জনশক্তি রপ্তানি কমলেও বেড়েছে রেমিট্যান্স
আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে দেশের জনশক্তি রপ্তানি ২৪ শতাংশ কমলেও প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বেড়েছে ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ। বিদায়ী বছরে ৯ লাখ ৯৭ হাজার আটজন কর্মী বিভিন্ন দেশে গেছেন, যা ২০২৩ সালের ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন থেকে ৩ লাখ ৮ হাজার ৪৪৫ জন কম। অন্যদিকে প্রবাসী কর্মীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের ২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি খাতে চ্যালেঞ্জে পড়লেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি একটি সোনালি সুযোগ। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অবশ্যই নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণ এবং বিদেশে কর্মীদের সমর্থনে উচ্চ ওয়ার্ক পারমিট ফির মতো সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) জানায়, বাংলাদেশ ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশে কর্মী রপ্তানির রেকর্ডও অর্জন করেছিল, যা ২০২২ সালের ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জনের চেয়ে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮০ জন বা ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জুন থেকে বিদেশি চাকরিতে নিয়োগ কমেছে।
তা সত্ত্বেও সৌদি আরব বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশটিতে ৬ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৭ জন কর্মী গেছেন, যা দেশের শ্রমবাজারের ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বর্তমানে সৌদি আরবে বসবাস করছেন ৩০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি, যাদের বেশিরভাগই নির্মাণ এবং অভ্যন্তরীণ খাতে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) একজন শীর্ষনেতা জানান, জুনে আরোপিত স্থগিতাদেশেই মূলত দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিদায়ী বছরে দেশটিতে গেছেন ৯৩ হাজার ৬৩১ জন কর্মী, যা ২০২৩ সালের ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জনের চেয়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫২ জনই কম।
অথচ মালয়েশিয়া অক্টোবরে ২১ হাজার ৯ জন, সেপ্টেম্বরে ২১ হাজার ৫২০, আগস্টে ৪৬ হাজার ১০৫, জুলাইয়ে ৪০ হাজার ৩২৯, জুনে ৪১ হাজার ৪৩৮ এবং মে মাসে ৩৫ হাজার ১৯০ জনসহ ২০২৪ সালে মোট ২ লাখ ৫ হাজার ৫৯১ জন বিদেশি কর্মী নিয়োগ করেছে। ফলে আগের বছরের ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ থেকে দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশে।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ খাস্তগীর বলেছেন, নতুন বছরে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারটি ফের চালুতে কাজ করছে হাইকমিশন।
বিএমইটি বলছে, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত এবং মালয়েশিয়ার পাশাপাশি ওমানের জনশক্তি আমদানি স্থগিতেও জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। শীর্ষ দুটি দেশ ছাড়া কাতার ৭৩ হাজার ৯৫৯ জন (৭ দশমিক ৪১ শতাংশ), সিঙ্গাপুর ৫৬ হাজার ২১০ জন (৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ), সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪৭ হাজার ১৮৭ জন (৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ), কুয়েত ৩২ হাজার ৭৩০ জন (৩ দশমিক ২৮ শতাংশ), জর্ডান ১৫ হাজার ৩৩০ জন (১ দশমিক ৫৩ শতাংশ), যুক্তরাজ্য ৩ হাজার ৫৪৭ জন (শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ), ইতালি ১ হাজার ১৬২ জন (শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ), জাপান ১ হাজার ৭৯ জন (শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ) এবং ওমান ৩৫৮ জন (শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ) বাংলাদেশি কর্মীকে নিযুক্ত করেছে।
এদিকে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো ১০০ জনেরও বেশি প্রশিক্ষিত নার্স পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগে ২০২২ সালে দুই দেশ এই চুক্তি করেছিল। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক শওকত আলী বলেন, ‘আমরা সৌদিতে ১৫০ জন নার্স পাঠানোর অনুরোধ পেয়েছি। সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন বছরের শুরুর দিকে প্রথম ব্যাচটি পাঠানোর আশা করছি।’
‘আমরা মূলত আমদানিনির্ভর দেশ। আমদানি বিল মেটাতে আমাদের বিপুল পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন, যার বড় অংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। তাই সৌদি আরবে প্রশিক্ষিত নার্স রপ্তানি আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় সুযোগ’ বলে জানান তিনি।
শওকত আলী বলেন, ‘তবে দেশটিতে উচ্চ ওয়ার্ক পারমিট ফি (ইকামা ফি) এখন বার্ষিক ১১ হাজার সৌদি রিয়াল, যা অসুবিধা করছে। অনেক শ্রমিক তাদের পারমিট পুনর্নবীকরণ করতে পারেন না, যার ফলে প্রত্যাবাসন বেড়েই চলেছে।’
এসব ক্ষেত্রে ২০২৪ রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। বছরের বেশিরভাগ সময় মাসিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অক্টোবরে এসেছে রেকর্ড পরিমাণ ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। এর আগে কভিড-১৯ মহামারিকালে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। এ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বর্ধিত সরকারি ডলারের হার এবং অর্থ পাচার হ্রাস।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে