আমাদের পণ্য রপ্তানি গন্তব্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে
বাংলাদেশের রাপ্তানি বাণিজ্যের আর একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আমরা সীমিতসংখ্যক দেশকে কেন্দ্র করেই বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছি। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর অতিমাত্রায় নিভরশীল হয়ে পড়েছে। অথচ আরও অনেক দেশ ও অঞ্চল আছে যেখানে চেষ্টা করলেই আমাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করা যায়। পূর্ব ইউরোপীয়দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি চমৎকার সুযোগ রয়েছে। রাশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ জন্য আমাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো পণ্য রপ্তানির বাজার অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আশার কথা জাপানসহ নয়া ডেস্টিনেশনে রপ্তানির পরিমাণ হ্রাস বেশ বাড়ছে।
আমরা বর্তমানে যে পণ্য রপ্তানি করছি, তা লোয়ার এন্ডের পণ্য। এসব পণ্য তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তি খুব একটা ব্যবহৃত হচ্ছে না; কিন্তু আগামীতে আমাদের উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর পণ্য তৈরি ও রাপ্তানি করতে হবে। বাংলাদেশ যেহেতু জনসংখ্যাধিক্য একটি দেশ তাই আগামীতে আমাদের শিল্প-কারখানায় আধুনিক মেশিন ব্যবহারের পাশাপাশি জনশক্তির উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এমনভাবে পণ্য উৎপাদন করতে হবে যা গুনগত মানসম্পন্ন হবে। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম মূল্যের। আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে হলে কারও দয়ায় টিকে থাকা যাবে না। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকা কঠিন হবে। বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।
একটি ভালো সংবাদ হচ্ছে আমাদের দেশের ২০৭টি কারখানা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রিন কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে। উদ্যোক্তারা এখন নিজস্ব আগ্রহেই পরিবেশবান্ধব কারখানা প্রতিষ্ঠা করছেন। রানা প্লাজার সেই নেতিবাচক ব্র্যান্ডিং সংকট থেকে আমরা অনেকটাই বেরিয়ে আসতে সমর্থ্য হয়েছি। অনেক কারখানা মালিক তাদের প্রতিষ্ঠানে সোলার এনার্জি প্লান্ট স্থাপন করে নিজেদের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করছেন। একই সঙ্গে আশেপাশের কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে অর্থ উপার্জন করছেন। এগুলো সবই ভালো লক্ষণ। আন্তর্জাতিকভাবে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বাংলাদেশের কারখানাগুলো অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। এখন অনেক বেশি শ্রমবান্ধব। পণ্য বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে আমাদের আরও বেশি বেশি করে পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প এখানো তুলার সুতানির্ভর। বাংলাদেশে সামান্য পরিমাণ তুলা উৎপাদিত হলেও তা বস্ত্র খাতের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই প্রচুর তুলা আমদানি করতে হয়। এ খাতে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। আমাদের তুলার বিকল্প তন্তু ব্যবহারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এ মুহূর্তে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে পাট থেকে সুতা, কলাগাছ থেকে সুতা উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই, যারা তুলার বিকল্প উদ্ভাবনে চেষ্টা করছেন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। আমরা যদি এভাবে চিরাচরিত পণ্যের বিকল্প পণ্য তৈরি করতে পারি তাহলে বাংলাদেশ শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবকাঠামো খাতে যেভাবে উন্নতি হয়েছে তার সুবিধা ব্যবহার করে শিল্পায়নের গতি আরও ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। আমাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে জ্বালানির দুষ্প্রাপ্যতা। বর্তমানে শিল্প খাত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের মতো আবশ্যিক উৎপাদন উপকরণগুলো ভর্তুকি মূল্যে পেয়ে থাকে; কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন সরকারের পক্ষে আর এসব খাতে এতো ভর্তুকি প্রদান করা সম্ভব হবে না। সেই অবস্থায় জ্বালানির মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এ জন্য আমাদের এ মুহূর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। গাজীপুরের একটি কোম্পানি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তারা উৎপাদিত সোলার এনার্জি দিয়ে নিজেদের বিদ্যুৎ চাহিদার শতভাগ পূরণ করার পরও আশে পাশের কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। প্লাটিনাম গ্রেডের কারখানাগুলোতে পানির পুনঃউৎপাদন হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করা হচ্ছে। আবর্জনা ‘রিসাইকেল’ করা হচ্ছে। প্রতিটি কারখানাই যদি এভাবে উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করে তাহলে বিদ্যুতের জন্য সরকারের ওপর এতটা নির্ভরশীল হতে হবে না। বরং উল্টো তারা চাইলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। বিষয়টি এই রকম- কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যখন তাদের উদ্যোগে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবেন তখন হয়তো তাদের ইউনিট প্রতি ১২ টাকা মূল্য প্রদান করা হলো। আবার সেই প্রতিষ্ঠান যখন জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করবেন তখন তাকে ১০ টাকা মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এভাবে সুবিধা দেয়া হলে অনেকেই নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উৎসাহী হবেন। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সনাতনি চিন্তা-চেতনা থেকে বেরিয়ে এসে নতুনভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শুধু পণ্য বৈচিত্র্য আনায়ন করলেই হবে না উৎপাদন এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমাদের বৈচিত্র্য আনতে হবে।
আগেই বলেছি, আমাদের পণ্য রপ্তানি গন্তব্যেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং কিছুটা হলেও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে থেমে থাকলে চলবে না। সরকারের আন্তরিক চেষ্টায় সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া, জাপান, চীন, ভারত, এমনিক আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রচেষ্টা আমাদেরও অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু ভারত যদি তাদের আমদানির এক শতাংশ আমাদের রপ্তানির বাজার থেকে ক্রয় করে তাহলে আমাদের সার্বিক রপ্তানি আয় তিন-চার গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। চীনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ভারত বা চীনের মতো দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে স্মার্ট অর্থনৈতিক কূটনীতির কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সময়টি প্রতিযোগিতার। যারা প্রতিযোগিতায় ভালো করবে, তারাই টিকে থাকবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটান ও নেপালে পাটনির্ভর পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব প্রতিবেশী দেশে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। বিষয়টি সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে।
সৈয়দপুরে বিভিন্ন আরএমজি কারখানার উদ্বৃত্ত কাপড় বা ‘ঝুট’ ব্যবহার করে একটি শিল্প অঞ্চল গড়ে উঠেছে। এ উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে রপ্তানি করতে পারতেন না। কোনো নগদ প্রণোদনা পেতেন না। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে নিজে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে ডিও লেটার লিখে এই শিল্পটিকে তাদের প্রণোদনা প্রদান তালিকায় যুক্ত করার ব্যবস্থা করেছি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকেও নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের সহায়তা প্রদান করতে হবে। আমাদের রপ্তানি কিন্তু আমদানিও বটে। আমরা যেসব পণ্য রাপ্তানি করি তার ৮০ শতাংশই আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্ভর। আমদানি যদি ব্যয়বহুল হয়ে যায় তাহলে রপ্তানি আয় কমে যাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে চাইলেই রপ্তানিকারকের পক্ষে একটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না। ফলে বেশি মূল্যে কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য তৈরি করে আগের মূল্যে রপ্তানি করা হলে মুনাফার পরিমাণ কমে যাবে। কাজেই আমাদের রপ্তানি পণ্য তালিকায় স্থানীয় কাঁচামালনির্ভর পণ্যের উপস্থিতি বাড়াতে হবে।
একই সঙ্গে আমদানি যাতে সহজলভ্য হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য যাতে সহজে এবং তুলনামূলক কম মূল্যে আমদানি করা যায় তার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার বিষয়টি ভাবছেন। যেমন, ভোজ্য তেল, গম ইত্যাদি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। শিল্পে ব্যবহার্য পণ্যের ক্ষেত্রে সার্বিক সহায়তা দিতে হবে যাতে এসব পণ্য তুলনামূলক কম মূল্যে উদ্যোক্তারা আমদানি করতে পারেন। শিল্পে ব্যবহার্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যেসব শুল্ক বাধা আছে, তা দূরীকরণ করতে হবে।
আমি সর্বশেষ বলতে চাই, যিনি জুতো পরেন তিনি জানেন জুতার কোথায় পেঁরেক গেঁথে আছে। সুতরাং সমস্যা সমাধান করতে হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সেক্টরভিত্তিক ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মন খুলে আলোচনা করতে হবে তাদের সমস্যা নিয়ে। তারপর যৌক্তিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য জাতীয পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। আর তা করা গেলেই উদ্যোক্তাদের নিরাশা কেটে যাবে। তারাও আস্থা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উৎসাহী হবেন। এখানে ভরসাই মূলকথা। আর্থিক প্রণোদনার চেয়েও এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে এমন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, যারা তাদের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বিদেশি পণ্য রপ্তানি করে সুনাম অর্জন করছে। এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হচ্ছে এসব কোম্পানি স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য যে পণ্য উৎপাদন করছেন সেই পণ্যই তারা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বিদেশি ক্রেতাদের রুচি এবং চাহিদা কিন্তু আমাদের দেশের ক্রেতাদের মতো নয়।
কাজেই আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হলে তাদের রুচি এবং চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে হবে। যারা পণ্য রপ্তানি করবেন তাদের বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। এ জন্য গবেষণা করা যেতে পারে। নতুন উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যোগদানের সুযোগ-সুবিধা করে দিতে হবে। রপ্তানির জন্য সব ক্যাটাগরির পণ্য উৎপাদন করতে হবে। আর শিল্পে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতি দৃষ্টি দিলেই চলবে না। অন্যান্য যেসব সম্ভাবনাময় শিল্প আছে যারা পণ্য রপ্তানি করতে চায় তাদের সমানভাবে সহায়তা দিতে হবে। কীভাবে আরও বেশি করে পণ্য রপ্তানি করা যায়, কীভাবে নতুন নতুন গন্তব্যে পণ্য রপ্তানি করা যায়, কীভাবে অধিক মাত্রায় মূল্যসংযোজনকারী পণ্য রপ্তানি তালিকায় স্থান দেয়া যায়, এসব বিষয়ে বিস্তর গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। গবেষণা খাতে ব্যয় বরাদ্দ দিতে হবে। কীভাবে উৎপাদন সেক্টরে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। নীতি সংলাপ হতে পারে।
একইভাবে জনশক্তি রপ্তানি খাত নিয়েও আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। এই খাতটি নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। যারা বিদেশে যাচ্ছে কর্মসংস্থানের জন্য এদের বেশির ভাগই অদক্ষ এবং অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক। আমরা যদি শ্রমিকদের বিদেশে প্রেরণের আগে স্বল্পকালে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়াতে পারি তাহলে তারা বিদেশে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তাদের আয় অনেকটাই বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে তাদের ঘিরে যে অবৈধ ভিসা চক্র গড়ে উঠেছে তাও ভাঙতে হবে। বিমানবন্দরে তাদের যেভাবে হয়রানি করা হয়ে তারও পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে। দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত লোকবল রপ্তানির পাশাপাশি পেশাজীবীদের অধিক হারে বিদেশে প্রেরণ করা যেতে পারে।
আর মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল না হয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে হলে দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয়ভাবে যেসব শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে এদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন সেন্টারগুলোর সংযোগ ঘটিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা অত্যন্ত সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারি। তারা সামান্য সহায়তা পেলেই যে কোনো অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পারে। তাদের সেই সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে খুঁজে বের করে তা বিকাশের জন্য জাতীয়ভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। বিশ্বে যেসব প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে, তার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে। কোনো নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলেই উপযুক্ততা অনুযায়ী তা আমাদের দেশের শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। দেশে এসএমই খাত যাতে আরও বিকশিত হতে পারে সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
আমরা কেন ধোলাইখাল বা বগুড়ার হালকা প্রকৌশলীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত সংযোগ আজও স্থাপন করে উঠতে পারিনি সে প্রশ্নের উল্টরও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। এদেশের মানুষ উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। তারা কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। কাজেই আমাদের হতাশ হবার কিছু নেই। আগামীতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।
অনুলিখন: এম এ খালেক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে