আল জাজিরার বিশ্লেষণ
ভারতের ভিসা বন্ধের জটিলতায় ভুগছেন বাংলাদেশের রোগীরা ও ভারতের ব্যবসায়ীরা
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে গত বছরের ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তারপর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস ও ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো। তাও প্রায় চার মাস হয়ে গেল। নিরাপত্তার কথা বলে স্বাভাবিক ভিসা বন্ধ করে দিলেও এটিকে অজুহাত হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ সরকার পতনের পর ঢাকায় অবস্থিত অন্য বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এ ধরনের কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেন এমন আচরণ?
এতে ভারতের পর্যটন খাতেও যে বিপুল ধ্স নেমেছে তা জানা যায় ভারতেই সংবাদমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে। কলকাতার হোটেল ব্যবসায় মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছে। হাতেটানা রিকশা চালকরা বেকার বসে আছেন। সবচেয়ে করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কয়েকটি হাসপাতালে। কারণ এই হাসপাতালগুলো অনেকটাই নির্ভর করতো বাংলাদেশি রোগীদের ওপর। এতে বাংলাদেশের অনেক রোগীও ভুগছেন বটে, তবে ভারতের হাসপাতাল ও হোটেলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে মন্দাভাব।
বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘আল জাজিরা’। গত ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে আল জাজিরা উল্লেখ করেছ, ভারতীয় ভিসা বন্ধের কারণে উভয় দেশই সমান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু কেন এই ভিসা বন্ধ আর কবেই-বা বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসার দ্বার খুলবে তার কোনো সদুত্তর তারা পায়নি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ভারতীয় ‘চিকিৎসা পর্যটন’ ভারতের জন্য এখন শুধু চিকিৎসা সেবাই না, একটা বিরাট ব্যবসাও। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম খরচে উন্নত সেবা দিয়ে পার্শ্ববর্তী অনুন্নত দেশগুলো থেকে তারা প্রতি বছর প্রচুর রোগী টানে। দেশের বাইরে থেকে তাদের প্রতি বছর যত রোগী আসে তার প্রায় ৬০ ভাগ আসে বাংলাদেশ থেকে। যার সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। গত আগস্ট মাসের পর থেকে তা ৮০ ভাগ কমে গেছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা কলকাতার হাসপাতালগুলোর। যেখানে আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫০ জন নতুন রোগী কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি হতেন, সেখানে এখন ৩০ জন রোগীও যান না। গেলেও ভর্তি হতে চান না। ব্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, বেলুরু- ভারতের অন্যান্য যেসব শহরে বাংলাদেশের রোগীরা বেশি ভিড় করে সেখানকার অবস্থাও অনেকটা এমনই।
ভারতীয় ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের রোগীদেরও ভোগান্তি চরমে। আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩৭ বছর বয়স মোহাম্মদ নূরে আলমের জরুরি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়, অনেক খোঁজ-খবর নিয়ে তার স্ত্রী খাদিজা খাতুন স্বামীকে নিয়ে হায়দ্রাবাদের একটি হাসপাতালে যাবেন বলে ভেবেছিলেন, কিন্তু তিন মাস চেষ্টার পরও ভিসা জোগাড় করতে পারেননি।
খাদিজা ও নূরে আলমের মতো এমন ভোগান্তি বাংলাদেশের অনেক রোগী ও তার পরিবার-পরিজনের। তার সঙ্গে বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে ভিসা-প্রসেসিং সেন্টারগুলোরও। যেখানে আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ হাজার ভারতীয় অনলাইন ভিসার আবেদন করা হতো, সেখানে এখন পাঁচশও হয় না। একইরকম অবস্থা ভিসা সাপোর্ট এজেন্সিগুলোরও। জয়পুরহাটের ভিসা সাপোর্ট এজেন্সির মালিক রেদোয়ান হোসেনের সঙ্গে কথা বলে আল জাজিরা জানতে পারে, আগে প্রতি বছর অন্তত ৩০০ পর্যটককে তিনি ভারতের ভিসা করিয়ে দিতে পারতেন, আগস্ট মাসের পর থেকে একটিও পারেননি।
ভারতের ভিসা বন্ধের জটিলতা নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন আল জাজিরাকে মন্তব্য করেছেন, পরিস্থিতি শুধু জটিল না, অত্যন্ত জটিল…’
খুব জরুরি কিছু ভিসা ভারত দিচ্ছে এরকম শোনা গেলেও কারা সেগুলো কীভাবে পাচ্ছে জানা যাচ্ছে না। যতদিন বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় স্বাভাবিক ভিসা না খুলবে ততদিন উভয় দেশের জন্যই পরিস্থিতি জটিল হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছে আল জাজিরা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে