Views Bangladesh Logo

২০ বছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় পেল বাংলাদেশ

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

ত বিশ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈধপথে সবচেয়ে বেশি আয় (রেমিট্যান্স) পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরো বছরে দেশে এসেছে প্রায় ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আগের বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি। বিদায়ী বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের জোরালো প্রবাহের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল শেষ দিন পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০০৩-০৪ থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। ১ হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ বা ১৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধ্বে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮০ কোটি ডলার।

এর আগে ২০২০-২১ সালে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল দেশ। অন্য অর্থবছরগুলোতে প্রথম ৬ মাসে এই আয় ১০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে থেকেছে।

এদিকে একক মাস হিসাবেও ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে। দেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। যা ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। ওই বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকে বলছে, আগে কখনোই এতো পরিমাণ রেমিট্যান্স এক মাসে আসেনি। বিদায়ী বছরের জুলাই এবং করোনাকালে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। সেই রেকর্ড ভেঙেছে ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।

তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে বিদায়ী বছরের জুনে ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। বাকি ১১ মাসও এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

এদিকে গত বছর ৯ লাখ ৯৭ হাজার আটজন কর্মী বিভিন্ন দেশে গেছেন, যা ২০২৩ সালের ১৩ লাখ পাঁচ হাজার ৪৫৩ জন থেকে ৩ লাখ আট হাজার ৪৪৫ জন বা ২৪ শতাংশ কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০২৪ সালে রেমিট্যান্স পাঠানো শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী বলেন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এলেও ২০২৩ সালে যেসব দেশে অভিবাসন বেশি হয়েছে সেসব দেশ থেকে বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স বাড়েনি। তবে প্রবাসী আয় পাঠানো দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অবস্থান গতানুগতিক ব্যাখ্যার বাইরে।

২০২৪ সালের রেমিট্যান্স প্রবাহে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় প্রতিভাত হচ্ছে জানিয়ে অভিবাসী পরিবারের জন্য ঋণ প্রকল্পে সুদের হার কমানোর অনুরোধ জানান তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী।

হুন্ডিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমানো এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে অক্টোবরে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো অভিবাসী পরিবারের সদস্যদের জন্য জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণসুবিধা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ঋণ শুধু তাদের পরিবারই পাবেন যারা ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠান।

সার্কুলার অনুসারে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এই ঋণ দেয়া হবে। ঋণগ্রহীতাদের রেমিট্যান্স থেকে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে এবং সুদের হার হবে বাজারভিত্তিক। এই ঋণ ব্যবহৃত হতে পারে বাড়ি নির্মাণসহ অন্য খরচের জন্য।

স্বল্পমেয়াদি অভিবাসী, যারা নিয়মিত আনুষ্ঠানিক পথে রেমিট্যান্স পাঠান তাদের জন্য এই ঋণের সুদের হার অন্তত ২ থেকে ৩ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে রামরু।

এদিকে পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ওয়েজ আর্নারস ডেভেলপমেন্ট বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এক কোটি টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এই ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে যে কোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন অনাবাসী বাংলাদেশিরা।

রামরু বলছে, এই ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে উৎসাহী বাংলাদেশ সরকার এবং দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসীদের জন্য সুফল বয়ে আনলেও স্বল্পমেয়াদি অভিবাসীদের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, তাদের প্রয়োজন, স্বল্প সঞ্চয়কে উৎসাহিত করে- এমন বিনিয়োগ মাধ্যম।

আবার, আধাদক্ষ এবং স্বল্পদক্ষ অভিবাসী কর্মীদের গন্তব্যের দেশগুলোতে সেবাদানে লেবার উইং প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বর্তমান ৩০টি লেবার এটাসি অফিসের মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন দেশগুলোতে (অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মরিশাস) আধাদক্ষ এবং স্বল্পদক্ষ কর্মীরা অভিবাসন করেন না।

রামরুর পর্যবেক্ষণ বলছে, লেবার এটাসি পদগুলো শুধু প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত। সেখানে ডেমো এবং বিএমইটির কর্মকর্তারা অংশ নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে আরও কৌশলী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি, যেন যে দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী কর্মী যান, তারা সহজেই সরকারি সেবা এবং সুবিধা নিতে পারেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ