Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এ স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতন থেকে বেরিয়ে যাওয়া। শুধু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নয়, এই বাংলার মানুষের ওপর দুইশ বছর ধরে নির্যাতন চালিয়েছে ব্রিটিশ শাসন। মুঘল-পাঠানরাও কোনোদিন এই বাংলার মানুষের প্রাপ্য হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি। তার মানে হাজার বছর এই বাংলার মানুষ কেবল শোষণেরই শিকার হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল হাজার বছরের পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই। মুক্তিযুদ্ধ ছিল তাই আপামর মানুষের আজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সেই স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কেন?

সম্প্রতি যৌথভাবে বৈশ্বিক স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি সূচক প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন আটলান্টিক কাউন্সিল। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের বার্ষিক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে। স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম এবং সমৃদ্ধি সূচকে ৯৯তম। গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) প্রকাশিত আটলান্টিক কাউন্সিলের বৈশ্বিক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০০ সালে স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৬। আর সমৃদ্ধি সূচকে ১০৭।

প্রতিবেদনে দুটি পৃথক সূচক রয়েছে- স্বাধীনতা সূচক ও সমৃদ্ধি সূচক। বিশ্বের ১৬৪টি দেশের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির ধরন অনুযায়ী ক্রম বা অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আইন, অর্থনীতি ও রাজনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীনতা সূচক এবং আয়, স্বাস্থ্য, অসমতা, পরিবেশ, সংখ্যালঘু অধিকারের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সমৃদ্ধি সূচকে। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকসহ ১১টি সংস্থার তথ্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষণার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান (৬১), নেপাল (৮৬), শ্রীলঙ্কা (৯৭), ভারত (১০৪) ও পাকিস্তান (১১৩)। এর মধ্যে ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারত ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীন’ এবং পাকিস্তান ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীন নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সার্কভুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তান রয়েছে তালিকার সর্বশেষ ১৬৪তম অবস্থানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অধিকার আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও গণতন্ত্র ও সুশাসনের স্বাধীনতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, পিছিয়ে থাকার রাজনৈতিক প্রবণতা আগামী দিনের বাংলাদেশের বর্ধনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের আরেকটি রাজনৈতিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন।

স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ কেন পিছিয়েছে, তা বুঝতে হলে গবেষণার প্রয়োজন নেই। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে যে কোনো বোধবুদ্ধি-সম্পন্ন মানুষ তা খোলা চোখেই বুঝতে পারবেন। স্বাধীনতা সূচকে কীভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া যায়, তা বুঝতে হলে অবশ্যই গবেষণা প্রয়োজন। দেশপ্রেম ছাড়া এ থেকে উত্তরণের পথ নেই। আর দেশপ্রেম জাগ্রত করার জন্য দরকার এ দেশের সঠিক ইতিহাস পাঠ। এ দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ইতিহাস জানলে মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত না হয়ে পারে না।

বাংলাদেশ আজ বহু মতে-পথে বিভক্ত। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিকবোধ চর্চা ছাড়া আধুনিক মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা অসম্ভব। আর এদেশের গণতান্ত্রিকবোধ যদি ব্যহত হয়, তা সবারই ক্ষতি। আমরা কি নিজের পায়ে কুড়াল মারব না কি নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলব সেই সিদ্ধান্ত আমাদের এখনই নিতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ