চালু হচ্ছে ‘ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস’
এক স্থানে মামলা দায়ের, সেবা গ্রহণ ও আইনি প্রতিকারের জন্য চালু হচ্ছে ‘ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস।’ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এ-সংক্রান্ত প্রাথমিক একটি খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের মধ্যেই ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস দেশের ৬৪ জেলায় চালু করতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। আর আগামী জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত খসড়াটি চূড়ান্ত করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বিচারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষী, আইনজীবী ও বিচারকদের সুরক্ষার অভাব, শিশু আদালতে মামলা প্রেরণে অনিয়ম, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচার ব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস চালু হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার মাধ্যমে ‘ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস তার কার্যক্রম শুরু করবে। সেক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান না হলে স্থানীয় আদালতেই অভিযোগের নিষ্পত্তি হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে একই স্থানে মামলা, উভয় পক্ষের শুনানি ও নিষ্পত্তি করা হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাদী ও বিবাদীকে তদন্তসহ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যেতে হবে না; বরং তারাই এসে সহযোগিতা করবে। এখানে ভুক্তভোগীকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করলে ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিসের আওতায় তাকে নিরাপদে রেখে বিচারকাজ পরিচালনা করা হবে। বিচার করবেন একজন বিচারক। তিনি জুডিশিয়ারি থেকে আসতে পারেন আবার একজন মেডিয়েটরও (আইনজীবী) হতে পারেন।
তবে এই ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিসের যে কোনো সিদ্ধান্ত বা রায় চূড়ান্তভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাবে এবং তিনি তা অনুমোদন দেবেন। তবে এক্ষেত্রে কোনো পক্ষ যদি রায় না মানেন, তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আপিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রেও তাকে অন্য কোথাও যেতে হবে না। অন্যদিকে বিশেষ প্রয়োজনে রায়ের পরেও অভিযোগের পুনর্তদন্ত প্রয়োজন হলে সেটাও তদন্তকারী সংস্থা ভুক্তভোগীর কাছে এসে করবে। ভুক্তভোগীকে কোথাও যেতে হবে না।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ দেশে বিচারের জন্য একজন ভুক্তভোগীকে দ্বারে দ্বারে ঘোরা অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। মামলার বাদী কিংবা বিবাদীর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। আশা করছি, ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস চালু হলে এই ভোগান্তি অনেক ক্ষেত্রেই কমে আসবে।
মানবাধিকার নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘যে কোনো মামলার ক্ষেত্রে একজন বিচারপ্রার্থীকে প্রথমে থানায় কিংবা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যেতে হয়। এরপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে যেতে হচ্ছে। তদন্তের জন্য ঘুরতে হয় থানা কিংবা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে। এখন এমন অবস্থায় যদি ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস তার কার্যক্রম শুরু করে তাহলে বিচারপ্রার্থীকে আর বিভিন্ন আদালতে ঘুরতে হবে না। এক জায়গাতেই সব আইনি সহায়তা পাবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার (জেলা ও দায়রা জজ) হাসানুজ্জামান রিপন জানান, ‘ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি। ওয়ানস্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস দেশে ৬৪ জেলায় একযোগে শুরু হবে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে