Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

Syed Faruk  Hossain

সৈয়দ ফারুক হোসেন

মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০১৭’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর ২০১৮ সালে নবগঠিত বিভাগ ময়মনসিংহ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি উদ্বোধন করেন। স্বল্প লোকবল নিয়েই ‘শূন্যে’ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আকার দেয়ার কাজ শুরু হয়। এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ইউজিসিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর-বিভাগের কর্মকর্তারা। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি মেলান্দহের সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করেন মির্জা আজম এমপি।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে পাঠদান চলে জেলা শহরের দেওয়ানপাড়ার বঙ্গবন্ধু আইডিয়াল কলেজের একটি ভাড়া ভবনে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মেলান্দহে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বর্তমানে সীমিত সম্পদের মধ্যেও সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেখানকার শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম খান।

ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা যাতে ‘গ্লোবাল ভিলেজে’ কানেক্ট হতে পারেন, সেজন্য উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। স্থাপন করা হয় আধুনিক সুবিধাসহ ল্যাব। লাইব্রেরি একটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্তম্ভ। তা বিবেচনায় নিয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে; যেখানে রেফারেন্স বই ছাড়াও দেশি-বিদেশি জার্নালসহ বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে পারেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করতে বিতর্ক ক্লাব, রোবটিক্স ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলারও আয়োজন করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি ব্যাচ অধ্যয়ন করছে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) থাবায় থমকে যায় পুরো শিক্ষাকার্যক্রম। তবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিটি বিভাগেই অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি গরিব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় বৃত্তি। এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ প্রথম ব্যাচে চারটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এগুলো হচ্ছে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, সমাজকর্ম, গণিত ও ব্যবস্থাপনা। আর দ্বিতীয় বছরে যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিভাগ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বর্তমানে ফিশারিজসহ ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, জীব ও কৃষিবিজ্ঞান, আর্থ-সায়েন্স এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে সাতটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী, মানসম্মত শিক্ষাদান ও বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে উচ্চতর ডিগ্রিধারী ও মেধাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমান ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে উপাচার্য মহোদয় ভূ-তত্ত্ববিদ্যা নামক একটি বিভাগ চালু করেছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপির কাজ চলছে। এটি পাশ হলে ৫০০ একর জমির ওপর একটি অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম এমপি। এখনো সার্বিকভাবে নানা সহযোগিতা করে চলেছেন জনমানুষের এ নেতা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছরই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উদযাপন ছাড়াও জাতীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন ও পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নানা জনকল্যাণমূলক কাজেও অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। করোনাকালে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষাসামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বশেফমুবিপ্রবির পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে’ নবীন এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে। এ কর্নারে আমাদের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে। এ ছাড়া ‘অবিনাশী জনক তুমি’ শীর্ষক একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ দেশবরেণ্য লেখক ও গবেষকদের মূল্যবান লেখা স্থান পেয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় মানেই চ্যালেঞ্জ, এক নতুন অভিজ্ঞতা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজকে বশেফমুবিপ্রবিতে আত্তীকরণ করা হয়। জননেতা আলহাজ মির্জা আজম, এমপি কর্তৃক ২০০০ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করা হতো।

সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তৎকালীন ফিশারিজ কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন পদে আত্তীকরণ করা হয়। একই সঙ্গে তিনটি শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে ৫০ কক্ষবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন, দুটি হল, প্রশাসনিক ভবনসহ স্থাপনা নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। রয়েছে প্রশস্ত খেলার মাঠ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটি ফ্রেমওয়ার্ক করে দিয়েছেন। তা হচ্ছে ভিশন ২০২১, ২০৩০, ২০৪১ এবং শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান। এসব ভিশন বাস্তবায়ন করতে পারলেই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পাবে। এক্ষেত্রে আমাদের যে বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বশেফমুবিপ্রবির শিক্ষা-কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কেননা একাডেমিক গবেষণাকে সমৃদ্ধ করার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াও মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা, পরিবেশ-প্রতিবেশ বিষয়ে পঠন-পাঠন ও ব্যবস্থাপনার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। থাকছে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সমঝোতার বিষয়টিও।

আমরা এখন রোবটিক্স, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বা অদৃশ্য প্রযুক্তির কথা বলছি। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে বশেফমুবিপ্রবি ভবিষ্যতে রোবটিক্স ও মেকাট্রনিক্সের মতো বিভাগ চালু করবে। আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন বশেফমুবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে নেতৃত্ব দেবে। সমৃদ্ধ করবে দেশের ভবিষ্যৎ, উজ্জ্বল করবে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের মুখ। সীমিত সম্পদের মধ্যে তাদের সেভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। গবেষণা ছাড়া নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। গবেষণার কাজটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা একাডেমিক আদলে প্রচলিত। এ জ্ঞান আহরণের কাজটি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে ভবিষ্যতে সমানতালে চলে সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গবেষণা সেল গঠন করা হয়েছে।

গবেষণাগারের উন্নয়নের কাজটি খুবই ব্যয়বহুল। এ জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেগুলোর মূল্য কোটি কোটি টাকা। প্রতিটি অনুষদে জার্নাল প্রকাশ করা হবে। প্রকাশনার মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক চর্চার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এমন গবেষণা এবং আর্টিকেলের দিকেও নজর দেয়া হবে। এ জন্য জনসংযোগ, প্রকাশনা ও তথ্য অধিকার দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ, প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্র হিসেবে আমরা বাঙালির স্বপ্নজয়ের সারথি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলতে চাই। সেভাবেই এগিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে। এভাবে দিনে দিনে বশেফমুবিপ্রবির একটা নিজস্ব সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের পথে ধাবিত হচ্ছে। আরও অধিকতর মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেসব শর্তের প্রয়োজন, আমরা শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং শিক্ষার্থী– সবাই মিলে তা পূরণে সচেষ্ট রয়েছি। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ-দপ্তর আমাদের যথেষ্ট সাহায্য ও সহযোগিতা করছে। বশেফমুবিপ্রবি আইনটি যেহেতু ২৮ নভেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ হয়, তাই ওই দিনটিই ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিব’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ সোনালি দিনটি হলো বয়সে নবীন বশেফমুবিপ্রবির অর্জনকে আরও বেগবান, সফলতার পথে বাধা দূরীকরণ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা পুনর্নির্ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার প্রত্যয় গ্রহণের দিন। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা, অভিভাবকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

লেখক : রেজিস্ট্রার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ