বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে ব্যান্ডউইথ দেয়ার অনুমোদন বাতিল
বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে ভারতের ব্যান্ডউইথ নেয়ার অনুমোদন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। দেশের দুই ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্টেরিয়াল কেবল (আইটিসি) কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স এবং ফাইবার এট হোম ভারতের টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে মিলে এই ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট বাস্তবায়নের কথা ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ভারতী এয়ারটেল ব্যান্ডউইথ ট্রানজিটের জন্য ২০২২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি টেলিযোগাযোগ বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে পাঠায়, যা বিভাগ বিটিআরসিকে পাঠিয়েছিল। এ বিষয়ে বিটিআরসি ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের দুই আইটিসি কোম্পানি এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে যুক্ত হয়।
তবে এবার বিটিআরসি এ সিদ্ধান্ত সরাসরি বাতিল করে দিয়েছে। এমনকি ট্রানজিটের অনুমতি দেয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ বিভাগে দেয়া চিঠিও বাতিল করেছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়কে সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। এই সেভেন সিস্টার্সে দ্রুতগতির ইন্টারনেট দিতে ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) সেবা চালুর এই উদ্যোগ, যার ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার হবে।
সামিট, ফাইবার এট হোম ও ভারতী এয়ারটেলের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া এবং ভারতের আগরতলার নো-ম্যানস ল্যান্ডে আন্তঃসংযোগ পয়েন্টের মাধ্যমে এই সংযোগ হওয়ার কথা ছিল। আর সামিট ও ফাইবার এট হোম আখাউড়া সীমান্তে টেরিস্টেরিয়াল কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন (টিসিএলএস) স্থাপন করত। এরপর এই টিসিএলএস থেকে ফাইবারের মাধ্যমে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডি স্টেশনে সংযোগ দেয়া হতো, যার মাধ্যমে এই আইপিএলসি সেবা সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতো।
এখন ভারতের সেভেন সিস্টার্স থেকে চেন্নাই সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশনের দূরত্ব ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। বর্তমান নেটওয়ার্কে ভারতের সিঙ্গাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৮ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। সেভেন সিস্টার্সের পথের এলাকা দুর্গম পর্বত হওয়ার ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষ, নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি ও নেটওয়ার্ক ঠিক রাখা বেশ কঠিন। আর দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ল্যাটেন্সি হয় ৫৫ মিলিসেকেন্ড, এটি সিঙ্গাপুর পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় ৮৭ মিলিসেকেন্ড। বাড়ায় খরচও। ফলে মানসম্মত সেবা দেয়া চ্যালেঞ্জিং।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এই ট্রানজিট নেটওয়ার্কের কারণে দূরত্ব কমে যাবে ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার আর সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ল্যাটেন্সি কমে যাবে ৩৭ মিলিসেকেন্ড।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ ট্রানজিট দেয়া হলে আঞ্চলিক হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হবে এবং ভারত এখানে শক্তিশালী হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা বলছে, আইপিএলসি ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রাথমিক কোনো আলোচনাও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এর যৌক্তিকতা, আইনি ও বাণিজ্যিক বাস্তবতা, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এ ছাড়া গুগল, আকামাই, অ্যামাজন, মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এজড পপ ভারতের কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে হওয়ায় আইপিএলসি ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের টেলিকম অপারেটরগুলো সেভেন সিস্টার্সে সহজে ও গতিময় ইন্টারনেট দিতে পারবে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে এজড পপ ও ডেটা সেন্টার করে সেভেন সিস্টার্স, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মিয়ানমারে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি-ইন্টারনেট সেবা দেয়ার সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে।
এ ব্যাপারে ফাইবার অ্যাট হোম চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে সাউথ-ইস্ট ইন্টারনেট হাব হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করত। এই রিজিয়নে ঢাকাকে সেন্টার করে ফাইভ টু টেন মিলিসেকেন্ডের ভেতরে ৫০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে। এটা সিগনিফিকেন্ট।
তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর একটি ইন্টারনেট হাব। তারা ব্যান্ডউইথের ৯০ ভাগ কনজিউম করে না। ট্রান্সমিট করে দেয় বিভিন্ন দেশে। আর এখন আমরা ৯০ ভাগ দেশের ভেতরে কনজিউম করি। এ জন্য আমাদের প্রচুর টাকা আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউথের জন্য খরচ করতে হচ্ছে। তখন সরকারি-বেসরকারি সাবমেরিন কেবল, আইটিসিগুলোর ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিট হতো।’
মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এই হাব কনসেপ্ট তৈরি হলে আকামাই, গুগল, ফেসবুক, টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে আসত। কারণ হাব তৈরি হলে বাংলাদেশের ডেটা ফ্লো বাড়বে অনেক। তখন তাদের এখানে আসার সম্ভাবনাও বাড়বে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে