Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পর্ব ১

বাংলাদেশ শুরু থেকেই স্বৈরশাসনের কবলে

Badruddin Umar

বদরুদ্দীন উমর

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

দরুদ্দীন উমর বাংলাদেশের লেখক-গবেষক ও বামপন্থি রাজনীতিবিদ। তার জন্ম ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর, ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি নেন। খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে প্রথমে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনীতি করবেন বলে ১৯৬৮ সালে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। বর্তমানে বদরুদ্দীন উমর জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ও সংস্কৃতি পত্রিকার সম্পাদক। সম্প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলেছেন ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভিউজ বাংলাদেশের সহযোগী সম্পাদক গিরীশ গৈরিক। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব।

ভিউজ বাংলাদেশ: গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের চরমভাবে পতন হয়েছে। এই পতনের কারণে আওয়ামী লীগের ভাগ্য কি মুসলিম লীগের মতো হতে পারে? না কি তারা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে?

বদরুদ্দীন উমর: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের যে অবস্থা হয়েছে, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর মুসলিম লীগের যে অবস্থা হয়েছে এর সাথে একটা মিল আছে। অনেক বড় মিল আছে। মিলটা এখানে যে, এই দুটো রাজনৈতিক দলেরই ভবিষ্যৎ শেষ হয়েছে। মুসলিম লীগ যেভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগও সেভাবে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পার্থক্য আছে। মুসলিম লীগ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগ সম্পূর্ণ উৎখাত হয়ে গিয়েছিল। এমনভাবে উৎখাত হয়ে গিয়েছিল তাদের লোকদের আর কোনো নড়াচড়া ছিল না। তারা কোনো উৎপাত করতে পারেনি। একদম চুপ হয়ে গিয়েছিল। একদম শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে দেখা গেল, শেখ হাসিনা চলে যাবার পরে, আওয়ামী লীগ চলে যাবার পরে সঙ্গে সঙ্গে তার লোকেরা কিছু করেনি, কিন্তু কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর এখন তারা কিছুটা নড়চড়া করছে। যেটাকে এক ধরনের উৎপাত বলা চলে। এটা দিয়ে আসলে কোনো কাজ হবে না। এটা হচ্ছে প্রদীপ নিভে যাবার আগে যে একটু ধুপধাপ করে ওঠে সেই অবস্থা। মুসলিম লীগ যেটা করেনি, এখন এরা সেটা করতে পারছে। কিছুটা নড়াচড়া করতে পারছে। নানারকম বক্তব্য দিচ্ছে। যারা গণঅভ্যুত্থান করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে। এটা সম্ভব হচ্ছে এ কারণে যে তাদের একটা বড় সমর্থক আছে ভারতে। মুসলিম লীগের এরকম কিছু ছিল না। ভারত আওয়ামী লীগের মস্ত বড় এক সমর্থক।

ভিউজ বাংলাদেশ: কিন্তু মুসলীম লীগের সময় তো সেরকম কিছু ছিল না?

বদরুদ্দীন উমর: উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরে, শে খ হাসিনা যেভাবে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, এবং সেখান থেকে নানারকম উৎপাত করছে, নানারকম উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছে, মুসলীম লীগের সময় তো সেরকম কিছু ছিল না। মুসলিম লীগ বড়জোর এখান থেকে পালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে পারত। কিন্তু সেখান থেকে কথা বলে কোনোই লাভ হতো না। ভয়ও ছিল না। সেখানে আওয়ামী লীগ ভারতে গিয়ে সেখানকার সরকারের সহযোগিতায় একটা শক্তি অর্জন করেছে। দেশে তার কোনো শক্তি নেই। দেশে যে জনগণ তাদের পক্ষে ছিল সেটা শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভারত তার সমর্থন দিচ্ছে, কিন্তু দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো দল টিকতে পারে না। শক্তি সঞ্চয় করে, নির্বাচনে জয়ী হয়ে যে তারা আবার ক্ষমতায় আসবে এরকম কোনো সম্ভবনাই নেই। কারণ এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ দেশের জনগণের যে মনোভাব দেখা গেছে, তারা আওয়ামী লীগকে বাতিল করেছে। যেটা বিশ্বের ইতিহাসে দেখা যায় না। অনেক সরকারকেই তো তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক সরকারই পালিয়েছে এই দুনিয়াতে। সরকার প্রধান হয়তো পালিয়েছে, বাতিস্তা বালিয়েছিল কিউবা থেকে, এখন আসাদ পালিয়েছে সিরিয়া থেকে, কিন্তু সরকার প্রধান পালানোর পর, তার দলের সমস্ত লোক, এমন কি গ্রাম-পর্যায়, ইউনিয়ন-পর্যায় থেকেও আওয়ামী লীগের লোকজন যেভাবে পালিয়েছে, জনগণের ভয়ে, জনগণের আক্রমণের ভয়ে এমন নজির নেই।

তারা জান তো যে ক্ষমতা থেকে গেলেই জনগণ তাদের ওপর আক্রমণ করবে। এই জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হয়নি। কারণ ক্ষমতা ছাড়লেই তার বিপদ। এই যে একটা ব্যাপার দেখা গেছে, যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লেই তার দলের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত লোক, এমন কি পুলিশ-আমলাও দলে দলে পালিয়েছে, এটা তো সিরিয়াতেও দেখা গেল না। আসাদের পরিবারে পঞ্চাশ বছরের রাজত্ব সিরিয়ায়, কিন্তু সে পালানোর পর তো তার দলের সবাই পালায়নি। বিদ্রোহীরা বরং আসাদের মন্ত্রীদের সাথে কথা বলে কীভাবে ক্ষমতা নতুন করে বিন্যস্ত করা যায় সেই আলাপ করছে। সিরিয়ায় আসাদের লোকেরা বসে বিদ্রোহীদের সাথে কথা বলছে এটা তো এখানে চিন্তার বাইরে। এখান থেকে সব পালিয়েছে। অনেকে আত্মগোপন করেছে আছে এখানে। সামান্য কিছু ধরা পড়েছে। এই যে অবস্থা, এর থেকে পরিস্কার বোঝা যায় এই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করেছে।

শুধু আওয়ামী লীগ কেন, এর সাথে তারা শেখ মুজিবকেও বাতিল করেছে। যেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মূল শক্, শেখ মুজিবের ভাবমূর্তি। সেই ভাবমূর্তিটাকে হাসিনা খুব চালাকির সাথে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। সে জন্য ৫ আগস্টে শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কেন এত বছর পর এই ক্ষোভ? তিনি তো মারা গেছেন সেই ১৯৭৫-এ। অনেক দিন হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে এটা হলো কেন?

অনেকেই বলছেন এটা অন্যায় হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এটা কেন হয়েছে এই প্রশ্ন তাদের মাথায় নাই। এটা খুব বিস্ময়কর। শেখ মুজিবের মুর্তি ভাঙা ঠিক হয়নি, তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ঠিক হয়নি, ইত্যাদি ইত্যাদি…। ঠিক হয়নি তা তো বুঝলাম, কিন্তু জনগণ এই কাজটা করল কেন? এর তো একটা ব্যাখ্যা দিতে হবে। যে নেতাকে আওয়ামী লীগ দেবতা বানিয়েছিল, যিনি আওয়ামী লীগের প্রধান অবলম্বন, যাকে ছাড়া আওয়ামী লীগ দাঁড়াতেই পারে না, এবং দাঁড়ানোর জন্য শেখ হাসিনা নিজেই তার প্রশাসকে তার পিতার সাথে জড়িত করেছে।  

তাহলে এই যে একটা অবস্থা, এই অবস্থা তো মুসলিম লীগের ছিল না। মুসলিম লীগের এইরকম কোনো লোকও ছিল না, মুসলিম লীগের এইরকম অবস্থাও ছিল না। আওয়ামী লীগ উৎখাত হয়ে যাওয়ার ফলে এখন কিছুটা উৎপাত দেখা যাচ্ছে, এবং কিছুদিন এই উৎপাত দেখা যাবে। এই উৎপাত কিছুদিন করার পর দেখা যাবে তারা আর দাঁড়াতে পারছে না। তারা হয়তো ক্ষুদ্র একটা দল হিসেবে থেকে যাবে, যেটা থাকা না থাকা সমান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না।

ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশ জনগণের পক্ষ থেকে কিছু রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

বদরুদ্দীন উমর: প্রথম কথা, আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ নিস্প্রয়োজন। যে কথা একটু আগে আমি বললাম। আওয়ামী লীগের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আওয়ামী লীগের আর উঠে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তার কোনো মেরুদণ্ড নেই। তার দাঁড়াবার মতো পা এবং জায়গা নেই। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে তাকে শুধু শুধু নিষিদ্ধ করার কী আছে? আমার মনে হয় যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় তারা একটা ভ্রান্ত ধারনার মধ্যে আছে। তারা মনে করে যে আওয়ামী লীগ আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে। আমি মনে করি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দরকার নাই, কারণ আওয়ামী লীগ এমনিতেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। তারা উৎপাত করতে পারবে, কিন্তু খাড়া হয়ে দাঁড়াবে, গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে এমন সম্ভাবনা আর নাই।

ভিউজ বাংলাদেশ: স্বৈরাচারী এরশাদের পর শেখ হাসিনারও পতন হলো। এভাবে আমাদের দেশে বারবার কেন স্বৈরাচারের জন্ম হচ্ছে? আমরা কি সত্যিই গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করতে পারব, না কি আবার কোনো স্বৈরশাসকের কবলে পড়ব?

বদরুদ্দীন উমর: স্বেরাচারী ব্যবস্থা কেন বারবার আসছে এটা বুঝতে হলে শ্রেণি প্রশ্ন বুঝতে হবে। যেটা এ দেশের রাজনীতি-বিশ্লেষক, ইতিহাসবিদরা একদমই করেন না। স্বৈরতন্ত্র মানে কী? এটা শ্রেণির একক শাসন। যেখানে অন্য কারো কোনো স্বাধীনতা নাই। এখন এটা দেখতে হবে কেন এভাবে বারবার আমাদের দেশে স্বৈরশাসেকের জন্ম হচ্ছে। স্বৈরশাসক যে শুধু এরশাদ, হাসিনা ছিল তাই তো না। শেখ মুজিবও একজন স্বৈরশাসক, ফ্যাসিস্ট ছিলেন। জিয়াউর রহমান একজন ফ্যাসিস্ট ছিলেন। জিয়াউর রহমান জনগণের ওপর অতটা নির্যাতন করা হয়নি, তার দরকারও হয়নি। শেখ মুজিব এমন নির্যাতন করেছিলেন যে তিনি যাওয়ার পরে কোনো বিরোধীতা ছিল না। জিয়াউর রহমানের তাই দরকারই ছিল না নির্যাতন করার। দরকার হলে তিনি করতেন। যেমন খুলনা জেলে গুলি করে তিনি ২০০ লোক মেরে ফেলেছিলেন। সামরিক বাহিনীরও অনেক লোক মেরে ফেলেছিলেন। দরকার হলে তিনি অন্য লোকদেরও মারতেন। কিন্তু দরকার হয়নি। তার এটুকু বুদ্ধি ছিল যেটা অধরকারি সেটা করার দরকার নাই। যেটা শেখ মুজিবের ছিল না বলে মনে করি। যেসব মানুষ তাকে ১০ জানুয়ারি এমন গণ-সংবর্ধনা দিল তাদেরকে তিনি মারতে শুরু করলেন। তার এত জনপ্রিয়তা ছিল, সে অবস্থায় দুচারজন লোক তার সমালোচনা করত কী আসে-যায় তাতে! ’৭৩ সালের নির্বাচনে তিনি কাউকেই জিততে দিলেন না। দুচারজন রাজনীতিবিদদের জিততে দিলে কী হতো? তিনি দিলেন না। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বললেন, বাংলাদেশে আর কোনো রাজনৈতিক দল নাই। বাহাদুরি দেখালেন। আরে, কী ধরনের কথা!

যাই হোক, এটা সম্ভব হচ্ছে এই জন্য যে, দেখতে হবে কোন শ্রেণী ক্ষমতায় আছে। বিস্তারিত বিবরণ এখানে দেয়া যাবে না। কিন্তু এটুক বলা যায়, আওয়ামী লীগ কোনো উৎপাদন শ্রেণির দল ছিল না, জমির মালিক ছিল না, শিল্পের মালিক, ব্যবসার মালিক ছিল না, ছিল মধ্যস্বত্বভোগী। উকিল-মোক্তার-শিক্ষক-বেকার যুবক- দোকানদার- এসব দিয়েই তো আওয়ামী লীগ হয়েছিল। তারা যখন ক্ষমতা পেল তখন ধন-সম্পত্তি অর্জন করবে কীভাবে? উৎপাদনের মাধ্যমে তো সম্ভব না। কাজেই বিদ্যমান যে সম্পদ সেটাকেই তারা লুট করতে শুরু করল। পরে বিহারিদের ঘরবাড়ি, অন্য যারা অবাঙালি তাদের ধন-সম্পত্তি তারা লুট করতে আরম্ভ করল। তারপর জাতীয় সম্পদ সব জাতীয়করণ করে চারদিকে লুটপাট করতে শুরু করল। লুটপাট করে তাদের হাতে যে টাকা চলে এল সেটা কী করবে তারা? ২৫ লাখ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে দিচ্ছিল শিল্পপতিদের সাথে। তারপর তারা চোরাচালান, চোরাকারবার করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেল। বাংলাদেশে যে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণী তৈরি হলো, বলা যায় যে এর কারণেই পরবর্তীতে এসব ঘটনা ঘটেছে। মধ্যস্বত্ব্যভোগী ইউরোপে তৈরি হয়েছিল শিল্প যারা করত, উদ্যোক্তরা শ্রেণীদের নিয়ে। ভারতেও মধ্যস্বত্বভোগী হয়েছিল যারা জমিদার শ্রেণী থেকে এসেছিল, চাকরি-বাকরি করত সরকারের তাদের নিয়ে। পাকিস্তান আমলেও তাই, যারা চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করত তাদের নিয়েই মধ্যস্বত্বভোগ্য হয়েছিল। আর বাংলাদেশে মধ্যশ্রেণী তৈরি হলো লুটপাটের মধ্য দিয়ে। এই মধ্যশ্রেণী হচ্ছে লুণ্ঠনজীবী। এবং এই লুণ্ঠনজীবী থেকে তাদের হাতে যে সম্পদ জড়ো হলো, সেই সম্পদ নিয়ে যেহেতু তারা শিল্প-কলকারখানা করতে পারে না, ব্যবসা করতে পারে না সেহেতু তারা চোরাচালানীর মধ্যে চলে গেল।

এই চোরাচালানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটা ব্যবসায়িক শ্রেণী তৈরি হলো, একটা মধ্যশ্রেণী। এই মধ্যশ্রেণীই বিকশিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। ব্যবসায়ী শ্রেণী। সেই জন্যই দেখা যাবে হাসিনার সংসদে শতকরা আশিজন হচ্ছেন ব্যবসায়ী। বাকি যারা আছেন তারাও ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত। কোনো দেশে এটা হয়? যেটা সাধারণত হয়, রাজনীতিক ব্যক্তিরা বড় বড় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপার নাই। ব্যবসায়িরা নিজেরাই ক্ষমতায়। যারা ক্ষমতায় আছে তারা কেউ রাজনীতির লোক না, তারা সব ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের মধ্যে এখানে কার্যত কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। রাজনীতির লোক মানেই এখানে ব্যবসাধার। আর ব্যবসাধার মানেই সে মনে করে সে রাজনীতি করতে পারে। এই অবস্থা যেখানে এসেছে, স্বৈরশাসনের বীজ সেখানেই রয়েছে। এখানে জনগণের যে ব্যাপক সম্পদ লুট হচ্ছে, কার্ল মার্কস তার ক্যাপিটেল গ্রন্থে অনেক আগে লিখে গেছেন, ‘যখন একটা দেশে এ ধরনের ব্যবাসায়িক শ্রেণী ক্ষমতায় আসে, তখন তাদের হাতে চারদিকে হত্যা-ধর্ষণ-লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগ-দুর্নীতি ইত্যাদি ঘটনা ঘটে।’ বাংলাদেশে দেখা যাবে, ১৯৭২ সালে যে ব্যবসায়িক শ্রেণী তৈরি হলো তাদের হাতেই বাংলাদেশ শাসন হচ্ছে। এই ব্যবাসায়িক শ্রেণী ক্ষমতায় আসার পরেই চারদিকে এমন একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এই স্বৈরশাসনের শুরু হয়েছে শেখ মুজিবের আমল থেকেই। এরশাদ বা হাসিনার আমল থেকে না। বাংলাদেশে শুরু থেকেই স্বৈরশাসন ছিল।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ