‘বাংলাদেশ-ওমান বাণিজ্য সম্পর্ক ২৪০ মিলিয়ন ডলারের, আরও বাড়বে’
বাংলাদেশ-ওমান দ্বিমুখী বাণিজ্যের পরিমাণ এখন প্রায় ২৪০ মিলিয়ন ডলার। ওমান প্রবাসী বাংলাদেশিরা গত বছর রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৯২৩ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। আগামী দিনে দুই দেশের এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়বে বলে আশাবাদী আইন, বিচার, সংসদ ও প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি জানান, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ওমানে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে বাংলাদেশে ওমানির রপ্তানি ছিল প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন ডলার। রাজধানীর একটি হোটেলে ওমান সালতানাতের ৫৪তম জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিলেন আসিফ নজরুল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘দুদেশই কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং ক্ষুদ্র (এসএমই) থেকে মাঝারি উদ্যোক্তাসহ উদীয়মান সেক্টরে যৌথ উদ্যোগের কৌশলগত সহযোগিতার সুযোগ চিহ্নিত করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জনশক্তি ও বাণিজ্যের মতো ঐতিহ্যবাহী খাতের বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ১৯৭৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা থেকেই বাংলাদেশ ও ওমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা উপভোগ করে আসছে।’
‘ভ্রাতৃত্ব, মূল্যবোধ এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় নিহিত আমাদের সম্পর্ক প্রতি বছর বিকশিত ও শক্তিশালী হতে থাকে। শ্রদ্ধার সম্পর্কের ভিত্তিতে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং মানবিক উদ্দেশ্যগুলো অনুসরণে জাতিসংঘ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনসহ (ন্যাম) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে পরস্পরকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করি আমরা’- যোগ করেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ওমান বিশেষত আঞ্চলিক সংকটে মানবিক সহায়তা বিষয়ে অভিন্ন মূল্যবোধ বহন করে। দুদেশই ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং গাজায় মানবিক সংকটের নিন্দা করেছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে এই অভিন্ন অবস্থান দুটি দেশকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে, জাতিসংঘ এবং ওআইসির মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ওমানের সালতানাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল গাফফার আল বালুশি বলেন, তার দেশের সুলতান গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, নিরীহ জনগণের ওপর চাপানো অবরোধ প্রত্যাহার এবং মানবিক সাহায্য বিতরণের নিরাপদ পথ তৈরির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
রাষ্ট্রদূত বালুশি বলেন, ‘ওমানের সুলতানি পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং স্বচ্ছ। এটি অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি এবং বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতা ও সংলাপচর্চায় পরিচালিত হয়। আমরা জাতিতে জাতিতে শান্তি ও সম্প্রীতির মূল্যবোধ প্রচার করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওমান ও বাংলাদেশ দৃঢ় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিন্ন বন্ধন উপভোগ করে। আমরা দুই জাতি প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাসের চেষ্টা করি, অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি ও সহনশীলতাকে অত্যন্ত মূল্য দেই এবং জনগণের মঙ্গল নিশ্চিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাতে চাই। এই চেতনা এবং প্রেক্ষাপটে উভয় পক্ষই আমাদের দেশের মধ্যে সমন্বয় খুঁজে বের করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে, যাতে আমরা উপভোগ করি সাধারণ বন্ধনগুলোকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে।
বালুশি জানান, ৭ লাখ ওমান প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিজ দেশে পাঠান। বাংলাদেশকে এলএনজি সরবরাহের দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ওমান।
ওমান বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখতে পছন্দ করে বলেও মন্তব্য করেন এই কূটনীতিবিদ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে