Views Bangladesh Logo

মার্কিন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত: অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হাজারো কর্মী

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) সম্প্রতি বেশ কয়েকটি উদ্যোগ থেকে তহবিল কমানোর বা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বাংলাদেশে সংস্থাটির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোতে কর্মরত হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত উন্নয়ন কর্মী, এনজিও এবং এই কর্মসূচির ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।


ভয়াবহ ধাক্কা

বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডি। ঐতিহাসিকভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং দুর্যোগ-ত্রাণকে কেন্দ্র করে প্রকল্পগুলোতে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে সংস্থাটি। তবে, সংস্থা কর্তৃক তহবিলের অগ্রাধিকারের পুনর্মূল্যায়নের ফলে একাধিক প্রকল্পের জন্য আর্থিক সহায়তা স্থগিত বা হ্রাস করা হয়েছে।


উন্নয়ন খাতের সূত্র অনুসারে, ইউএসএআইডি জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, দারিদ্র্য হ্রাস এবং মানবাধিকার সমর্থনের মতো ক্ষেত্রে তহবিল বন্ধ বা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ কেবল ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর প্রত্যক্ষ কর্মীদেরই নয়, বরং এই উদ্যোগগুলোর ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার পরোক্ষ সুবিধাভোগীদেরও প্রভাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।


এদিকে এই সাহায্যের পরিমাণ কমলে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের দিকে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এই সংস্থার সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এটি ছাড়া বাংলাদেশ উন্নয়নের গতি বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে’, বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান।


হাজার হাজার কর্মী অনিশ্চয়তার মধ্যে

এই সিদ্ধান্ত উন্নয়ন কর্মীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, বিশেষ করে যারা এনজিও এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী অংশীদারদের জন্য কাজ করে এবং যারা ইউএসএআইডির অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। মাঠকর্মী, গবেষক এবং প্রশাসনিক কর্মীসহ এই পেশাদারদের অনেকেই এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।


ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত একটি স্বাস্থ্য প্রকল্পের একজন কর্মচারী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ‘আমি আমার জীবনের এক দশকেরও বেশি সময় এই কর্মসূচিতে উৎসর্গ করেছি। যদি অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমি আমার চাকরি হারাব এবং গ্রামীণ সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।’


গভীর উদ্বেগ

কক্সবাজারে ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পে কর্মরত স্থানীয় বাংলাদেশি কর্মী নাসিমা বেগম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, ‘তহবিল স্থগিত করা উদ্বেগজনক। বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা আমাদের অনেকেই বাংলাদেশে জীবিকা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বছরের পর বছর ব্যয় করেছি। যদি তহবিল স্থগিত থাকে তাহলে হাজার হাজার সুবিধাভোগী- এমনকি আমাদের মতো কর্মচারীরাও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে পারেন।’


তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউএসএআইডি-সমর্থিত প্রকল্পগুলো জনস্বাস্থ্য, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং পাচারবিরোধী প্রচেষ্টার মতো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর্থিক সহায়তায় হঠাৎ স্থগিতাদেশ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলোকে স্থগিত করতে পারে এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক কর্মসূচিগুলো ব্যাহত করতে পারে।


সহায়তা তহবিল স্থগিত করা হলেও সেটি কবে নাগাদ পুনরায় চালু হতে পারে সে বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রকাশ করেননি। ফলে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মী এবং প্রকল্প সুবিধাভোগীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।


ইউএসএআইডির বিবৃতি

এ ব্যাপারে ভিউজ বাংলাদেশকে ই-মেইলের মাধ্যমে ইউএসএআইডির মুখপাত্র জানান, ‘এই মুহূর্তে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করার জন্য সব কর্মসূচি এবং সহায়তা তহবিল ব্যবহার সেক্রেটারি কর্তৃক অনুমোদিত ছাড় ছাড়া স্থগিত করা হয়েছে। সেক্রেটারি অব স্টেট কেবলমাত্র জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা অনুমোদন করেছেন। বিদ্যমান জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নকারীদের কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত অথবা পুনরায় কাজ শুরু করা উচিত।’


বাংলাদেশের ওপর প্রভাব

কিছুদিন আগে মার্কিন সরকারের সহায়তা তহবিল স্থগিত করার পর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ১,০০০ জনেরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। এই কর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) দ্বারা অর্থায়িত বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে জড়িত ছিলেন। বুধবার থেকে ছাঁটাই শুরু হয়েছে, কর্মীদের পর্যায়ক্রমে বরখাস্তের চিঠি দেয়া হচ্ছে। তথ্য বলছে, আইসিডিডিআর,বি মাধ্যমে ইউএসএআইডির প্রকল্পসমূহে ৫ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করে।


মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশসহ বিদেশি কর্মসূচির জন্য তহবিল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিক্রিয়ায়, আইসিডিডিআর,বি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব মার্কিন সরকার-অর্থায়িত প্রকল্প এবং গবেষণা স্থগিত করেছে। আইসিডিডিআর,বির যোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার একেএম তারিফুল ইসলাম খান ক্লায়েন্ট, অংশীদার এবং সহকর্মীদের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার আশা প্রকাশ করেছেন।


এই বিষয়টি সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, ইউএসএআইডির অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত সরকারি নীতি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অংশ হিসেবে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা।


প্রতিক্রিয়া

সংকট নিরসনে বিকল্প তহবিল উৎস খুঁজে বের করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বেশ কয়েকটি এনজিও আলোচনা করছে। কিছু আন্তর্জাতিক দাতা এবং বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে।


গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প

এনজিওগুলো ইউএসএআইডিকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার এবং হঠাৎ তহবিল হ্রাসের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে তা করার আহ্বান জানিয়েছে। ‘আমাদের বিকল্প তহবিল স্থানান্তর এবং কাজের ধারা সুরক্ষিত করার জন্য সময় প্রয়োজন’, একটি শীর্ষস্থানীয় এনজিওর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন।


রাজনৈতিক এবং কৌশলগত প্রভাব

কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে, ইউএসএডের সিদ্ধান্ত বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কারণগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক দৃশ্যপট এবং মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির অগ্রাধিকারগুলো সহায়তা বিতরণে পরিবর্তনের পেছনে অবদান রাখতে পারে।


যদিও ইউএসএড তহবিল হ্রাসের সঠিক কারণগুলো সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রদান করেনি, পর্যবেক্ষকরা অনুমান করেন যে, বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকারগুলোতে পরিবর্তন, বাজেট পুনর্বণ্টন এবং অভ্যন্তরীণ নীতি পরিবর্তনগুলো মূল কারণ হতে পারে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষক ড. নাঈম সুলতানা ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘ইউএসএআইডি বাংলাদেশের অগ্রগতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তহবিলের ক্ষতি বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে দিতে পারে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য দেশের প্রচেষ্টাকে ধীর করে দিতে পারে।’


ভবিষ্যতের পথ

যেহেতু হাজার হাজার কর্মচারী এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে আগত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত, তাই আগামী মাসগুলো এসব কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য মার্কিন সরকার, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে জরুরি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


আপাতত, হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য অনিশ্চিত, কারণ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রভাব বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের ভূদৃশ্যকে নতুন করে আকার দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


ট্রাম্পের নির্বাহী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সহায়তা বন্ধের নির্বাহী সিদ্ধান্তের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রদান করা হয়।

বিবৃতিটি এখানে তুলে ধরা হলো:

আমেরিকান জনগণ কঠোর পরিশ্রমী ও উদার। তারা সারা বিশ্বে তাদের সহমানুষের সাহায্যে রক্ত ও সম্পদ উৎসর্গ করেছে। কিন্তু কোনো বিদেশি দেশ এই সুবিধাগুলোর অধিকারী নয়, এবং কোনো বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি যাচাই-বাছাইয়ের ঊর্ধ্বে নয়।
আগে ঘোষিত ৯০ দিনের জন্য মার্কিন বিদেশি সহায়তার স্থগিতাদেশ ও পর্যালোচনা ইতোমধ্যে আমাদের দেশ ও জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনছে। আমরা অপচয় নির্মূল করছি, অপ্রয়োজনীয় কর্মসূচিগুলো বন্ধ করছি এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম উন্মোচিত করছি। যদি এই কর্মসূচিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকত, তবে এসব সম্ভব হতো না।
আমরা যে প্রতিটি ডলার ব্যয় করি, যে প্রতিটি কর্মসূচি অর্থায়ন করি এবং যে প্রতিটি নীতি অনুসরণ করি, তা অবশ্যই আমেরিকাকে আরও নিরাপদ, শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ করতে হবে। আমরা এখন সেটাই করছি – এক ডলার করে আমেরিকার মূল জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কত পরিমাণ অর্থ বিদেশি সহায়তায় ব্যয় করে?

ইউক্রেনকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর উদার সহায়তা বিবেচনায় না এনে বললেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তায় ব্যয় করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অঙ্গরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) চেয়েও বেশি এবং এটি বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তার জন্য ব্যয় হওয়া প্রতি ১০ ডলারের মধ্যে ৪ ডলার। আমেরিকানরা আমাদের ব্যয়কৃত প্রতিটি ডলারের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রাপ্য, বিশেষ করে যখন সেই অর্থ দেশে ব্যয়ের পরিবর্তে বিদেশে ব্যয় করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর কেন ৯০ দিনের জন্য বিদেশি সহায়তা স্থগিত করল?
কোনো কর্মসূচি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকলে সেটির মূল্যায়ন করা অসম্ভব, কারণ সরকার ও বেসরকারি অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশেরই বিশদ বিবরণ প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা থাকে না, যতক্ষণ না অর্থ প্রবাহ অব্যাহত থাকে। অস্থায়ী স্থগিতাদেশই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে অপচয় রোধ ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করা সম্ভব, তবে জীবন রক্ষাকারী জরুরি পরিস্থিতিতে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে।

এই স্থগিতাদেশের ফলে কী ধরনের ব্যয় রোধ করা হয়েছে?

এই স্থগিতাদেশ কার্যকর না হলে মার্কিন করদাতাদের অর্থ গাজায় কনডম (এবং অন্যান্য গর্ভনিরোধক পরিষেবা), গ্যাবোনে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রচারণা, ফিজিতে নারীদের জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানি কর্মসূচি, লাতিন আমেরিকায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি, বৈশ্বিকভাবে কিশোরীদের জন্য যৌন শিক্ষা ও গর্ভপাত-বিষয়ক কর্মসূচি এবং অন্যান্য বহু প্রকল্পে ব্যয় হতো। এসব প্রকল্প আমেরিকাকে আরও শক্তিশালী, নিরাপদ বা সমৃদ্ধ করে না।

কোন ধরনের তহবিল অনুমোদিত হয়েছে?

মূল আদেশটি (২৪ জানুয়ারি ২০২৫) কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যেমন "জরুরি খাদ্য সহায়তা।" এছাড়াও, অতিরিক্ত ব্যতিক্রম অনুমোদনের জন্য একটি পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫-এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবিক সহায়তার জন্য একটি বিস্তৃত ছাড় অনুমোদন করেন। মানবিক সহায়তার সংজ্ঞার মধ্যে রয়েছে "জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসা সেবা, খাদ্য, আশ্রয়, এবং জীবনধারণের সহায়তা, পাশাপাশি এসব সরবরাহ ও বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যয়।"

অমানবিক সহায়তার জন্য কি কোনো ছাড় দেওয়া হয়েছে?

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম অনুমোদিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

• বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
• অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন সহজতর করা,
• পারমাণবিক বিস্তার প্রতিরোধ করা।
উল্লেখ্য, ব্যতিক্রমগুলোর অনুরোধ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পর্যালোচনা ও অনুমোদিত হয়েছে।

ছাড় পাওয়ার জন্য কীভাবে অনুরোধ করা যাবে?

২৪ জানুয়ারি ২০২৫-এ পররাষ্ট্র দফতর সহজ নির্দেশনা প্রদান করে, যা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর জন্য নিচের তথ্য দিয়ে অনুরোধ জমা দিতে হবে:
• ব্যুরো/অফিস/মিশনের নাম
• কর্মসূচির নাম
• কর্মসূচির বিবরণ
• কর্মসূচির অবস্থান
• প্রত্যাশিত ফলাফল
• ছাড়ের যৌক্তিকতা
• অর্থায়ন ও নির্দিষ্ট বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য
প্রথম কয়েকদিনেই এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডজনখানেক অনুরোধ সফলভাবে অনুমোদিত হয়েছিল; তবে অনেক অনুরোধে প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি থাকায় সেগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব হয়নি। ফলে, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫-এ নতুন নির্দেশনা পাঠানো হয়, যাতে এনজিও ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো তাদের মার্কিন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে অতিরিক্ত অনুরোধ জমা দিতে পারে।

এই প্রক্রিয়ায় মার্কিন করদাতাদের কত টাকা সাশ্রয় হয়েছে?

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের ছাড় অনুরোধ জমা পড়েছে। এর মধ্যে অনেক অনুরোধ এখনও পর্যালোচনাধীন, কারণ এগুলো জরুরি বা জীবন-সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে না। তবে প্রাথমিক পর্যালোচনাতেই ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুপাতহীন ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রতিরোধ করা হয়েছে, যা আমেরিকা ফার্স্ট (America First) নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ