রয়েছে। কিন্তু সাধারণ চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আম ব্যবসায়ী সঞ্জয় চক্রবর্তী ও মো. সিরাজ বলেন, রাংগোয়াই ও আম্রপালি জাতের কাঁচা আম মণপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ফলবাজারের আড়তদারের কাছে বিক্রি করি। তবে একেকদিন একেক দামে কিনতে হচ্ছে চাষিদের কাছ থেকে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম শাহনেওয়াজ জানান, ফলনশীল আমের আবাদ বাড়লেও প্রচণ্ড তাপদাহ, খরা ও অনাবৃষ্টিতে পানি ও সেচ সংকটে উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গরম বাতাসে ঝরে যাচ্ছে আমের মুকুল ও গুটি। অন্যবারের তুলনায় আম আকারেও ছোট দেখা যাচ্ছে। খরচ কমাতে এবং লোকসান ঠেকাতে কাঁচা আমই বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষি ও বাগানিরা। এতে সঠিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে